সবার ভেতরে বিশ্বাস ছিল ‘পারবে বাংলাদেশ’

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:০৫ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

টেস্টের চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে লঙ্কান স্পিনারদের সামনে মুড়ি-মুড়কির মতো তিন উইকেটের পতন ঘটেছে। দলের ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভ বলে খ্যাত তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস এবং মুশফিকুর রহীম ফিরে গেলেন খুব দ্রুতই। ইমরুল উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছিলেন। তামিমের উইকেটটিতেও ছিল খানিকটা ভুল; কিন্তু মুশফিক আউট হয়েছেন পুরোপুরি দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে। হেরাথের বল পুরোপুরি ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন তিনি। বল ব্যাটে লেগে জুতার মাথায় বাউন্স করে চলে গেলো সিলি পয়েন্টে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে। টিভি আম্পায়ারের সাহায্য নিয়ে মুশফিককে আউট ঘোষণা করলেন ফিল্ড আম্পায়ার।

সঙ্গে সঙ্গেই চতুর্থ দিনের খেলা শেষ। তখনও লঙ্কানদের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে ১১৯ রান। পরাজয়ের শঙ্কা ঝেঁকে বসেছে চট্টগ্রামের সাগরিকায়। এ ঝেঁকে বসা এবং লঙ্কান স্পিনে কাঁপতে থাকা বাংলাদেশের ত্রাণকর্তার ভুমিকায় কে অবতীর্ণ হবেন এই শঙ্কা বুক ধুরু ধুরু করছিল ভক্তদের হৃদয়। চতুর্থদিন শেষে রাতে টিম হোটেলে নিশ্চয় উইকেটে টিকে থাকা মুমিনুলের সঙ্গে বাকি ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। কৌশল আঁটা হয়েছে, শেষ দিনে কিভাবে লঙ্কান স্পিনারদের মোকাবেলা করবে ব্যাটসম্যানরা- সে ছবক নিশ্চিত কোচিং স্টাফদের কাছ থেকে পেয়েছেন মুমিনুল-লিটন-মাহমুদউল্লাহরা।

শেষ পর্যন্ত পেরেছে বাংলাদেশ। অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন মুমিনুল হক এবং লিটন কুমার দাস। দু’জন মিলে গড়েছেন ১৮০ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটি। একই টেস্টে দুই ইনিংসে টানা দুই সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হয়েছেন মুমিনুল হক। ১০৫ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে মুমিনুল বাঁচিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। লিটন কুমার দাস খেলেছেন ৯৪ রানের ইনিংস। গৌরবোজ্জল ড্র করেছে বাংলাদেশ।

এই ড্র জয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। যে পরাজয়ের শঙ্কা আগেরদিন সন্ধ্যায় ঝেঁকে বসেছিল টিম বাংলাদেশ শিবিরে, সেই শঙ্কা ঝেঁকে ফেলে দিয়ে মুমিনুল আর লিটন বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন লঙ্কানদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। লঙ্কানদের হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটিকে ছিনিয়ে নিলেন বাংলাদেশের অকুতোভয় এ দুই ক্রিকেট যোদ্ধা।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে দলীয় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং ম্যাচ সেরা মুমিনুল হক জানালেন, তাদের বিশ্বাস ছিল, ম্যাচটা হারবেন না। শুধু এই বিশ্বাসটা বুকে ধারণ করে মাঠে এসে সাহসটা ধরে রাখা ছিল জরুরী। সেটাও করে দেখাতে পেরেছেন মুমিনুলরা।

মাহমুদউল্লাহর কাছে প্রশ্ন ছিল, যেভাবে খেলাটা শেষ হলো, প্রত্যাশাটা কী এমন ছিলো? জবাবে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘গতকাল (চতুর্থদিন) আমরা যে অবস্থায় ছিলাম, আপনি যেটা বললেন যে- হারের আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছিলো; কিন্তু আমি বলছিলাম, আমাদের মধ্যে বিশ্বাস থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের যে দায়িত্ব, তা মনে রেখে ব্যাটিং করা প্রয়োজন। নিজেদের স্কিলের ওপরও আমাদের বিশ্বাস ছিলো। আমাদের শুধু একটা জুটির দরকার ছিলো। যেটা মুমিনুল ও লিটন করেছে। আর ড্রর কলটা ওদের (শ্রীলঙ্কার) তরফ থেকেই আসে। যেহেতু রেজাল্ট হচ্ছে না, তো তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেললেই ভালো।’

