কেপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত মহারণ

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১৫ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০১৮

যুদ্ধের দামামা বহু আগেই বেজে উঠেছে। দু’দল রণহুঙ্কার দিয়ে আসছিল এতদিন। ব্যাটল ফিল্ড, তথা যুদ্ধের ময়দান কেমন হবে তা নিয়েও বিস্তর কথা উঠেছে। তবে নিউল্যান্ডসের ময়দানে যে ২২ গজে রণডঙ্কা বেজে উঠবে, তাতে ভারতের জন্য আশার কিছু নেই। সবুজের হাতছানি দিচ্ছে বিরাট কোহলিদের সামনে। ফিল্যান্ডার, রাবাদা, কিংবা মরনে মর্কেলরা যে এখানে আগুনের গোলা ছুঁড়বেন কোহলি, বিজয়, পুজারাদের সামনে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

তবুও মহারণে প্রস্তুত ভারত। স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার মোকাবেলা করার জন্য। গত ২৫ বছরে এই দেশটি থেকে তো মাত্র দুটি টেস্ট জিততে পেরেছিল ভারতীয়রা। সিরিজ জয়ের কোনো রেকর্ড নেই। এবার কী বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারত পারবে নেলসন মেন্ডেলার দেশ জয় করে আসতে? কেপ টাউনের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা হলেও, বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট।

মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে নেলসন মেন্ডেলার বেশ বন্ধুত্ব ছিল। নিপিড়িত মানুষের মুক্তির জন্য নিরলস কাজ করে দিয়েছেন এই দুই বিশ্বনেতা। পৃথিবীর দুই প্রান্তের এই দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যেও বন্ধুত্বের অভাব নেই। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ তো এবি ডি ভিলিয়ার্স আর বিরাট কোহলি। আইপিএলে তো এই দু’জন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেন, গত বেশ কয়েকবছর।

আইপিএলে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের স্বস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব বৃদ্ধিই করেছে। কিন্তু নিউল্যান্ডসে কোহলি-ডু প্লেসি টসের কয়েন নিক্ষেপ করার পর থেকে বাকি ৫দিন তারা কঠিনতম প্রতিপক্ষ। প্রাণপন দিয়ে তারা লড়াই করবে নিজ নিজ দলকে জেতানোর জন্য। এখানে বন্ধুত্বের আর কোনো পরিচয় থাকবে না। সৌহার্দ্য হয়তো থাকবে, ক্রিকেট গেম অব স্পিরিট বলে। কিন্তু কেউ কাউকে এখানে এক বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেবে না।

বন্ধুত্বের আবাহন ভেঙে দুই দলই নিজ নিজ রণকৌশল সাজানোয় ব্যস্ত। কেপ টাউনকে বলা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং স্বর্গ। এখানে ৪০০-৫০০ রান অনায়াসেই ওঠে। পেসাররাও যে বাউন্স পান না, তা নয়। তবে বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়ার মত বাউন্স নয় এগুলো; কিন্তু এবার ট্র্যাডিশন ভেঙে স্মপূর্ণ নতুন এইকেট তৈরি করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অর্ডার দিয়ে নতুন ঘাস আনিয়ে লাগানো হয়েছে। ঘাসের আধিক্যে প্রোটিয়া পেসারদের তোপের মুখে নাভিশ্বাস উঠবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের, এমনটাই আপাতত ভাবা হচ্ছে।

প্রোটিয়াদের মনে অবশ্য কাজ করতে পারে ‘প্রতিশোধ’ নেশা। বছর তিনেক আগে নাগপুরের উইকেটকে স্পিনারদের খোঁয়াড় বানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আড়াই দিনে টেস্ট শেষ করার দগদগে ক্ষত তো এখনও শুকানোর নয় হাশিম আমলা, ডি ভিলিয়ার্সদের। চার টেস্টের মধ্যে ৩-০ ব্যবধানে হেরেছিল সফরকারী প্রোটিয়ারা। স্বাগতিক দেশ বলে নিজেদের ইচ্ছামত উইকেট তৈরির স্বাধীনতা রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা কী এই স্বাধীনতার সুফল এমনি এমনি ছেড়ে দেবে!

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে কিন্তু ভারত নয়, আসল চ্যালেঞ্জ বিরাট কোহলি। ভারত যে টানা ৯টি সিরিজ জিতেছে, এর মধ্যে আসল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি নিজে অন্য স্তরে পৌঁছে যাওয়া এবং তার উজ্জীবিত নেতৃত্ব। এ কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা এবার বেশ সতর্ক। তাদের পরিকল্পনা, শুরুতেই যদি কোহলিকে ধাক্কা দেওয়া যায় তাহলে ভারতকে মানসিকভাবে চুরমার করে দেওয়া সম্ভব৷

