সিরিজ জয়েই সাকিবের ক্যারিয়ারের যুগপূর্তি
জিম্বাবুয়ে থেকে ফ্লোরিডা, হারারে থেকে লডারহিল। মাঝে ছিল পাক্কা ১২টি বছর, মাঠে গড়িয়েছে হাজারসংখ্যক ম্যাচ, খেলা হয়েছে অগণিত ডেলিভারি, পড়েছে লক্ষাধিক উইকেট। উল্লাসে মেতেছে কোটি ক্রিকেটপ্রেমী, হতাশায় মুষড়ে গিয়েছে আরো অনেক সমর্থক।
এই ১২টি বছর শেষে স্বমহিমায় টিকে রয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পরিণত করেছেন নিজেকে, উঠেছেন সাফল্যের চূড়ায়। ১২ বছর আগে হারারে স্পোর্টস ক্লাবের সাকিব ছিলেন টগবগে তরুণ, ১২ বছরের ব্যবধানে লডারহিলের রেজিওনাল পার্কের সাকিব এখন বিশ্বস্ততার, নির্ভরতার অন্য নাম।
এক যুগ আগে আজকের দিনে অর্থাৎ ৬ আগস্ট ২০০৬ সালে হারারে স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো পা রাখেন সাকিব। এরপর একে একে ১২টি বছর কাটিয়ে বাংলাদেশ সময় ৬ তারিখে (লডারহিলে তখনো ৫ই আগস্ট) ক্যারিয়ারের ৩১০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামেন সাকিব।
এই ১২ বছরে সাকিব নিজেকে নিয়ে গেছেন বিশ্বসেরাদের কাতারে, সাকিবের হাত ধরে বাংলাদেশ দলও পেয়েছে অগণিত সাফল্য। যার সবশেষ উদাহরণ লডারহিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ আগস্ট তারিখে শেষ হওয়া এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ। যেখানে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বেই বিশ্ব টি-টোয়েন্টির বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের মাটিতে নামিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ।
এটি সাকিবের অধিনায়কত্বের দ্বিতীয় অধ্যায়। নিজের ক্রিকেট বোধ ও ধারাবাহিক পারফরম্যানসের পুরস্কারস্বরূপ ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় বছরেই ২২ বছর বয়সে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন সাকিব। সে দফায় দায়িত্বে ছিলেন প্রায় তিন বছর। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পরে সেই জিম্বাবুয়ের মাটিতেই সিরিজ হারের দায় নিয়ে ২০১১ সালে শেষ হয় সাকিবের অধিনায়কত্বের প্রথম অধ্যায়।
২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিলে অধিনায়কশূন্য হয়ে পড়ে এই ফরম্যাট। পরে ভরাডুবিময় দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পরে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় মুশফিকুর রহীমকে। ছয় বছরের বিরতি দিয়ে পাকাপোক্তভাবে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব পাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় সাকিব আল হাসানের অধিনায়কত্বের দ্বিতীয় অধ্যায়।
দুই দফায় এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে ১১টি টেস্ট, ৫০টি ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। জয়ের পাল্লাটা ওয়ানডেতেই বেশি। টেস্ট ক্রিকেটে সাকিবের অধীনের বাংলাদেশের জয় ২০০৯ সালে সাকিবের অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচেই, ড্র নেই একটিও। হার বাকি দশটিতে।
টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক সাকিবের প্রথম জয় সদ্য সমাপ্ত সিরিজেই, তাও টানা দুই ম্যাচে। বাকি ১১ ম্যাচে মিলেছে হার। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে উজ্জ্বল সাকিবের পরিসংখ্যন। দ্বিতীয় দফায় সাকিব ওয়ানডের অধিনায়কত্ব পাননি। প্রথমবারেই তার অধীনে খেলা ৫০ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ২৩ ম্যাচে, পরাজয় ২৬ ম্যাচে। পরিত্যক্ত অন্য ম্যাচটি।
দলীয় পারফরম্যানস যেমনই হোক, ব্যক্তিগত পারফরম্যানসে এই ১২ বছরে নিজেকে বিশ্বসেরা বানিয়েছেন সাকিব। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বসেছিলেন ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ের শীর্ষে। এখনো আছেন টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের অলরাউন্ডারদের শীর্ষে। টি-টোয়েন্টিতে রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
পরিসংখ্যানে চোখ বুলালে এখনো পর্যন্ত ৫৩টি টেস্ট, ১৮৮টি ওয়ানডে ৬৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। তিন ফরম্যাটেই রান সংগ্রাহকের তালিকায় রয়েছেন তামিম ইকবালের পরেই। টেস্ট ক্রিকেটে ৫ সেঞ্চুরি ও ২৩ হাফসেঞ্চুরিতে তার রান ৩৬৯২। ১৮ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে তার ঝুলিতে রয়েছে ১৯৬টি উইকেট। ম্যাচসেরা হয়েছেন ৬টি ম্যাচে, সিরিজ সেরার পুরষ্কার জিতেছেন ৪ বার।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেরা ফরম্যাট ওয়ানডেতে সাকিবের রান ৫৪৩৩, সেঞ্চুরি সংখ্যা ৭টি, ফিফটি পেরুনো স্কোর ৩৯টি। ম্যাচে একবার ৫ উইকেট নেয়া সাকিবের মোট উইকেট ২৩৭টি। এই ফরম্যাটে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৮ ম্যাচে ম্যাচসেরা ও ৫ বার সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাকিব ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন তিন ম্যাচে, সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন ২ বার। ব্যাট হাতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭ ফিফটিতে তার রান ১৩৬৮। উইকেট সংখ্যায় দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮০টি উইকেট তার।
প্রথম দফায় সাকিব আল হাসান টেস্ট ও ওয়ানডের নেতৃত্বে খুব একটা সফল না হলেও দ্বিতীয় দফায় পেতে শুরু করেছেন সাফল্য। নিজের ক্যারিয়ারের এক যুগ পূর্তিতেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছেন টি-টোয়েন্টি সিরিজের শিরোপা। আত্মপ্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাপারেও। সাকিবের আশা মোতাবেক টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশ দল ভালো করতে শুরু করলেই খেলোয়াড়ের পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবেও সাকিব আল হাসান অর্জন করবেন অনন্য সাফল্য।
এসএএস/পিআর