অনেক সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারের সন্ধান পেয়েছেন কোচ স্টিভ রোডস

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৮

নতুন কোচ স্টিভ রোডসের অধীনে প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট শেষে দেশে ফিরেছে জাতীয় ক্রিকেট দল। সবাই দেখেছেন, জেনেও গেছেন টেস্টে চরমভাবে পর্যুদস্ত হলেও ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছেন টাইগাররা।

মাঠের পারফরমেন্স কেমন হয়েছে? টাইগাররা কোন ফরম্যাটে কেমন খেলেছেন, তা সবাই দেখেছেন। তবে যেহেতু এটা ছিল কোচ স্টিভ রোডসের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট, তাই তিনি কি দেখলেন, এই ইংলিশ কোচের বোধ, অনুভব ও উপলব্ধি কি? তা জানতেই আজ দুপুরের পর নতুন কোচের সাথে দীর্ঘ বৈঠকে বসেছিলেন বিসিবি সভাপতি।

তবে ঠিক যেভাবে সময় নিয়ে দীর্ঘ ও অন্তরঙ্গ পরিবেশে কথা বলতে চেয়েছিলেন, ঠিক তা হয়নি। আগের রাতে বোর্ডের অন্যতম সিনিয়র পরিচালক ও বিপিএল গভর্নিং বডির সভাপতি আফজালুর রহমান সিনহার মৃত্যুতে একটি শোক বিহ্ববল পরিবেশ-পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় কোচের সাথে বোর্ড প্রধান ও কয়েকজন শীর্ষ পরিচালকের সাথে ওই বৈঠকটি এমন সাজানো-গোছানো হয়নি।

বোর্ড পরিচালক আফজালুর রহমান সিনহার বিয়োগে বিসিবি সভাপতিসহ বোর্ডে নেমে এসেছে শোকের ছায়া; কিন্তু যেহেতু পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক, তাই কথা হয়েছে বোর্ড প্রধান ও কোচের। তারপরও যতদুর জানা গেছে, কোচের সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মিশন নিয়ে কথা হয়েছে। তার আলোকে বিসিবি প্রধান সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়ও করেছেন।

অনেক কথার ভীড়ে নাজমুল হাসান পাপন তাই শুরুতে এমন কথাই জানিয়েছেন, ‘আজকে কোচের সাথে আমাদের একটা লম্বা সেশন হওয়ার কথা ছিল। যেহেতু এটা কোচের প্রথম সিরিজ। নতুন কোচ, দলের সঙ্গে ছিলেন, তার অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণসহ সবকিছু নিয়েই আলাপ আলোচনা করার পরিকল্পনা ছিল। এ সিরিজে তার কি ধারণা হলো দল সম্পর্কে, কোথায় উন্নতি দরকার, তিনি কি কি চান, সামনে আমাদের প্রচুর খেলা। তো কি চাচ্ছে, না চাচ্ছে, তার কি চিন্তা ভাবনা, সবকিছু মিলিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গতকাল সিনহা ভাইয়ের (আফজালুর রহমান) মত্যুর সংবাদ শোনার পর আমাদের সবকিছুই কেমন যেন হয়ে গেল। সেজন্য আজ মুডটা ওরকম ছিল না। তারপরও কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে আমাদের সকলের লম্বা সময় কথা হয়নি। আজ আমরা অনেক পরিচালক ছিলাম। তার পরিকল্পনা শুনেছি। আমাদের সম্পর্কে, সিস্টেম সম্পর্কে, জানতে চেয়েছে সে।’

কোচের পর্যবেক্ষণ কি? জানতে চাইলে নাজমুল হাসান পাপন অনেক কথাই বলেছেন। তার সারমর্ম হলো, টেস্ট পারফরমেন্স দেখে স্টিভ রোডস চরম হতাশ হয়ে পড়েছিলেন, তারপর ওয়ানডে সিরিজে কামব্যাক দেখে আবার ততটাই অনুপ্রাণিত ও খুশি।

পাঁচ সিনিয়রের পারফরমেন্স ছাড়াও তার কাছে কয়েকজন তরুণের পারফরমেন্সও নাকি ভাল লেগেছে। কোচের মনে হয়েছে, দলে আরও কয়েকজন সম্ভাবনাময় তরুণ আছে, যাদেরও সামর্থ্য আছে ভাল খেলার। দলে অবদান রাখার।