মূলতঃ এ কারণেই কেপ টাউনের নিউল্যান্ডসে উইকেটকে করে তোলা হচ্ছে এতটা সবুজ। আরেকটি মারাত্মক তথ্য হচ্ছে, শেষবার নিউল্যান্ডসে এমন উইকেট হয়েছিল ২০১২ সালে। সেবার এই মাঠে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়েছিল মাত্র ৪৭ রানে।

নিউল্যান্ডস হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা টেস্ট পেসার ভারনন ফিল্যান্ডারের ঘরের মাঠ। কেপ টাউনের ঘরের ছেলে তিনি। ফ্যাফ ডু প্লেসির আসল তুরুপের তাস হচ্ছেন তিনি। সেই ফিল্যান্ডার কিন্তু ভারতকে দারুণ হুমকি দিয়ে রাখলেন। কোহলিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ঘরের মাঠেই বেশির ভাগ ম্যাচ খেলে জিতে এসেছে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকায় কিন্তু একদম আলাদা খেলা হবে। প্রথম টেস্টে তারা উৎরাতে পারে কি না, সেটাই আগে দেখুন।’

কোহলিদের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশ কেমন হতে পারে? ফিল্যান্ডার জানিয়ে দিলেন, সেটা ম্যাচের দিন উইকেট দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার উইকেট ও আবহাওয়া দেখেই দল চূড়ান্ত করা হবে। সবুজ উইকেটের সঙ্গে মেঘলা আবহাওয়া থাকলে আমরা চার পেসারেও খেলতে পারি। তবে গত ১৮ থেকে ২৪ মাস আমরা তিন পেসার ও এক স্পিনারে খেলে ভাল ফল পেয়েছি।’

ঘুরে-ফিরে আসলো ভারতে ৩-০ ব্যবধানে হেরে যাওয়ার কথা। ফিল্যান্ডার সেটা ভুলতে পারেননি এখনও। তিনি বলেন, ‘এখানে সবুজ উইকেটে বাউন্সের চেয়েও বল সুইং করবে বেশি। তবে যাই হোক, দিন শেষে ২০টা উইকেট ফেলাই আমাদের লক্ষ্য। সেরা টেস্ট দল হতে গেলে প্রত্যেক সিরিজেই আমাদের ভাল খেলতে হবে। ওদের (ভারত) বিরুদ্ধে ২০১৫ সিরিজটা বেশ হতাশ করেছিল আমাদের। তবে এবার সেরা খেলা খেলতে চাই। ঘরের মাঠে আমাদের ভাল খেলতেই হবে।’

তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে পাল্টা হুমকি দিয়ে রাখলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান মুরালি বিজয়। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, প্রোটিয়া পেসারদের বাউন্স সামলানো হবে তাদের জন্য সহজ। মুরালির কথায় ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কিত মনে হলো না মোটেও। বরং আত্মবিশ্বাসী দেখা যাচ্ছে।

নিজেদের সেরা খেলাটা খেলার পাশাপাশি সবুজ উইকেট তাদের জন্য সহজ হবে বলেই মনে করেন মুরালি বিজয়। তিনি বলেন, ‘ওরা ঠিক জায়গায় বল করলে তার যোগ্য জবাব ওদের দিতেই হবে। দেশের জন্য আমাকে আমার সেরা খেলাই খেলতে হবে। আর উইকেট নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে। উইকেট তো বেশ সবুজ। জানি না প্রথম দিন কেমন যাবে। তবে ওপেনারদের কাছে সুইংয়ের চেয়ে বাউন্স সামলানো সোজা। আমার কাছে তো বটেই। কারণ আমি বাউন্সটাই ভাল সামলাই।’

তবে নিউল্যান্ডসের মহারণে মাঠে নামার আগে দু’দলই একাদশ নির্বাচন নিয়ে চিন্তায়। দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা পেসার ডেল স্টেইন খেলতে পারবেন কি না এখনও নিশ্চিত নয়। কাঁধের চোটের কারণে ১৪ মাস মাঠের বাইরে থাকার পর তাকে হুট করেই মাঠে নামিয়ে দেয়া হবে কি না তা নিয়ে জ্বল্পনা প্রোটিয়া শিবিরে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম কিন্তু স্টেইন। তিনি দলে থাকা মানে কোহলিদের ওপর মানসিক চাপ বাড়া।

অন্যদিকে ভারতীয় দলও চিন্তায় রয়েছে দু’জনকে নিয়ে। শিখর ধাওয়ান এবং রবীন্দ্র জাদেজা। ধাওয়ানকে খোঁড়াতে দেখা যাচ্ছিল গত দু’তিনদিন। যদিও ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট সূত্র জানিয়েছে, ধাওয়ান পুরোপুরি সুস্থ এবং ফিট। অন্যদিকে রবীন্দ্র জাদেজা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে খেলতে পারবেন কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। আসলে, শুক্রবার সকালে টস হওয়ার সময়ই যখন একাদশ ঘোষণা করা হবে, তখন জানা যাবে আসলে দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারত মহাযুদ্ধে লড়াই করছেন কারা কারা!

আইএইচএস/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।