গর্ডনের সান্নিধ্যে এক বেলা মাশরাফি-মুশফিকরা

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ১৬ মে ২০১৮

জাতীয় দলের প্র্যাকটিস সেশনের সময় ছিল সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে পাঁচটা। তবে অন্য দিনের সাথে বুধবার বিকেলের ট্রেনিং সেশনের খানিকটা পার্থক্য ছিল। ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের চেয়ে ক্রিকেটাররা মনোযোগি হলেন তাদের বড় ভাইদের কোচ গর্ডন গ্রিনিজের সাথে কথন দেখা হবে, এ আশায়? কখন কথা হবে কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারের সঙ্গে?

এদিন প্র্যাকটিসের চেয়ে মাশরাফি, মুশফিক, তামিম ও মাহমুদউল্লাহরা উন্মুখ অপেক্ষায় ছিলেন তাদের পূর্বসুরি আকরাম-নান্নু-বুলবুলদের গুরু গর্ডন গ্রিনিজের অপেক্ষায়। ক্রিকেটাররা আগেই জানতেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক কোচ গর্ডন গ্রিনিজ আসবেন, তাদের সঙ্গে দেখা করতে।

যেমন কথা তেমন কাজ। গর্ডন ঠিকই এলেন। ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ভবনে বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স এসাসিয়েশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষ করে সোজা শেরে বাংলায় ছুটে এলেন গর্ডন গ্রিনিজ। ঘড়ির কাঁটা প্রায় বিকেল সাড়ে চারটায় শেরে বাংলা স্টেডিয়াম লাগোয়া বিসিবি একাডেমি মাঠে গিয়ে উপস্থিত ক্যারিবীয় এই কিংবদন্তি।

বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন আগে থেকেই সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। পূর্বসুরিদের গুরু গর্ডনকে ফুলেল শুভেচ্ছা আর মনের ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় বরণ করে নিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। সবার আগে গর্ডনকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিলেন সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

Mash

ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা গর্ডনকে উপহার দিলেন তার নামাঙ্কিত লাল সবুজ জার্সি। আর সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম টিম বাংলাদেশের ক্যাপ উপহার দিলেন সাবেক এই কোচকে। বোর্ডের সিনিয়র পরিচালক এনায়েত হোসেন সিরাজ এবং প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত ও টিমস বাংলাদেশের জার্সি এবং ক্যাপ উপহার পাওয়া গর্ডন এরপর ক্রিকেটারদের সাথে খানিক্ষণ একান্তে কথা বললেন। সেখানে ছোট্ট ফটো সেশনও হলো। ক্রিকেটাররাও গোল হয়ে দাড়ালেন তাকে ঘিরে। এরপর বিসিবি একাডেমি মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে কিছু উপদেশ বাণী শোনালেন মাশরাফি-মুশফিকদের।

অল্প কয়েক মিনিটের বক্তব্য। যার প্রায় পুরোটা জুড়েই উপদেশ আর পরামর্শ। কয়েক মিনিটের ওই কথোপকোথনের মূল অংশই ছিল বাড়তি পরিশ্রমের জোর তাগিদ। ক্রিকটোরদের পরিষ্কার বলে দেন, ‘পরিশ্রমই সাফল্যর প্রসূতি।’

কঠোর পরিশ্রম করা ছাড়া ভাল করার কোন বিকল্প পথ নেই- এমনটা জানিয়ে গর্ডন বলে ওঠেন, ‘পরিশ্রমের কোনই বিকল্প নেই। পরিশ্রম করতে থাক। ভাল ফল ও সাফল্যের পূর্ব শর্তই হলো কঠোর পরিশ্রম। যত বেশি পরিশ্রম করবে তত ভাল রেজাল্ট পাবে।’

এ ছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে সব কন্ডিশনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার পরামর্শও দেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ। ক্রিকেটারদের তিনি বলেন, ‘খেলার আগে নিজেকে তৈরি করার প্রাণপন চেষ্টা করবে। নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করবে, যাতে যেখানেই খেলো না কেন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে যেন সমস্যা না হয়।’

Mash

যে কোন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে হলে নিজেকে পরিবেশ ও পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা খুব জরুরী। এর বাইরে ব্যাটসম্যানদের উদ্দেশ্যে শুধু একটি বড় উপদেশ বানী শোনান গর্ডন, ‘সব সময় নিজের উইকেটের মূল্যটা বোঝার চেষ্টা করবে। যদি নিজের উইকেটের মূল্য ঠিক মত বুঝতে পারো, তাহলে দেখবা দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ আপনা-আপনি বেড়ে যাবে।’

কথোপকোথনের এক পর্যায়ে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির কাছ থেকে জেনে নেন বাংলাদেশ দলের পরবর্তী সফরসূচি কি ও কোথায়? এখন যারা বাংলাদেশ দলের ক্যাম্পে আছেন তার ৯০ ভাগ ক্রিকেটারের জন্মই হয়েছে গর্ডন গ্রিনিজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর। গর্ডনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়েছে ১৯৯১ সালে। এ মুহূর্তে প্রাথমিক ক্যাম্পের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯৮২ সালে। আর মাশরাফির জন্ম ১৯৮৩ সালে। মাহমুদউল্লাহর জন্ম ১৯৮৬-তে। মুশফিকুর রহীম পৃথিবীতে এসেছেন ১৯৮৭ সালে। তামিম ইকবাল জন্মেছেন ১৯৮৯ সালে। রাজ্জাক আর মাশরাফি খুব ছোটবেরায় হয়তো দেখে থাকতে পারেন গর্ডনের খেলা।

এছাড়া বেশিরভাগ ক্রিকেটারের জন্মই হয়েছে গ্রিনিজের খেলোয়াড়ি জীবন শেষে। এমনকি অনেক ক্রিকেটার গর্ডনকে বাংলাদেশের কোচ হিসেবেও দেখেননি। যেমন গর্ডন যখন বাংলাদেশের প্রশিক্ষক ছিলেন, তখন মেহেদি হাসান মিরাজের বয়স ছিল মোটে তিন বছর। ক্রিকেটার ও কোচ গর্ডনকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ ও অবকাশ ছিল না তখন তার। ইউটিউবে দেখাই সার।

তারপরও ওয়েষ্ট ইন্ডিজের স্বর্ণ সময়ের এক নম্বর ওপেনার ও বাংলাদেশের আইসিসি ট্রফি বিজয় এবং বিশ্বকাপ অভিষেকে স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারানো দলের অন্যতম নেপথ্য কারিগর বলে কথা। গর্ডন গ্রিনিজের কথা শুনে ও তাকে কাছে পেয়ে ক্রিকেটাররা উদ্বেলিত, অনুপ্রানিত। কম-বেশি সবার একটাই কথা- ক্রিকেটের এমন জীবন্ত কিংবদন্তির সাথে সময় কাটানো ও তার কথা শোনাও একটা অন্যরকম প্রাপ্তি। অনুভুতি চমৎকার।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।