কুয়াশা ভেজা আবহাওয়ায় কী হবে টাইগারদের কৌশল!

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৪৫ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৮

গত জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত সব কিছুই ঠিক ছিল। যুক্তরাজ্যে বসা বিশ্ব ক্রিকেটের ওই বড় মঞ্চে সেমিফাইনালে পৌঁছে বড় দলের খাতায় নামটা আরও প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছিল টাইগাররা।

কিন্তু অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরটাই সব ওলট-পালট করে দিয়েছে। দুর্দান্ত-দুর্দমনীয় টাইগাররা হঠাৎ আকাশ থেকে মাটিতে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরেছে মাশরাফির দল। দুই ম্যাচের টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও চরমভাবে পর্যদুস্ত ও নাকাল হতে হয়েছে তাদের।

এরপর বিপিএল শেষে ঘরের মাঠে ত্রি-দেশীয় সিরিজ। কয়েকটি বিশেষ কারণে এবারের ত্রি-দেশীয় ক্রিকেটে সাফল্য জরুরী টাইগারদের। প্রথম কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে শেষ সিরিজের বিপর্যয় কাটিয়ে আবার আলোয় ফেরা। দ্বিতীয়তঃ ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে সাফল্য অব্যাহত রাখা। আর সর্বোপরি কোচ চন্ডিকা হাথুুরুসিংহেকে একটা বড় জবাব দেয়া- সব মিলিয়ে একটা অন্যরকম চ্যালেঞ্জ টাইগারদের সামনে।

সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আবার প্রচন্ড শীত, কনকনে বাতাস আর ভেজা আবহাওয়া বাঁধা হবেনা তো? এমন প্রশ্ন অনেকেরই মনে। তাদের জন্য খবর, সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার যথাযথ প্রস্তুতিও চলছে। আবহাওয়া আর কন্ডিশনের কথা চিন্তা করেই অনুশীলনে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য।

গত চারদিন ধরে অনুশীলন হচ্ছে বিকেলে। চলছে সন্ধ্যা ছয়টা-সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত। ব্যাটিং-বোলিং ও ফিল্ডিং-ক্যাচিং প্র্যাকটিস হচ্ছে ফ্লাডলাইটের আলোয়। আগামীকাল ১১জুন (বৃহস্পতিবার) অবধি বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তই চলবে অনুশীলন।

কাল জিম্বাবুয়ে আসবে। আর ১৩ জানুয়ারি লঙ্কানরাও এসে পড়বে। তিন দলের পৃথক প্র্যাকটিস সিডিউলে আর টানা ফ্লাডলাইটের অনুশীলনের সুযোগ থাকবে না, তাই আগে-ভাগে দিবা রাত্রির কন্ডিশনেই নিজেদের প্রস্তুত করছে টাইগাররা- জাতীয় দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন জাগো নিউজকে এমনটাই জানিয়েছেন।

টেকনিক্যাল ডিরেক্টর কতগুলো টেকনিক্যাল বিষয়ের অবতারনা করে বলেন, ‘প্রচন্ড শীত। ধারণা করা হচ্ছে, এমন তীব্র শীতের মধ্যেই তিনজাতি আসর শুরু হবে। খেলা দুপুর ১২টায় শুরু হলেও শেষ হবে গিয়ে সন্ধ্যারও দুই থেকে সোয়া দুই ঘন্টা পরে। বেলা চারটার দিকে আলো কমে যায় অনেক। ঠান্ডাও জেঁকে বসে। ঘন কুয়াশা নেমে আসে। শেরে বাংলার আউটফিল্ড যায় ভিজে। আমরা সব কিছু মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রথমে বিকেল নামতেই তাপমাত্রা কমে কেমন রুপ নিচ্ছে, তা খুঁটিয়ে দেখেছি। সন্ধ্যার পর ভেজা আউটফিল্ড, কনকনে ঠান্ডা বাতাস ও হিম-শীতল পরিবেশে আউটফিল্ড আর উইকেটের আচরণ কেমন হয়? তা নীবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেই আমরা প্রস্তুতি কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

খালেদ মাহমুদ সুজনের উপলব্ধি, এখন যেমন শীত আর কুয়াশা, তা অব্যাহত থাকলে দল সাজাতে হবে ভেবে চিন্তে। টস জিতে আগে ব্যাটিং না বোলিং? সে সিদ্ধান্তও নেবার আগে ভাবতে হবে দশবার। কেন?

তার জবাবে অভিজ্ঞ যোদ্ধা খালেদ মাহমুদ জাগো নিউজকে জানান, বেলা বারোটার সাথে বিকেল পাঁচটার পরের আবহাওয়া, মাঠের পরিবেশ, আউটফিল্ড আর উইকেটের চেহারার মিল খুব কম। প্রায় সবই পাল্টে যায়। ঠান্ডা জেঁকে বসে। কুয়াশা ঢাকা ভেজা আবহাওয়া, কনকনে বাতাস- সব মিলে হিমশীতল পরিবেশ। এটা সচরাচর থাকে না। তাই তা মোকাবিলা একদমই সহজ নয়। এর জন্য যথাযথ প্রস্তুতি দরকার।

