টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার সামর্থ্য আছে আমাদের : তামিম
বছর হিসেব করলে বাংলাদেশ খুব বেশি টি টোয়েন্টি খেলে না। সেই ২০০৬ থেকে এখন পর্যন্ত মোট ম্যাচ মাত্র ৬৯টি। শুধু কম খেলাই নয়, জয়ের পাল্লাও মোটেই ভারি নয়। এখন পর্যন্ত ৪৬ হারের বিপরীতে জয় সংখ্যা মোটে ২১। আর দুটি খেলা পরিত্যক্ত হয়েছে। একটি আয়ারল্যান্ডের সাথে। আর অন্যটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
মোদ্দা কথা, ওয়ানডে ফরম্যাটে দাঁড়িয়ে গেলেও ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখনো গুছিয়ে নিতে পারেনি। ঠিক করণীয় কাজগুলো এখনো আত্মস্থ করা সম্ভব হয়নি। তবে সামনের দিনগুলোয় ম্যাচ বেশি। দল হিসেবে উন্নতির তাগিদটাও তাই বেশি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হাতছাড়ার পর দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। তারপর ২০১৮ সালে আরও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আছে। অন্যতম চালিকাশক্তি ও দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য তামিম ইকবাল মনে করেন, টি-টোয়েন্টি দল হিসেবে উন্নতির সুযোগ রয়েছে তাদের।
তামিমের অনুভব ও উপলব্ধি, সামনে যেহেতু বেশ কিছু টি-টোয়েন্টি ম্যাচ আছে, তাই লক্ষ্য-পরিকল্পনা স্থির করার এখনই সময়। এ কারণেই মুখে এমন কথা, ‘এখন পরিস্থিতিটা একটু আলাদা। আমরা টি-টোয়েন্টি খেলতাম খুবই কম। কিন্তু আমাদের পরবর্তী ৬ মাস বা এক বছরের ফিকশ্চার দেখেন , আমরা প্রচুর টি-টোয়েন্টি খেলবো। মনে হয় ওয়ানডেরও চেয়েও বেশি টি-টোয়েন্টি আছে পরের এক বছর। কাজেই আমার মনে হয় আমাদের কোন ধরণের ব্যালান্স হবে অথবা আমরা কোন ধরণের পরিকল্পনায় আগাবো, তা ঠিক করে ফেলার এখনই সেরা সময়। আমরা এখন থেকে যত কম সময়ের তৈরি হয়ে যেতে পারি, ততই মঙ্গল। ২০২০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে। আমরা এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করলে হাতে যথেষ্ট সময় থাকবে।’
তামিম মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ যা খেলে, তার চেয়ে আরও বেটার পারফরম করার সামর্থ্য, সুযোগ ও সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আমরা যা পারফরম করি, তার চেয়ে আরও ভালো করতে পারি। আমরা যা খেলছি তার চেয়েও অনেক ভালো খেলতে পারি।’
তামিম মনে করেন, ভালো খেলার অন্যতম প্রেরণা হতে পারে বিপিএল। তার ভাষায়, ‘এই একটা ফরম্যাটে আমরা ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের ডমিস্টিক টুর্নামেন্ট খেলি। কাজেই টি টোয়েন্টি‘তে আমাদের আরও ভালো করা উচিত। আমি আশা করি, আমরা আরও ভালো খেলতে পারবো।’
টেস্ট সিরিজে না পারলেও তামিম দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে রাখতে নারাজ। তার মনে হয় সাম্প্রতিক সময় শ্রীলঙ্কা আবার ভালো খেলতে শুরু করেছে। তাই বলে লঙ্কানরা শক্তি ও সামর্থ্যে এগিয়ে, তা বলা যায় না।
দু'দলের সামর্থ্য ও সম্ভাবনা সমান, এমন কথা জানিয়ে তামিম বলেন, ‘গত কদিনে মনে হচ্ছে লঙ্কানরা ভালো করছে। দলটির গঠনশৈলি আমাদের মতই। অভিজ্ঞতার সাথে তারুণ্যের মিশ্রণ আছে। কিছুটা আমাদের মতোই। আমি কাউকেই এগিয়ে বা পিছিয়ে রাখতে চাই না। দুই দলই সমান সামর্থ্যের। নির্দিষ্ট দিনে যারা ভালো খেলবে, তারাই জিতবে।’
তামিমের অনুভব, ওপেনিং বা শুরুটাই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের মূল ঘাটতি ও সমস্যার জায়গা। এ বাঁহাতি ওপেনার মনে করেন, ওপেনারদের কাজ শুধু প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে ওভার পিছু আট-নয় রান করে তুলে দিয়ে নিজেরা ৩০ কিংবা ৪০ করে আউট হওয়া নয়। বরং এক ওপেনারের যতটা সম্ভব লম্বা সময় উইকেটে থেকে দীর্ঘ ইনিংস খেলা খুব জরুরি।
তামিমের মূল্যায়ন, ‘আমাদের সমস্যা হলো শুরুতে। টি-টোয়েন্টিতে শুরুটাই আমাদের জন্য কঠিন। ওপেনার হিসেবে ব্যাট করতে নেমে আপনাকে শুরু থেকেই উইকেট ত্যাগ করার জন্য তৈরি থাকতে হবে। প্রথম ছয় ওভারে আপনি মারতে গেলে আউট হতেই পারেন।’
তামিম বোঝানোর চেষ্টা করেন, শুরুতে আউট হয়ে গেলে ভিন্ন কথা। তবে কেউ সেট হয়ে গেলে তাকে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। তার ভাষায়, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, কারো রান ৩০-৪০ ‘র ঘরে গেলে সেটাকে ৬০-৭০ ‘এ নিয়ে যেতে হবে। এই জায়গাতেই আমাদের একটু ঘাটতি আছে। কারণ সুন্দর বা আক্রমনাত্মক ৩০ কিন্তু দিনশেষে ৩০ রানই। একটা ব্যাটসম্যান ওই ৩০ রানকে ৫০-৬০ করে দিলে নিজের জন্যও ভালো, দলের জন্যও মঙ্গল। তাতে দলের একটা প্লাটফর্ম তৈরি হয় । আমি মনে করি টি-টোয়েন্টি এমন একটা ফরম্যাট, শুরুটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন সেটা করবেন, তখন সেটাকে যতটা সম্ভব বড় কিছু করতে হবে।’
ওপরের এই কথোপকথনই বলে দিচ্ছে ভিতরে ভিতরে কিংবা মনে মনে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্থির করে ফেলেছেন তামিম। অর্থাৎ তার লক্ষ্য প্রথম পাওয়ার প্লে‘তে কিছু রান তুলে ৬ ওভারে তিরিশের ঘরে যেতে পারলে অন্তত ৬০-৭০ করে দলকে বড় ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়া। তামিমের এ লক্ষ্য পূর্ণ হলে লাভ হবে টিম বাংলাদেশেরই।
এআরবি/এমএমআর/পিআর