‘সাকিব জানে তিন নম্বরে তাকে কী করতে হবে’

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৮

‘০’ দিয়ে শুরু। ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথমবারেরমত তিন নম্বরে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই হয়ে গেলেন আউট। চার বছর পর, ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকায় কিম্বার্লিতে আবার তিন নম্বরে নেমে আউট হলেন ২৯ রান করে।

এরপর এবার তিন জাতি আসরে প্রথমে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (১৫ জানুয়ারি) ৩৭, পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (১৯ জানুয়ারি) ৬২ বলে খেললেন ৬৭ রানের ইনিংস । এটাই তিন নম্বর পজিসনে সাকিব আল হাসানের পরিসংখ্যান। যাতে আছে পারফরমেন্সের গ্রাফ ওপরে ওঠার আভাস।

চার বছর আগে জিম্বাবুয়ের সাথে সাকিব তিন নম্বরে প্রথম ব্যাট করেছিলেন হঠাৎ করেই। শুধুমাত্র রানের গতি বাড়াতে। তামিম ইকবাল আর এনামুল হক বিজয় মিলে প্রথম উইকেট জুটিতে ১৫৮ রান তুলে দেয়ার পর ৯ উইকেট হাতে থাকা অবস্থায় ওভার বাকি ছিল ১৭টি। আর যেহেতু বিগ হিট নেয়ার এবং উইকেটের চারদিকে আক্রমণাত্মক শটস খেলার সামর্থ্য আছে, তাই সাকিব হাত খুলে খেলে ওভার পিছু রানের গতি বাড়াবেন- এমন চিন্তায়ই তাকে ওয়ান ডাউনে নামানো হয়েছিল; কিন্তু সাকিব কিছু করতে পারেননি। সিবান্দার প্রথম বলে শূন্য রানে বোল্ড হয়ে যান। এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় তাকে আবার তিনে পাঠানো হয়েছিল প্রোটিয়া বোলারদের বোলিং তোড় সামলাতে। সেখানেও কিছু করা সম্ভব হয়নি।

এবার সাকিব ওয়ান ডাউন খেলছেন ওই পজিশনে দীর্ঘ দিনের দুর্বলতা এড়াতে। জানা গেছে, টিম ম্যানেজমেন্টের প্রেসক্রিপশন তো আছেই, সাকিব নিজেও নাকি ওয়ানডাউনে খেলতে চেয়েছেন। এই যে নিজের মত করে খেলতে পারা, ব্যাটিং অর্ডার বদলে অন্য অর্ডারে নামার সুযোগ- সেটাই এবারের তিন জাতি আসরে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ।

একটু দেখে খেললে, হয়ত ১৫ জানুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি পেতে পারতেন সাকিব। সে ম্যাচে ৩৭ রানে ফিরলেও তার ঠিক পরের ম্যাচেই পঞ্চাশের ঘরে পা রেখে আউট হলেন ৬৭ রান করে।

অধিনায়ক মাশরাফির ধারনা, সাকিব এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্যারিয়ার সচেতন ক্রিকেটার। মেধা-প্রজ্ঞা ছাড়াও তার আছে প্রতিকূলতাকে জয় করার ক্ষমতা। যা দিয়ে ঠিক তিন নম্বরে সফল হবে সাকিব। বন্ধু সাকিব তিন নম্বরে কেমন করবেন?

একই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তামিম ইকবালের তাছেও। তামিমের চোখে সাকিব দারুন স্মার্ট ক্রিকেটার। তবে তিন নম্বর পজিশনে সাকিবই সেরা বিকল্প কিনা, কিংবা পুরোপুরি মানানসই কি না? এখনই তা নিয়ে কথা বলতে নারাজ তিনি। তামিমর ব্যাখ্যা, ‘এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করাটা এখনই ঠিক হবে না। খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে তাহলে।’

আগের সাকিবের সাথে তিন নম্বরে ব্যাট করা সাকিবের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের পার্থক্য কী? তামিমের ব্যাখ্যা, ‘সাকিবের সাথে কমবেশি হলেও আমি ব্যাটিং করেছি আগে। ওয়ানডাউনে সাকিবের সাথে তেমন কোন পার্থক্য চোখে পড়েনি। তিনে ব্যাট করা ওর জন্য একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। সে ভালই খেলছে।’

দুই বন্ধুর জুটি কেমন হতে পারে? এমন প্রশ্ন করা হলে তামিম বলেন, ‘পার্টনারশিপ ওরকম কিছু না। আমি যখন স্ট্রাইকে থাকি আমার দায়িত্বটা পালনের চেষ্টা করি। যখন সাকিব স্ট্রাইকে থাকে ও তার দায়িত্বটা পালনের চেষ্টা করে। যা হোক, ভাল শুরু হয়েছে। আশা করি আগামীতেও এটা অব্যাহত থাকবে।’

তাদের দু’জনার মধ্যে তিন ফরম্যাটেই টপ স্কোরার হবার জোর লড়াই ছিল। আছেও। তামিমের ধারনা, সাকিব তিন নম্বরে আসায় সে লড়াই আরও জমজমাট হবে। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘প্রতিযোগিতা জমলে ভাল। আমি যদি কাউকে হারাতে চাই, আর সেও আমাকে হারানোর চিন্তা করে, তাহলে তো ভালই। সাকিব তিনে ব্যাট করায় অনেক বেশি সময় পাবে। ওভার বেশি খেলবে। এতে করে আমার মাথায়ও ভাল খেলার চিন্তা বেশি হবে। আমিও ভাববো, সাকিব আমাকে ছুঁয়ে ফেলতে পারে। আমাকে তার ওপরে থাকতে হলে পারফরম করেই থাকতে হবে।’

সাকিবের অ্যাপ্রোচে পরিবর্তন এসেছে কি না, সে এই পজিশনে সেরা বিকল্প কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে তামিম বলেন, ‘সাকিব সাধারণতঃ চার বা পাঁচ নম্বরে আসতো। এমনও দেখা গেছে, ৪০ রানে তিন উইকেট পতনের পর সাকিব হাল ধরে রান ২০০-তে গিয়ে গেছে; কিন্তু যখন তিনে ব্যাট করবে তখন তাকে কোন সময় নাম্বার টু হিসেবেও খেলতে হতে পারে। আবার কখনো ২৫ ওভার পরেও নামার সুযোগ আসতে পারে। সাকিব খুবই স্মার্ট ক্রিকেটার। আমি বলতে পারি সে সামর্থ্য রাখে ভাল করার। সে জানে কখন, কোথায় কি করতে হবে! তবে তিন নম্বরে সে এখনই পারফেক্ট কি না! সে সম্পর্কে এখনই শেষ কথা বলার সময় আসেনি।’

এআরবি/আইএইচএস/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।