সকালে বেশিক্ষণ কুয়াশায় চারিদিক ঢেকে না থাকলে যদি নয়টার দিকে সূর্য উঠে যায়, তাহলে বেলা ১২টায় দিনের আলোয় যখন খেলা শুরু হবে, তখন বল ম্যুভ করার সম্ভাবনা কমে যাবে অনেকটাই; কিন্তু কুয়াশার কারণে সূর্য দেরিতে উঠলে অবশ্যই হয়ত ময়েশ্চারের জন্য পেসারদের বল সুইং করতে পারে। আবার সন্ধ্যার পর শিশির পড়তে শুরু করলে আউটফিল্ড যাবে ভিজে। বলও ভিজবে। তখন ভেজা উইকেটে ব্যাটিং করতে গেলে দেখা যাবে বল স্কিড করছে।

আবার ভেজা বল স্পিনারদের গ্রিপ করায়ও অনেক সমস্যা হয়। এছাড়া কুয়াশা ও ভেজা আবহাওয়ায় ফিল্ডিং-ক্যাচিংও সহজ নয়। ফিল্ডিং যেমন তেমন, ঘন কুয়াশা আর ভেজা আবহাওয়ায় হাই ক্যাচ ধরা কঠিন। এমন আবহাওয়া আর কনকনে বাতাসে কখনো কখনো চোখে পানি চলে আসে। তাতে বলের দিকে শেষ পর্যন্ত নজর রাখাও কঠিন। আমাদের ক্রিকেটাররা এসব পরিস্থিতিতে অতটা অভ্যস্ত নয়। তাই তাদের সন্ধ্যার পর ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং আর ক্যাচিং প্র্যাকটিস করানো হচ্ছে। যা চলবে আগামীকাল পর্যন্ত।

ভেজা আবহাওয়ায় হাই ক্যাচের প্রথম দুই দিন বেশিরভাগ ক্রিকেটারই ভাল করতে পারেননি। ভেজা আবহাওয়ায় শিশির সিক্ত বল আকাশে থাকার পর তালুবন্দী করতে গিয়ে অনেকেরই সমস্যা হয়েছে। খালেদ মাহমুদ সুজন জানান, আশা করছি আর দুই দিন প্র্যাকটিস করলে সে অনভ্যস্ততা কাটিয়ে ওঠা যাবে।

অভিজ্ঞ খালেদ মাহমুদ সুজনের কথায় আরও কিছু অন্তর্নিহিত বিষয় উন্মোচিত হয়েছে। প্রথম কথা হলো, কুয়াশা সিক্ত ভেজা আবহাওয়ায় ব্যাটিং করা কঠিন হয়ে পড়ছে। মানে পরের সেশনে ব্যাটিংয়ে আছে বাড়তি ঝুঁকি। বেশি দুর যেতে হবে না, গত ৬ জানুয়ারি প্র্যাকটিস ম্যাচের স্কোরলাইনই বলে দেবে ঘটনা সত্য। শেরেবাংলায় প্রচন্ড শীত, ঘন কুয়াশা আর ভেজা আবহাওয়ায় পরে ব্যাটিংয়ে আছে ঝক্কি।

৬ জানুয়ারি প্রস্তুতি ম্যাচে সাকিবের দলের ৩২০ রানই তার প্রমাণ। দিনের আলোয় তামিম (১০৪) আর মাহমুদউল্লাহ (৮৭) ও আবুল হাসান রাজু ইচ্ছেমত ব্যাট করলেও সন্ধ্যার পর পেসারদেও দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় পরে আর ব্যাটসম্যানদের স্বচ্ছন্দে খেলা সম্ভব হয়নি। কারণ সন্ধ্যার পর বল ভিজে স্কিড করছে। আর তাতে ব্যাটসম্যানরা বাড়তি পেসে বিভ্রান্ত হতে পারেন। আবার পরের সেশনে শিশির ভেজা বল গ্রিপিংয়ে বড় বাধা স্পিনারদের। ফিল্ডিং-ক্যাচিংয়েও আছে সমস্যা। সব মিলিয়ে তীব্র শীত, কুয়াশা, ভেজা আবহাওয়াও কিন্তু চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। একভাবে চিন্তা করে কৌশল নির্ধারনের সুযোগ কম। সন্ধ্যার আগে ব্যাট করলে সমস্যা কম। আর সন্ধ্যার পরে মানে দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিং করা খানিকটা ঝুঁকির। আবার সন্ধ্যার পর বোলিং করলে স্পিনারদের সমস্যা। এসবই ভাবতে হচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত টস জিতে বোলিং না ব্যাটিং আগে? তা নিয়েও চলছে রাজ্যের জল্পনা কল্পনা।

তবে টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা আগে ব্যাট করা। সে ক্ষেত্রে পরে বোলিংয়ের জন্য বাড়তি স্পিনার কমিয়ে বাড়তি পেসার খেলানোর কথাই ভাবা হচ্ছে। এখন দেখা যাক অভিজ্ঞ খালেদ মাহমুদ সুজন আর দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম ও সেরা অধিনায়ক মাশরাফি এ অনভ্যস্ত আবহাওয়ায় কেমন কৌশল অবলম্বন করেন? দল কেমন হয়?

যাই হোক না কেন, কঠিন সত্য হলো- মাঠের লড়াইয়ে জিম্বাবুয়ে আর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে তিনজাতি আসরের শিরোপা জিততে হলে সবার আগে এই আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।