জয়ের পর মুশফিকের পাগলাটে উদযাপন

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:১৬ এএম, ১১ মার্চ ২০১৮

৩ বলে আর বাকি ১ রান। সিঙ্গেল নিয়েই পাগলের মত উল্লাস শুরু করলেন মুশফিকুর রহীম। লঙ্কান বোলার থিসারা পেরেরার সামনে দাঁড়িয়ে বাঘের গর্জন দিতে শুরু করলেন যেন। তার এই পাগলাটে দৃশ্যটা হয়তো বা দীর্ঘদিন বিজ্ঞাপন হয়ে থাকবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের। এমন অবিশ্বাস্য জয়ের কথা কী কখনোই কল্পনা করতে পেরেছিল বাংলাদেশ!

নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেই তো এতবড় স্কোরের দেখা নেই বাংলাদেশের। সর্বোচ্চ ১৯৩ রান। অথচ বাংলাদেশের সামনে কি না আজ লক্ষ্য ২১৫ রানের বিশাল স্কোরের। উপমহাদেশের মাটিতেই তো এতবড় স্কোর তাড়া করার রেকর্ড নেই। সেখানে ২১৫ তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ কি না ২ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে।

অবিশ্বাস্য এই অর্জন তো এলো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমের ব্যাটে ভর করে। মাত্র ৩৫ বলে খেলা ৭২ রানের বিশাল ইনিংস। এমন অবিশ্বাস্য ইনিংসই বা কে কবে প্রত্যাশা করতে পেরেছিল। ক্রিস গেইলের কাছ থেকেও তো এমন মুহূর্তে এ ধরনের ইনিংস বের করে আনা অসম্ভব ব্যাপার। সেখানে মুশফিক খেললেন এক অতি মানবীয় ইনিংস।

থিসারা পেরেরার সামনে বাঘের গর্জন শেষ হতে না হতেই মুশফিক নাজমুল অপুর সেই নাগিন ড্যান্সটা দিলেন। এরপর উদযাপন সারলেন তিনি মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে। এরপর ড্রেসিংরুমের দিকে ফিরে উল্লাসের মাত্রা বাড়লো আরও। ঐতিহাসিক জয়, অনেক না বলা প্রশ্নের জবাব যে এই ইনিংসের মধ্য দিয়েই দিয়ে দিলেন মুশফিক!

বাংলাদেশের জন্যও তো কতটা জরুরী ছিল এই জয়। দক্ষিণ আফ্রিকা টানা হারের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার ইঙ্গিত ছিল ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে; কিন্তু এরপর ঘরের মাঠেই ছন্দপতন। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হার, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভরাডুবি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট চলে গিয়েছিল যেন তলানীতে।

শ্রীলঙ্কার মাঠে তাদেরই বিপক্ষে জয় পাওয়া ছিল স্বপ্নের মত। ভারতের বিপক্ষে ১৩৯ রান করে ৬ উইকেটে হারার পর কোনো এক জাদুমন্ত্রবলে উজ্জিবিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল টাইগারদের। সেটাও কি না স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে! যারা প্রথম ম্যাচে হারিয়েছে ভারতের মত শক্তিশালী দলকে।

২১৫ রানের লক্ষ্য দেখে কারও কারও পিলে চমকে যাওয়ার কথা; কিন্তু তামিম আর লিটন কুমার দাস সে সবের কিছুই মনে রাখলেন না। দু’জন মিলে গড়লেন ৭৪ রানের দারুণ এক জুটি। ১৯ বলে লিটন ৪৩ রানের যে ঝড় তুলে দিয়ে গিয়েছিলেন সেটাকে অব্যাহত রাখলেন তামিম, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকাররা। মুশফিক তো ছিলেন অসাধারণ। সব কিছুর উর্ধ্বে। ৩৫ বলে খেলা ৫টি বাউন্ডারি আর ৪টি ছক্কার মিশেলে গড়া এই অবিশ্বাস্য ইনিংসই মুশফিককে পরিণত করেছে ‘মহানায়কে।’

 

কত হাসি, কত কান্না সঙ্গী তার। ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে শিশুর মত কেঁদে ফেলা মুশফিকুর রহীমকে সাকিব আল হাসানের স্বান্তনা দেয়ার দৃশ্যটা এখনও কেউ ভুলতে পারেনি। দীর্ঘদিন ভুলতে পারবে কি না সন্দেহ। সেই মুশফিকুর রহীম নিজেই একবার তীরে এসে তরি ডুবিয়েছিলেন বাংলাদেশের। ২০১৬ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ব্যাঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত নিশ্চিত জয়ের সেই ম্যাচে মুশফিকই ডুবিয়েছিলেন দলকে। শেষ মুহূর্তে তিনি নিজেই জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে; কিন্তু ভুলের খেসারাত দিলেন শেষ তিন বলে ৩ উইকেট হারানোর ফলে।

২০১৬ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ব্যাঙ্গালুরুর সেই ম্যাচে যে খলনায়ক হয়েছিলেন তিনি, সেটাকে ভুলিয়ে দিলেন আজ। শেষ ওভারে ২ বল হাতে রেখেই প্রয়োজনীয় ৯ রান তুলে নিয়ে ম্যাচটাকে দারুণ সমাপ্তি টেনে দিলেন।

আইএইচএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।