আবাহনী-রূপগঞ্জের অঘোষিত লিগ ফাইনাল বৃহস্পতিবার
জাতীয় দলের কোন কার্যক্রম নেই এখন। টাইগারদের নিকট ভবিষ্যতে কোনো সফর, সিরিজ বা টুর্নামেন্টও নেই। তাই মিডিয়ার জাতীয় দলের প্র্যাকটিস কভারের তাড়াও নেই। কিন্তু তারপরও আজ সকাল শেরে বাংলায় সংবাদকর্মীদের সরব উপস্থিতি।
ঘড়ির কাঁটা সকাল দশটা ছোঁয়ার আগে টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়ি আর প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক্সের সাংবাদিকের বহরে ভরে গেল শেরে বাংলা স্টেডিয়াম লাগোয়া একাডেমি মাঠ। যেখানে পাশাপাশি প্র্যাকটিসে আবাহনী ও লিজেন্ডস অফ রূপগঞ্জ। মাঠের উত্তর পশ্চিম অংশে আকাশি হলুদ শিবির। আর পূর্ব উত্তর কোণে রূপগঞ্জ।
সেই ৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার লিগের আর মাত্র এক পর্ব খেলা বাকি। কাল বৃহস্পতিবার শেষ এবারের লিগ। দীর্ঘ লিগ পরিক্রমা শেষে হালকা অনুশীলন করার কথা। কিন্তু তা না , আবাহনী আর রূপগঞ্জ সিরিয়াস প্র্যাকটিস করলো। সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়া অনুশীলন শেষ হলো বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ।
কাগজে কলমে কোচ তালহা জুবায়ের হলেও প্রধান উপদেষ্টা খালেদ মাহমুদ সুজনের তত্ত্বাবধানে নিবিড় অনুশীলন চললো আবাহনীর। আর সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু পরিচালনা করলেন রূপগঞ্জের প্র্যাকটিস।
এ দু'দলের সিরিয়াস প্র্যাকটিস করার কারণ একটাই- আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে তারা। যে ম্যাচকে ভাবা হচ্ছে লিগ নির্ধারণের লড়াই। অনেকেই আবাহনী আর রূপগঞ্জ ম্যাচকে বলছেন ‘অঘোষিত ফাইনাল।’ এটা বলা খুব অমূলক হবে না। কারণ, কাল আবাহনী জিতলেই চ্যাম্পিয়ন।
লিগ ও সুপার লিগের আগের চার খেলা মিলে মোট ১৫ ম্যাচে সর্বাধিক ১১ টিতে জয় আর চারটিতে হারা আবাহনী ২২ পয়েন্ট নিয়ে এখন পর্যন্ত সবার ওপরে। শেষ পর্বে পয়েন্ট প্রাপ্তিতে আবাহনীকে টপকে যাবার কোনই সুযোগ ও সম্ভাবনা নেই কোন দলের। এ মুহূর্তে আবাহনীর খুব কাছে আছে শুধু রূপগঞ্জ আর শেখ জামাল। সমান ১৫ খেলায় ওই দুই দলের পয়েন্ট ২০ করে।
আবাহনী শেষ ম্যাচ জিতলে পয়েন্ট দাঁড়াবে ২৪। আর হারলে রূপগঞ্জের পয়েন্ট ২০ই থাকবে। আর শেখ জামাল শেষ দিন খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির বিপক্ষে জিতলেও তাদের পয়েন্ট দাঁড়াবে ২২। তখন আবাহনী অনায়াসে কোনরকম জটিলতা ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে।
পয়েন্ট অতিক্রম করার কোনো সুযোগ না থাকলেও আবাহনীর শিরোপা স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকুরো টুকরো হবার সম্ভাবনা কিন্তু আছে। অবশ্য সেটা ‘যদি-তবের’ ওপর ভর করে। প্রথম কথা, আবাহনীর হারতে হবে রূপগঞ্জের কাছে। তারপর শেখ জামালকেও জিততে হবে খেলাঘরের বিপক্ষে। তখন আবাহনী, রূপগঞ্জ আর আর শেখ জামাল- তিন দলের পয়েন্ট সমান (১৬ খেলায় ২২ করে) হয়ে যাবে। ফলে এই তিন দলের পারস্পরিক মোকাবেলাকে নিয়ামক ধরে লিগ ভাগ্য নিষ্পত্তি হবে। তাতে করে ভাগ্যর চাকা খুলে যাবে শেখ জামালের।
আবাহনী, রূপগঞ্জ আর শেখ জামালের পারস্পরিক মোকাবিলায় জয়-পরাজয়ের পাল্লা ভারি শেখ জামালের। দলটি প্রথম লিগ আর সুপার লিগ- দুই পর্বে রূপগঞ্জের সাথে জিতেছে। আর আবাহনীর কাছে প্রথম লিগে হারলেও সুপার লিগে জিতেছে। তার মানে চার হেড টু হেড লড়াইয়ে শেখ জামালের আছে তিন জয়। আর শেখ জামাল, আবাহনী ও রূপগঞ্জের তিন হেড টু হেডের মধ্যে আবাহনীর আছে দুই জয় (শেখ জামাল ও রূপগঞ্জের সাথে একবার করে)।
তার মানে বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের কাছে আবাহনী হারলে ওই তিন দলের পারস্পরিক মোকাবেলায় আবাহনীর দুই জয়ই থাকবে। তখন হেড টু হেডে লিগ বিজয়ী হবে শেখ জামাল।
অর্থাৎ কাল আবাহনী আর রূপগঞ্জ ম্যাচকে যতই ‘অঘোষিত ফাইনাল’ বলা হোক না কেন, রূপগঞ্জের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম। নেই বললেই চলে।
তবে রূপগঞ্জ আবাহনীকে হারালে লাভ হবে শেখ জামালের। তখন শেখ জামাল খেলাঘরের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে।
তবে হ্যাঁ, রূপগঞ্জের কাছে হেরেও আবাহনীর লিগ বিজয়ের হবার সম্ভাবনা ও সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে শেখ জামালকে খেলাঘরের কাছে হারতে হবে। তখন শেখ জামালের চ্যাম্পিয়ন হবার আর কোন সুযোগ থাকবে না। আবাহনী আর রূপগঞ্জের পয়েন্ট সমান ২২ করে হয়ে যাবে।
যেহেতু আবাহনী প্রথম পর্বে রূপগঞ্জকে হারিয়েছে, তাই কাল রূপগঞ্জ জিতলে হেড টু হেডের হিসেব সমান হয়ে যাবে। আর হেড টু হেড সমান হলে রানরেটে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হবে। সুপার লিগের শেষ ম্যাচের আগে পর্যন্ত আবাহনীর নেট রানরেট শেখ জামাল ও রূপগঞ্জের চেয়ে অনেক ভালো। শেষ ম্যাচ হারলেও তার তেমন পরিবর্তন হবে না। আকাশি হলুদ শিবির রানরেটে রূপগঞ্জকে পেছনে ফেলে হাসবে শেষ হাসি।
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম