শেরে বাংলার কারিগর সেই খোকন-বেলাল রয়ে গেলেন অন্তরালে

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:৩৭ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮
বদিউল আলম খোকন

শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের শততম ম্যাচে মাশরাফি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন মাঠকর্মী মতিকে নিয়ে। খুব লাগলো বিষয়টা দেখে। যাদের নিজ হাতে গড়া হোম অব ক্রিকেট এখন শুধু দেশের ক্রিকেটের এক নম্বর ভেন্যুই নয়, সারা বছর অনুশীলন আর ক্রিকেট চর্চারও মূল ক্ষেত্র। দেশের ক্রিকেটের প্রধান সেনাপতি মাশরাফি সেই মাঠকর্মীর সম্মুখসারির একজনকে জনসমক্ষে অভিনন্দনে সিক্ত করলেন।

তা প্রশংসা পাবার মতোই। এতে শুধু মাঠকর্মী মতি মূল্যায়িতই হননি, তার কাজের বড় পুরস্কারও পেয়েছেন। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামকে ফুটবল মাঠ থেকে ক্রিকেট ভেন্যুতে রূপান্তরের কাজে যাদের মেধা, শ্রম ও ঘামস ঝরেছে- মতি তাদের অন্যতম।

আজ সেই মাঠের শততম ম্যাচে মাঠকর্মী মতি পেলেন এক যুগ ধরে কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি। একজন মাঠকর্মী, নিজ হাতে মাঠের পরিচর্যা করে, রোলার চালিয়ে, মাঠে ও উইকেটে পানি ঢেলে আর ঘাস ছেঁটে, আগাছা পরিষ্কার করেও যে জাতীয় দলের অধিনায়কের প্রশংসাধন্য হতে পারেন- মতি তার জ্বলন্ত নজির।

কিন্তু এর বাইরেও কথা আছে। মতির সহকারী ছিলেন জসিম। মাঠকর্মী হিসেবে জসিমও দারুণ চৌকস ছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট মাঠ ও ঘাসের সাথে যাদের নিবিড় সম্পর্ক তাদের জানা মাঠকর্মী হিসেবে মতি আর জসিমই ফ্রন্টলাইনার। জসিম আগেই সিঙ্গাপুর চলে গেছেন কিউরেটর হয়ে। এখন ব্রুনেইতে কিউরেটরের চাকরি করেন জসিম।

মতি দেশেই আছেন। এখনো শেরে বাংলার প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে। ‘রোম নগরী যেমন একদিনে গড়ে ওঠেনি’, তেমনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম থেকে ক্রিকেটের শেরে বাংলায় আসা এবং মিরপুরের এই মাঠের উইকেট ও আউটফিল্ডও একদিনে তৈরি হয়নি। অনেক মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই মাঠ।

যার প্রথম কিউরেটর বদিউল আলম খোকন আর শফিউল আলম বেলাল। ২০০৫ সালের শুরুতে এই শেরে বাংলার মাঠকে ক্রিকেট উপযোগী করার কাজ যখন শুরু হয়, তখন থেকে মূল মাঠ তৈরির সময় পর্যন্ত এই স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর ছিলেন বদিউল আলম খোকন। সাথে শফিউল আলম বেলাল। আর পিচ তৈরির কাজ করে যান অজি কিউরেটর রিচার্ড উইন্টার।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যে সিরিজ দিয়ে শুরু হয় ক্রিকেট ভেন্যু শেরে বাংলার যাত্রা- তখন কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেলাল। আজ সেই শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শততম ওয়ানডে ম্যাচ- খোকন আর বেলাল অভিনন্দন দাবি করতেই পারেন। তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা যেতেই পারে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- এমন ঐতিহাসিক দিনে তারা থেকে গেলেন অন্তরালে। কী হতো তাদের দুজনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করলে? তারা তো আর কেউ দেশের বাইরে থাকেন না। বেলাল এখন ফতুল্লা স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর। আর এই শেরে বাংলা মাঠের সাবেক প্রধান কিউরেটর বদিউল আলম খোকন এখন এক মোটর গ্যারেজের মালিক।

তাদের কথা কেউ বললো না? তারা থেকে গেলেন নীরবে-নিভৃতে।

এআরবি/আইএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।