পাপন বলেন, ‘ওভারঅল সে বলেছে, টেস্ট ম্যাচ খারাপ হয়েছে। কেন খারাপ হয়ছে, তার মতো ব্যাখ্যা দিয়েছে যে, এই এই কারণে খারাপ হয়ছে। তবে ওয়ানডেতে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি, তাতে সে আশাবাদী। প্রথম দিকে আপনি চিন্তা করেন, নতুন কোচ যাওয়ার পরই যদি ওরকম একটা টেস্ট ম্যাচ হয়, ভয় পাওয়ারই কথা। এই ঘুরে দাঁড়ানোটা তার ভালো লেগেছে। বাংলাদেশে যে অনেকগুলো সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার আছে, এটা তাকে আশ্বস্ত করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, পাঁচ সিনিয়র যে আমাদের বেস্ট প্লেয়ার, এটা আমরা জানি। আজকের না; কিন্তু নতুন কিছু ক্রিকেটার তাকে আকৃষ্ট করেছে। সে যেমন বলেছে, মিরাজের বল ভালো লেগেছে। অপুর বল ভালো লেগেছে।’

মোস্তাফিজ-লিটন সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন নতুন কোচ। বিসিবি প্রধানের ভাষায়, ‘মোস্তাফিজ কামব্যাক করেছে সুন্দরভাবে। এমনকি রনি ভালো করেছে। লিটন দাস শেষ ম্যাচে যে ইনিংস খেলেছে সেটাও কোচের মনে দাগ কেটেছে। মোস্তাফিজছাড়া সবারই এখনও কেবল শুরুর পর্যায়; কিন্তু তাদের সম্ভাবনা দেখে সে আশ্বস্ত হয়েছে যে, বাংলাদেশে নতুন নতুন ক্রিকেটার আছে। সামনে এশিয়া কাপে সে যে দলটি করতে চায়, ৩০ সদস্যের, যাতে আরও নতুন ক্রিকেটার দেখতে পারে। আমরা বলেছি সমস্যা নাই।’

কোচ স্টিভ রোডসকে উদ্বৃত করে বিসিবি সভাপতি আরও বলেন, ‘সে আমাদের কাছে স্পেসিফিক্যালি রাহীর বলও পছন্দ করার কথা বলেছে। রাহী ভালো করেছে। কিন্তু তারা যেটা চায়, সেটা মনে রাখতে হবে। টেস্ট বলতেই চায় লম্বা ও দ্রুতগতির বোলার। আমাদের তো ওরকম নেই। রাহি ও রনির সঙ্গে তিনটা নাম বলেছি আমরা যে দিতে পারব; কিন্তু ওরা যে খুব জোরে বল করে, সেই অবস্থায় নেই। এটা বাস্তবতা।’

এর বাইরে কোচ স্টিভ রোডস লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে নিয়েও বোর্ড সভাপতি এবং শীর্ষ পরিচালকদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছেন বলে মনে হলো। তাতে করে তাদের মনে হয়েছে, দু’জনারই ধারাবাহিকতার যথেষ্ঠ অভাব আছে। তাই তারা ওই দুজনের পাশাপাশি আরও নতুন কাউকে যাচাই-বাছাই করার চিন্তায় আছেন।

সে কারণেই পাপনের কন্ঠে এমন কথা, ওপেনিংয়ে লিটন নিদাহাস ট্রফিতে একটা ম্যাচে অসম্ভব সুন্দর ব্যাট করেছিল। আমরা জিতেছিলাম ২০০ রান তাড়া করে। এবার শেষ ম্যাচেও লিটন দারুণ ব্যাট করেছে। তবে লিটন বলেন বা সৌম্য, ওরা ধারাবাহিক না। অবশ্যই এখানে সুযোগ আছে আরও কেউ আছে কিনা তা দেখার! তা নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে। সে কারণেই কোচ ও নির্বাচকরা মিলে ৩০ জনের একটা তালিকা করেছে। সামনে যে সিরিজ হবে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ওখানে নতুন ছেলে ঢোকানোর সুযোগ আছে। ঢুকবে কি না জানি না। তবে সুযোগ আছে। চেষ্টা করব।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।