ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের হারানো জৌলুস ফেরাতে চান কাজী ইনাম

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:৩৩ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ফুটবলের মত ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটও এক সময় অনেক সাড়া জাগিয়েছে। ফর্মের চুড়োয় থাকা সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্টবোলার ওয়াসিম আকরাম, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের সফলতম সেনাপতি অর্জনা রানাতুঙ্গা, বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম পিঞ্চ হিটার সনাথ জয়সুরিয়া আর ইংলিশ ক্রিকেটে সীমিত ওভারের ফরম্যাটের স্পেশালিস্ট নেইল ফেয়ারব্রাদারের মত বড় তারকা এক সময় খেলে গেছেন ঢাকা লিগে।

এছাড়া ভারতের রমন লাম্বা, অশোক মালহোত্রা, সামরাসেকেরা, গাস লোগি, হিথ স্ট্রিকের মত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিচিত মুখও ছিলেন এক সময় ঢাকা লিগের নিয়মিত পারফরমার।

শুধু নামী-দামি আন্তর্জাতিক তারকার অংশগ্রহণের কারণেই নয়, এক সময় ঢাকা লিগ ছিল দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশ্ব ক্লাব ক্রিকেটের অন্যতম আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসর। কিন্তু সময়ের প্রবাহতায় সেই ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট দিনকে দিন জৌলুস হারিয়েছে। আকর্ষণ , প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর উত্তেজনাও গেছে কমে।

অসময়ে আয়োজন, রাজধানীর বাইরে খেলা দেয়া, যেখানে ঢাকার দর্শকের পক্ষে সকালে গিয়ে খেলা দেখে সন্ধ্যার আগে ফেরা প্রায় অসম্ভব এবং দূর্বল ও পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং-সব মিলে দেশের ক্রিকেটের একমাত্র ৫০ ওভারের লিগটির দর্শকপ্রিয়তাও হ্রাস পেয়েছে।

অথচ দেশের ক্রিকেটের আলোকে ঢাকার প্রিমিয়ার লিগের রয়েছে বিরাট গুরুত্ব। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে দুটি আসর (জাতীয় লিগ ও বিসিএল ) থাকলেও ৫০ ওভারের ফরম্যাটে দেশের একমাত্র আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। আর সংখ্যা তত্ত্বে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ক্রিকেটারের অংশ গ্রহণেও এক নম্বর লিগ। তারচেয়ে বড় কথা, জাতীয় দলের বাইরে অন্তত ১০০ ক্রিকেটারের রুটি রুজি এই প্রিমিয়ার লিগ।

এমন যে লিগের গুরুত্ব, যে আসর খেলে খেলেই ৫০ ওভারের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট অঙ্গনে পা রাখছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, সেই আসর সময়ের প্রবাহতায় গুরুত্ব হারিয়েছে অনেক। আকর্ষণ, জৌলুসও অনেক কমে ফিঁকে হয়ে গেছে।

কিন্তু কঠিন সত্য হলো , একদিনের ক্রিকেটে জাতীয় দলের পাইপ লাইন ঠিক রাখতে প্রিমিয়ার লিগের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ৫০ ওভারের ফরম্যাটে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে হাত পাকানোরও একমাত্র আসর এটা। তা দূর্বল , ফিঁকে আর আকর্ষণহীন হবার অর্থ-বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় ক্ষতি।

আশার কথা, দেরিতে হলেও সেই অনুভব, বোধ ও উপলব্ধিটা এসেছে বিসিবির। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট যে দেশের ক্রিকেটের প্রাণভোমরা, দেশের ক্রিকেটের কল্যাণ ও বৃহত্তর স্বার্থেই যে আবার প্রিমিয়ার লিগে আসরের হারানো আকর্ষণ , জৌলুস ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানো খুব জরুরী। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের আয়োজক, ব্যবস্থাপক সংগঠন, সিসিডিএমের নতুন চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ তেমন চিন্তাই করছেন। তার কথা শুনে মনে হলো , তিনি যে কোন মূল্যে আবার ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের হারানো জৌলুস ও আকর্ষণ ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।

আজ দুপুরে ধানমন্ডিতে তার নিজের অফিসে সাংবাদিকদের সাথে ঘরোয়া আলোচনায় প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে অনেক খোলামেলা কথা বার্তা বলেছেন সিসিডিএম নতুন চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ।

কাজী ইনামের প্রথম কথা, বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঢাকা লিগের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রথমতঃ এটাই দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে একমাত্র ৫০ ওভারের প্রতিযোগিতামূলক আসর। যা শতাধিক ক্রিকেটারের রুটি রুজি। সবচেয়ে বড় কথা, ক্রিকেটের প্রচার-প্রসার ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে যে লিগের রয়েছে অসামান্য ভূমিকা, সে আসরের আকর্ষণ ফিরেয়ে আনতে না পারলে এক সময় জাতীয় দলের পাইপ লাইনে কোয়ালিটি পারফরমার কমে যাবে।

আর জাতীয় দলের বাইরে একটা বড় অংশ আর্থিক দিক থেকে অনেক ক্ষতির সন্মুখীন হবে। তাই সব বিচার বিবেচনায় ঢাকা লিগের সেই হারানো জৌলুস বাড়াতে সচেষ্ট নতুন সিসিডিএম সভাপতি কাজী ইনাম।

তার অনুভব, 'সবার আগে দরকার দর্শক ফিরিয়ে আনা। আমাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো মাঠে দর্শক ফিরিয়ে আনা। সে লক্ষ্যেই আমরা প্রিমিয়ার লিগকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চাই। তাই আমরা সঠিক সময়ে লিগ আয়োজনের চিন্তা ভাবনা করছি। আর আবার ঢাকাবাসী যাতে রাজধানীতে প্রিমিয়ার লিগ দেখতে পারেন, সে চেষ্টাই করা হচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস , রাজধানীতে আরও বেশী করে প্রিমিয়ার লিগের খেলা আয়োজন আর টিভিতে খেলা সম্প্রচারের ব্যবস্থা করতে পারলে আবার দর্শক ফিরে আসবে।’

সিসিডিএম প্রধান আরও বলেন, 'যেহেতু প্রিমিয়ার লিগ দেশের ৫০ ওভারের ফরম্যাটের একমাত্র আসর। যদি আমরা ৫০ ওভারের লিগকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি, প্রিমিয়ার লিগের জৌলুস যদি বেড়ে যায় , তাহলে আপনা আপনি দেখবেন স্পন্সর বাড়বে। তাতে শুধু যে প্রিমিয়ার লিগের মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং বাড়বে, তা নয়। ক্লাবগুলোও বেশী করে স্পন্সর পাবে।’

এআরবি/এমএমআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।