কেন ভক্তের দিকে তেড়ে আসলেন সাকিব!

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪৯ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০১৮

ফ্লোরিডার লডারহিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে গৌরবের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আনন্দের মাঝেই বিষাদের ছায়া। এক ভক্তের দিকে মারমুখী হয়ে, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে তেড়ে আসেন সাকিব আল হাসান। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার ম্যাচের পর দলের ক্রিকেটাররা যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন সেখানে।

ভক্তের দিকে সাকিবের তেড়ে আসার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে, মূল ঘটনা সামনে না এনে ভিডিওটির সঙ্গে জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নানা রংচং। মূলতঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ভক্তের দিকে এভাবেই তেড়ে আসেন সাকিব- এই ক্যাপশনে। এবং এটাই সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয়েছে।

শুধু ফেসবুকই নয়, ইউটিউভ থেকে শুরু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোতেও শেয়ার করা হয়েছে ভিডিওটি। সব জায়গায় সাকিবকে বানিয়ে দেয়া হয়েছে পুরোপুলি ভিলেন। যেন, ওই ঘটনায় একাই সাকিব দায়ী। তাকে কেউ ক্ষেপিয়ে তোলার কাজটি করেননি কিংবা সাকিব অযাচিতভাবেই তেড়ে এসেছিলেন ওই ভক্তের দিকে।

যদিও ঘটনাটা নিয়ে ইতোমধ্যেই দ্বিধা এবং শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গুজব থেকে সত্যও বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। মূল ঘটনা আসলে কি? সেটাও জানার চেষ্টা করেছে অনেকে। ভিডিওতেই তো দেখা যাচ্ছে, সাকিব ক্ষিপ্ত হয়েছেন। রেগে গেছেন, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত তেড়ে এসেছেন। সুতরাং, এটুকু পুরোপুরি সত্য।

এরপর বাকি যেটা থাকে, সেটা হলো- কেন সাকিব এভাবে একজন ভক্তের ওপরে ক্ষেপে গেলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে সাকিবকে কোনো প্রশ্নই করা হয়নি তখন। বিষয়টার অবতারণাই হয়নি। বরং, টানা দু’দিন দুটি ম্যাচ খেলার কারণে বেশ ক্লান্ত-শ্রান্ত ছিলেন সাকিবসহ পুরো টিম বাংলাদেশ। হোটেলে ওই ভক্তও সাকিবকে বারবার বিরক্ত করছিলেন। সাকিব সাড়া না দেয়ায় ওই ভক্ত কটু কথা শুনিয়ে দেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ককে। ওই কটু কথা শোনার পরই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সাকিব।

পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন শেখ মিনহাজ হোসেন নামে বাংলাদেশের এক ভক্ত। ফ্লোরিডার লডারহিলে সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড রিজিওনাল পার্ক স্টেডিয়ামে তিনি বন্ধুদের নিয়ে গিয়েছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই- স্লোগানের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে। সাকিব আল হাসানরা যে হোটেলে ছিলেন, সেই হোটেলে উঠেছিলেন শেখ মিনহাজরাও। ঘটনাচক্রে ওই ঘটনার সময় শেখ মিনহাজ নিজেও ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী।

সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন শেখ মিনহাজ হোসেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সাকিবকে মোটেও নিরাপদ সড়ক সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। বরং, ওই তরুণই সাকিবকে বার বার বিরক্ত করছিলেন এবং বাজে ভাষা ব্যবহার করেছিলেন প্রথমে।’

শেখ মিনহাজের সেই স্ট্যাটাসটাই হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো। যেটা পড়লে সাকিব কেন ওই ভক্তের দিকে তেড়ে গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে পরিস্কার একটি ধারণা পাওয়া যাবে।

‘সাকিব এক দর্শকের সাথে খুব রাগ করছেন, এমন একটা ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। ওখানে ক্যাপশন হচ্ছে যে, একজন লোক সাকিবকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ব্যাপারে প্রশ্ন করায় সাকিব তেড়ে গেছেন!

প্রথমে বলে নেই, যত যাই হোক, সাকিবের ওভাবে তেড়ে আসা ঠিক হয়নি। আমি সাকিবের তেড়ে আসা সমর্থন করছি না। দেশের আইকন হিসেবে তার আরেকটু সচেতন থাকা উচিত। কিন্তু আসলে প্রশ্নটা মোটেও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ব্যাপারে ছিল না। ওই লোক সাকিবের কাছে বারেবার অটোগ্রাফ চাইছিল। সাকিব প্রথমে একটা সেলফি তুলেছে। এরপর আবার ভিডিও করতে চায়। সাকিব তখন ম্যাচ শেষে টায়ার্ড। সাকিব পারবে না বলে সামনে চলে যায়। লোকটা পিছন থেকে ‘ভাব মারায়’ বলে বাজ ভাষা ব্যবহার করে। সাকিব তখন চেতে ফেরত আসে!

ওখানে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন ছিল না।

আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আমি তখনই হোটেলে ঢুকেছি। আশেপাশের সব মানুষ একই কথা বলছিলো। সবাই আরও ওই ছেলেটার উপর ক্ষ্যাপা ছিল। ছেলেটা কেন বেশি বিরক্ত করছিলো, এবং সাকিবকে পিছন থেকে অশালীন মন্তব্য করলো? এখন ফেসবুকে দেখি মানুষ ক্যাপশন দিয়েছে যে, ওটা- নিরাপদ সড়ক চাই- এর ব্যাপারে ছিল। অথচ গতকাল ওইসময় এ ব্যাপারে কোন কথাও হয় নাই!’

সাকিব ক্লান্ত-শ্রান্ত, পরিশ্রান্ত ছিলেন। টানা দু’দিন খেলার পর এমনিতেই ক্লান্ত থাকার কথা, একজন দর্শক হয়তো এ সময় বাজে মন্তব্য করে ফেলেছে; তাই বলে সাকিব এভাবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করবে, তেড়ে আসবে কারও দিকে- সেটাও কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। সাকিবরা তো আর সাধারণ কেউ নন। তাদের অনেক ফ্যান-ফলোয়ার আছে। তারা দেশের আইকন। তাদের আচার-আচরণ এবং ব্যবহারে আরও অনেক বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। যারা মূল ঘটনা বুঝতে পারছে, তাদেরও বক্তব্যটা প্রায় এমনই।

দেখুন ভিডিওটি

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।