নিদাহাস ট্রফিতে ‘আন্ডারডগ’ বাংলাদেশ!

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৩৪ পিএম, ০৩ মার্চ ২০১৮

ব্যবধান মাত্র ১৩ মাসের। কিন্তু এর মধ্যে চালচিত্র কি অদ্ভূত পাল্টে গেল! গত বছর এই মার্চ-এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার মাটিতে লঙ্কানদের সাথে টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি; তিন সিরিজই ড্র করে ফিরেছিল টাইগাররা।

তিন ফরম্যাটেই বুক চিতিয়ে লড়ে মাঠে সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছিল টিম বাংলাদেশ। গলে প্রথম টেস্ট হারের পর কলম্বোয় পি সারা স্টেডিয়ামে নিজেদের শততম টেস্টে অবিস্মরণীয় জয়ে সিরিজ ১-১ ‘এ সমতা ফিরিয়ে আনা। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজ বিজয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে বৃষ্টির বৈরী আচরণে সম্ভাবনায় কুঠারাঘাত। শেষ ম্যাচ হেরে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ভঙ্গ। আর টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম খেলায় হারের পর সাকিব ম্যাজিকে দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে জয়ের দেখা পাওয়া।

সেই উজ্জীবিত পারফরম্যান্স আর ফলের আলোকেই এবার লঙ্কানদের বিপক্ষে দেশের মাটিতে টাইগাররা মাঠে নেমেছিল ফেবারিটের তকমা এঁটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফেবারিটের তকমাটি কাগজেই রয়ে গেছে। বাস্তবে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। তিন জাতি আসরের প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের ১৬৩ রানের রেকর্ড ব্যবধানে হারানোর পর হঠাৎ পারফরম্যান্সের অবনমন। ছন্দপতন।

তারপর আর নিজেদের ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে প্রায় সমান তালে লড়ে বীরোচিত ড্র করলেও রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে একদম মুখ থুবড়ে পড়ে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০‘তে হারের প্রভাবটা চরমভাবে পড়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের অ্যাপ্রোচ ও পারফরম্যান্সে।

দুই ম্যাচের সিরিজে তুলোধুনো হওয়া। শেরে বাংলায় প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৯৩ রানের রেকর্ড পুজি গড়েও চরম নাজেহাল। আর সিলেটে গিয়ে একদম খাবি খাওয়া।

দেশে চেনা জানা পরিবেশ আর গ্যালারি ভর্তি সমর্থকের মুহূর্মুহূ করতালি ও অকুন্ঠ সমর্থনে এমন বাজে পারফরম্যান্স ও করুণ পরিনতির পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে লঙ্কানদের সাথে পেরে ওঠা যে আরও কঠিন হবে! টাইগারদের তাদের দেশে পর্যুদস্ত করা লঙ্কানরা দেশের মাটিতে যে আরও দুরন্ত। দুর্দান্ত ও দুর্মনীয়।

সাথে প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকবে এশিয়ার পরাশক্তি ভারত। যাদের আত্মবিশ্বাস ও আস্থা এখন আকাশছোঁয়া। পুরো দল টগবগ করে ফুটছে। এই তো সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়াদের চরম ভাবে পর্যুদস্ত করে এসেছে ভারতীয়রা। এমন বৃহষ্পতি তুঙ্গে থাকা দলকেও সামলাতে হবে। সব মিলে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। যে কঠিন মিশনে এবার সাকিব বিহীন বাংলাদেশ অবশ্যই ‘আন্ডারডগ।’

দেশের মাটিতে ফেবারিট হয়ে মাঠে নেমে উল্টো লঙ্কানদের সাথে না পারার গ্লানি নিয়ে মিশন শেষ করা টাইগাররা এবার আন্ডারডগ, মানছেন কোচ কোর্টনি ওয়ালশ স্বয়ং। আজ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠলো, নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটা?

ভারপ্রাপ্ত কোচ কোর্টনি ওয়ালশের জবাব, ‘আমরা ওই আসরে আন্ডারডগের তকমা গায়ে এঁটে মাঠে নামবো। কারণ আমাদের খেলতে হবে দুটি ভালোমানের এবং শক্তিশালি প্রতিপক্ষের সাথে।’

দুই প্রতিপক্ষ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ওয়ালশ বলেন, ‘সবার জানা লঙ্কানরা ঘরের মাঠে সব সময়ই বিপজ্জনক দল। আর ভারত এই সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দুর্দান্ত পারফরম করে প্রোটিয়াদের হারিয়ে এসেছে। দুটি দল র্যাঙ্কিংয়েও আমাদের ওপরে। বলার অপেক্ষা রাখে না, কলম্বোয় আমাদের খেলতে হবে র্যাঙ্কিংয়ে ওপরে থাকা দুই দলের সাথে। এটা আমাদের জন্য হবে এক বড় পরীক্ষা।’

তারপরও ওয়ালশ আশাহত হবার কোনোই কারণ দেখছেন না। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিপক্ষ শক্তিশালি হলেও বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভাবনা আছে যথেষ্টই। টাইগারদের ভারপ্রাপ্ত কোচ বলছিলেন, ‘আমার মনে হয় আমাদের বেশ ভালো সম্ভাবনাই আছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভালো খেলতে পারি, তাহলে ফাইনালে পৌঁছানোর ভালো সুযোগ থাকবে।’

এখনই নিদাহাস ট্রফি নিয়ে আকাশ কুসুম কল্পনায় যেতে চান না ওয়ালশ। কলম্বো পৌঁছে পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে নিজেদের রণকৌশল সাজাতে চান এ ক্যারিবিয়ান। তার ভাষায়, ‘আমি ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবতে চাই। পরিকল্পনাও সেভাবেই সাজানোর কথা ভাবছি। আমরা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা উপহার দেয়ার আশায় উন্মুখ হয়ে আছি।’

দেখা যাক, ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা বাংলাদেশ প্রধান চালিকাশক্তি ও ব্যাট- বলের সেরা পারফরমার সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই আলোর পথ খুঁজে পায় কিনা!

এআরবি/এমএমআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।