রাজ্জাকের বিশ্বাস : ঘাটতি পুষিয়ে নেয়ার সময় ও সুযোগ আছে

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ পিএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শেষ টেস্ট খেলেছিলেন চার বছর আগে এই ফেব্রুয়ারি মাসেই (২০১৪ সালের ৪-৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। কি অবাক করা ঘটনা! সেই ম্যাচেও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা।

কিন্তু ওই খেলায় স্পিনার রাজ্জাককে সে অর্থে ব্যবহার করাই হয়নি। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪ ওভার (৪-১-৬-০) বোলিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আর দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংই পাননি। এবার সেই লঙ্কানদের বিপক্ষে ১৬ ওভার বল করে ৬২ রানে ৪ উইকেট শিকারি রাজ্জাক।

বলার অপেক্ষা রাখেনা, টেস্টে এটাই তার সেরা বোলিং। বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে। ক্যারিয়ার সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে জাতীয় দলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জায়গায় সুযোগ পেয়ে নিজেকে মেলে ধরা সহজ কাজ নয়।

তবে রাজ্জাক দেখিয়ে দিলেন, বয়স কেবল একটি সংখ্যাই। ভালো করতে বয়স কোনো বাধা নয়। চাই অধ্যবসায়, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা আর আন্তরিক চেষ্টা।

যেভাবে ফিরলেন, এই বয়সে; রাজ্জাকের তো অন্যরকম অনভূতি হওয়ারই কথা। প্রথম দিনের খেলা শেষে প্রশ্নটা উঠলোও- এমন পারফরম্যান্সের পর অনুভূতি কি? রাজ্জাকের শান্ত জবাব, ‘প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য জাতীয় দলে ফেরত আসাটা গুরুত্বপূর্ণ ও বড় ব্যাপার। এর অনুভূতি মুখে প্রকাশ করা যায় না। ভিতরে ভিতরে অনুভব করা যায়। অবশ্যই ভালো। অনেক ইতিবাচক দিক থাকে।’

তার এভাবে মধ্য তিরিশে আবার দলে ফেরা, অন্যদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। বিশেষ করে যারা জাতীয় দলে ফেরার হাল ছেড়ে দিয়েছেন, তাদের জন্য এটা বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে রাজ্জাক বলেন, ‘অবশ্যই আমি এটা মনে করি। এখনকার সময়ে ক্রিকেটের যে অবস্থা, তারপরও আমাকে দলে নেয়া হয়েছে, এটাতেই প্রমাণ হয় কারো সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে না কখনো। সুযোগ থাকে আরকি!’

দলে ফেরার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল হয়নি তার। এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠলা আজকের পারফরমেন্স কি গত চার বছর সুযোগ না পাওয়ার জবাব? রাজ্জাক এভাবে ভাবতে চান না। উল্টো বলে উঠেন, ‘না, তা নয়। আমি আসলে জবাব হিসেবে দেখছি না। যখন যেখানে খেলার সুযোগ পেয়েছি, চেষ্টা করেছি ভালো করার। ভালো হলে খুশি হই। খারাপ হলে যে খুব মন খারাপ হয় সেটা না। আমি চেষ্টা করি সমস্যা খুঁজে বের করার। পারফরম্যান্সকে আসলে জবাব হিসেবে বলা ঠিক হবে না।’

শ্রীলঙ্কাকে ২২২ রানে বেঁধে ফেলেও দিন শেষে পাল্টা ব্যাটিংয়ে নেমে নিজেরা চাপে। ৫৬ রানেই বাংলাদেশের খোয়া গেছে চার উইকেট। চার নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তামিম, ইমরুল, মুমিনুল ও মুশফিক সাজঘরে। অথচ অংকের হিসেবে এখনো ১৬৬ রানের বড় ব্যবধানে পিছিয়ে মাহমুদউল্লাহর দল।

প্রথম দিন শেষে তবে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ? আজ দিনের খেলা শেষে প্রতিটি বাংলাদেশ সমর্থক হিসেব কষছেন। খেলা শেষে সংবাদ সন্মেলনেও উঠলো এ প্রশ্ন। অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাকের ধারণা, লড়াই হচ্ছে সেয়ানে সেয়ানে। তবে বাংলাদেশ দুটি উইকেট বেশি হারিয়ে ফেলেছে।

প্রথম দিনের খেলার মূল্যায়ন করতে গিয়ে রাজ্জাক বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটটাই আসলে এমন। একেক সেশনে একেক টাইপের খেলা হয়। দেখা যায় একটা সেশনে একটা দল এগিয়ে আছে, পরের সেশনে আবার অন্য দল এগিয়ে যায়।’

টপ অর্ডারের সেরা চার ব্যাটসম্যান সাজঘরে। এখান থেকে কি বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? রাজ্জাক তো ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। তার মতে, টেস্ট ক্রিকেট পাঁচদিনের ম্যাচ। যে কোন ঘাটতি ও ক্ষতি পোষানোর সময় এবং সুযোগ থাকে। বাঁহাতি এই স্পিনারের ভাষায়, ‘ টেস্টে ক্ষতি পূরণ করে দেয়ার জায়গা থাকে। আমার মনে হয়, এটা রিকভার করা সম্ভব সহজেই।’

প্রথম দিনই দু'দল মিলে ১৪ উইকেটের পতন ঘটেছে। খেলা কি পুরো পাঁচ দিন হওয়া সম্ভব? আর সবার মতো রাজ্জাকেরও ধারণা, এই ম্যাচ পাঁচ দিন গড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম।

বাংলাদেশকে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে হবে, অবস্থা যেদিকে গড়াচ্ছে; তাতে একটু দুশ্চিন্তাও রাজ্জাকের মনে। তিনি বলেন, ‘চার ইনিংসের একটা শেষ হয়েছে। আরো একটা ইনিংসের বেশ কয়েকটা উইকেট পড়েছে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে আমার মনে হয়, পাঁচদিনের আগেই টেস্ট শেষ হতে পারে। এই টেস্টে অবশ্যই ফলাফল হবে। এখানে চারটা ইনিংসই হবে। সেটা না হলে তো আর ফলাফল হবে না! চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা তো কঠিন। এখনকার চেয়ে কঠিন হবে।’

সেই কঠিন কাজটাকে একটু সহজ করে রাখতে প্রথম ইনিংসেই এগিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে, বাকি ছয় উইকেট নিয়ে কি টাইগাররা সেটা পারবে?

এআরবি/এমএমআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।