পঞ্চম দিনের জন্য পরিকল্পন ছিল নিজেদের ওপর এ বিশ্বাস রাখা যে, আমরা বাংলাদশের প্রতিনিধিত্ব করছি। এ কথাই জানালেন অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা শুধু একটা জিনিসই ছিলো যে, আমরা জানি প্রথমেই আমরা তিনটা উইকেট হারিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে যাতে ওই বিশ্বাসটা থাকে যে আমরা বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করছি এবং সেভাবেই যেনো আমরা রিঅ্যাক্ট করি। আমাদের অ্যাকশনগুলো যেনো ওই রকম হয়। আলহামদুলিল্লাহ- মুমিনুল ও লিটন আজ খুব ভালো ইনিংস খেলেছে। আমার মনে হয় যে, ওদের ইনিংস খুবই ফাইটিং নক ছিলো। খুব ভালো লেগেছে। ওদের পারফর্ম্যান্সে আমি খুবই খুশি।’

পাশে বসে থাকা ম্যাচ সেরা মুমিনুল হককেও একই কথা জিজ্ঞাসা করা হলো, চতুর্থদিন শেষে দলের মধ্যে কথাবার্তা হী হয়েছিল? পরিকল্পনা কী ছিল? মুমিনুল জানালেন, এমন পরিস্থিতি নতুন নয়। তবে এমন পরিস্থিতিতে জরুরী হলো মানসিক দৃঢ়তা।

মুমিনুল বলেন, ‘আমরা যেটা করেছি যে, এমন পরিস্থিতিতে আগেও আমরা পড়েছিলাম। এসব পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিক দৃঢ়তা। নিজের কাছে বিশ্বাস রাখা। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে, টিম বয়- এমনকি আপনারা যারা সাংবাদিক আছেন, তারাও। পুরো দেশের মানুষের বিশ্বাস ছিল। সবাই বিশ্বাস করেন, তাহলে জিনিসটা (ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস) আসবে। রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করেছি, তিনিও একই কথা বলছে। এইটা নিয়ে কারো মধ্যে সন্দেহ যেন না থাকে যে আমরা এই ম্যাচটা সেইভ করতে পারব না। আমরা দলের মধ্যে যেভাবে কথা বলছি, জিনিসটা এমন যে সন্দেহ যেন না থাকে। আমরা যেন বিশ্বাস করি। (না হারার) বিশ্বাসটা ছিল সবার ভেতরে।’

চাপের মধ্যে ভাল করার নিয়ে মুমিনুলের দৃঢ়তা ছিল অনেক বেশি। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাপের মধ্যে খেলার..., আপনি যদি চিন্তা করেন পুরো দিনটা খেলবেন তাহলে কিন্তু কঠিন। আমি আর লিটন যেটা করছিলাম প্রথম সেশন থেকে। সেশন বাই সেশন, এক ঘন্টা, এক ঘন্টা করে প্ল্যান করেছি।’

পঞ্চম দিনে এমন উইকেট পাওয়া, গত সাড়ে তিন বছরে যে চাপে ছিলেন। এখন নতুন শুরু কি না? মুমিনুল তেমন মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় আমার জীবনের জন্য ওই জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আপনারা কীভাবে নেন জানি না। তবে আমার কাছে মনে হয় এটা আমার জীবণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার মানসিকতার একটা বদল এসেছে, পরিশ্রমটা আরও বাড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যাশা করছিলাম যে আরও টার্ন করবে। টার্ন হলেও যাতে আমরা সারপ্রাইজ না হই এরকম চিন্তা-ভাবনা ছিল। আমি যদি চিন্তা করি টার্ন হবে না, পরে যদি টার্ন হয় তাহলে সারপ্রাইজ হয়। টার্ন হলেও যেন খেলে দিতে পারি এমন সংকল্প ছিল।’

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।