ফতুল্লায় টানা চার বলে চার উইকেট মাশরাফির

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ০৬ মার্চ ২০১৮

তৃতীয় উইকেটে জুটিতে ১৪৬ রানের জুটি গড়ে ফেললেন শাহরিয়ার নাফীস আর পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান রাজা আলি দার। এই অবস্থা দেখে ফতুল্লার শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসেও ঘামছিলেন আবাহনী কর্মকর্তা জালাল ইউনুস। ২৯০ রানের বিশাল স্কোর গড়ার পরও কি তবে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে হেরে যাবে আবাহনী?

কিন্তু আবাহনীতে যে মাশরাফি বিন মর্তুজা নামক এক জাদুর কাঠি রয়েছেন! যার ছোঁয়ায় বদলে যায় সব কিছু। প্রথম স্পেলে যিনি ৬ ওভার বল করে ২২ রান দিয়েও কোনো উইকেট পেলেন না, তিনি কি না দ্বিতীয় স্পেলে এসেই দুরন্ত-দুর্বার হয়ে উঠলেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যাটসম্যানদের সামনে। এই স্পেলে ৩.৫ ওভার বল করে নিলেন ৬টি উইকেট। যার শেষটি শেষ ওভারে টানা চার বলে।

অবিশ্বাস্য এই ওভারটি ছিল ম্যাচের একেবারে শেষের। শেষ ওভারে অগ্রণী ব্যাংকের জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৩ রান। হাতে উইকেট তখনও ৪টি। ক্রিজে রয়েছেন ২৭ বলে ৪৬ রান করা ধীমান ঘোষ এবং ১০ বলে ১১ রান করা আবদুর রাজ্জাক

মাশরাফির প্রথম বল থেকে একটি সিঙ্গেল নিয়ে নন-স্ট্রাইকিংপ্রান্তে চলে গেলেন রাজ্জাক। স্ট্রাইকিং প্রান্তে এলেন ধীমান ঘোষ। বিগ শট খেলার তাড়না। ধীমান ঘোষ উড়িয়ে মারলেন। বল ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে উঠে গেলো সোজা আকাশে। পরিবর্তিত ফিল্ডার জয়রাজ শেখ ক্যাচটি ধরলেন প্রথম স্লিপে। এরই মধ্যে ক্রিজ পরিবর্তন করে আবারও স্ট্রাইকিং প্রান্তে আবদুর রাজ্জাক। তিনি ক্যাচ তুলে দিলে ডিপ মিডউইকেটে। নাজমুল হোসেন শান্ত ধরলেন ক্যাচটি।

খেলা দারুণ জমে উঠেছে। একদিকে মাশরাফির হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা। অন্যদিকে দু’দলের সামনেই জয়ের দারুণ সুযোগ। এমনই এক মুহূর্তে ব্যাট করতে এলেন শফিউল ইসলাম। তার দায়িত্ব হ্যাটট্রিক ঠেকানোরও। এবার ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে দিলেন শফিউল ইসলাম। ক্যাচ ধরলেন সাইফ হাসান। পূরণ হয়ে গেলো হ্যাটট্রিক। যে কোনো পর্যায়ে এটা মাশরাফির প্রথম হ্যাটট্রিক।

এরপর বাকি ছিলেন ফজলে রাব্বি। তিনি উইকেটে নেমেই শর্ট থার্ডম্যানের উপরে ক্যাচ তুলে দেন। উপরে উঠে যাওয়ার কারণে অনেক দুর দৌড়ে গিয়ে সেই ক্যাচ ধরলেন উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিঠুন। শেষ হয়ে গেলো অগ্রণী ব্যাংকের ইনিংস। ১১ রানের দারুণ এক শ্বাসরূদ্ধকর জয় পেলো আবাহনী।

সব মিলিয়ে ৯.৫ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন মাশরাফি। এর মধ্যে শেষ ওভারে চার উইকেটছাড়াও রয়েছে শাহরিয়ার নাফিস এবং পাকিস্তানি জাহিদ জাভেদের উইকেট। শাহরিয়ার নাফিস ১১৯ বলে খেলেন ১২১ রানের ইনিংস।

শেষ স্পেলে মাশরাফি বল করলেন মাত্র ৩.৫ ওভার। তাতেই বদলে গেলো পুরো ম্যাচের চিত্র। বল করতে এসেই ফিরিয়ে দিলেন উইকেটে একেবারে জমে যাওয়া শাহরিয়ার নাফীসকে। ভাঙলেন ১৪৬ রানের জুটি। ১১৯ বলে ১৩ বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায় ১২১ রান করেন নাফীস। পরের ওভারেই ফেরালেন জাহিদ জাভেদকে।

শেষ ওভারে এসে তো রীতিমত চমকই দেখালেন মাশরাফি। ডেড ওভারে এতটা বিধ্বংসী হয়ে উঠবেন মাশরাফি, তা হয়তো তিনি নিজেও কল্পনা করতে পারেননি। ধীমান ঘোষ, রাজ্জাক, শফিউল এবং ফজলে রাব্বিকে টানা চার বলে ফিরিয়ে দিয়ে ইতিহাসই গড়লেন মাশরাফি।

আইএইচএস/পিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।