সাব্বিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করবে বিসিবি

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ২৮ জুলাই ২০১৮

মাঠের বাইরে তার আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আগেই। শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে কয়েকটি। সবচেয়ে বড় কথা, এখনও মাথার উপর শাস্তির খড়গ ঝুলছে সাব্বির রহমান রুম্মনের। একজন অল্প বয়সী সমর্থক-ভক্তকে লাঞ্চিত করার শাস্তি ভোগ করছেন তিনি। নগদ ১৫ লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে আছেন নিষিদ্ধ।

সাব্বির ঢাকা লিগ খেলতে পারেননি এবার। জাতীয় লিগ ও বিসিএল খেলাও হয়নি। তার চেয়ে বড় কথা, তাকে ২০১৮ সালে চুক্তির বাইরে রেখেছে বিসিবি। মানে আর সব জাতীয় ক্রিকেটারের মতো এ বছর বোর্ডের কাছ মাসিক বেতন পাচ্ছেন না সাব্বির রহমান। সেই শাস্তি শেষ না হতেই আবার নতুন করে এক শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো ঘটনার অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার। এবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজনকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ ও শাসানোর অভিযোগ।

গত কদিন ধরেই বিষয়টি ফেসবুকে ঝড় তুলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৬ জুলাই গায়ানার প্রোভিডেন্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাংলাদেশ জয়ের একদম হাত মেলানো দূরত্বে গিয়ে হারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেকেই ব্যক্তিগত হতাশা, মনোঃকষ্ট, দুঃখ-যন্ত্রণা থেকে ফেসবুকে উল্টো পাল্টা অনেক কিছু লিখেছেন।

যেখানে বেশিরভাগই সাব্বির রহমান ও রুবেল হোসেনের বিপক্ষে বিষোদগার করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা বোধ হয় হয়েছে সাব্বিরকে নিয়েই। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ বলে ৮ রান দরকার থাকতে ফুলটস বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে এসে ভক্ত ও সমর্থকদের কাছে রীতিমতো খলনায়ক বনে গেছেন সাব্বির। সেই না পাবার বেদনা থেকে কেউ কেউ সাব্বিরকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে লিখেছেন। সমর্থকরা তো সবাই সুশিক্ষিত নন, এমনটা সব ক্রিকেটারের বেলায়ই হয়।

সমস্যাটা হলো, সাব্বির তা সহ্য করতে পারেননি। সাব্বিরের আইডিতে একজন কমেন্ট করেছেন, যাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এই ক্রিকেটার। শাহরিয়ার নীল নামের আইডিধারী একজন তো সাব্বিরকে তার পোস্ট ট্যাগও করে দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে ক্ষেপে যান জাতীয় দলের এই ব্যাটসম্যান। তাকে ব্লক করার আগে সাব্বির অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও থ্রেট করেছেন বলে অভিযোগ। যাদের মেসেজ করে সাব্বির এই অশ্লীল মন্তব্য করেন, তাদের একজন নাকি ফেসবুক লাইভে তা বলেছেনও।

ঘটনা নানা ডালপালা ও শাখা প্রশাখা ছড়ানোর পরও সেভাবে চাওর হয়নি। কারণ ভাবা হচ্ছিল, যে আইডি থেকে ফেসবুকে ভক্তদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করার পাশাপাশি হুমকি-ধামকি দেয়া হয়েছে; সেটা সত্যি সত্যিই সাব্বির রহমানের নিজের কি-না? নাকি কোন ভুয়া বা ফেইক আইডি। সব মিলে একটা গোলমেলে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে।

গতকাল রাত পর্যন্ত সাব্বিরের সে অশ্লীল মন্তব্যটি ওই শাহরিয়ার নীলের ওয়ালে থাকলেও শুক্রবার রাত থেকে তিনি তা মুছে ফেলেছেন। যে কারণে এখন আর তা দৃশ্যমান নয়। তা নিয়েও খানিক গুঞ্জন আছে। কেন, কি কারণে তা মুছে ফেলা হলো? তবে কি অভিযোগকারী নিজেই ব্যাকফুটে? সাব্বিরের আইডি থেকেই যে অমন আপত্তিককর মন্তব্য করা হয়েছে, তারই বা প্রমাণ কি? সেটা ফেইকও হতে পারে। আর বিষয়টি দৃশ্যমান না থাকলে তা প্রমাণ করাও কঠিন হবে।

এদিকে ভিতরের খবর, বিষয়টি এক মুখ থেকে আরেক মুখ হয়ে এরই বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের নোটিশেও পৌঁছেছে। যতদূর জানা গেছে, বিসিবি সিইও নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন, জালাল ইউনুস, খালেদ মাহমুদ সুজন, ইসমাইল হায়দার মল্লিকসহ অনেকেই এ ব্যাপারটি জেনেছেন।

বিসিবি পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার। আমাদের কানে এসেছে। এটা এখনো অভিযোগের পর্যায়ে আছে। তা নিয়ে আমাদের মাঝে এখন পর্যন্ত কথা বার্তা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে একেকজনের কানে গেছে এই যা। এটা সুষ্ঠু ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত না করে এখনই আগাম মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

তবে ঘটনা যদি সত্য হয়, তবে ছাড়ও দেয়া হবে না- জানিয়ে দিয়েছেন বিসিবির এই কর্তা, ‘যদি সাব্বির সত্যি সত্যিই কাউকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভাষায় কোন কিছু লিখে থাকে, তাহলে অবশ্যই বোর্ড যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এটা অবশ্যই শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল। একটা জাতীয় দলের ক্রিকেটার প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো রকম অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না। এর সাথে ক্রিকেট বোর্ডেরও মান-সম্মান জড়িত। যা নেহায়েত অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত। কাজেই বোর্ড অবশ্যই যথাসময়ে বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখবে। সত্যতা মিললে অবশ্যই যথোপযুক্ত ব্যবস্থাও নেবে।’

এদিকে বিসিবিও প্রধান নির্বাহীও নিজামউদ্দিন চৌধুরীও প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। তিনিও বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে।

এআরবি/এমএমআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।