বিদেশি বিগ হিটারদের হাতেই ফাইনালের চাবিকাঠি!
বিপিএলের ফাইনাল কতটা উপভোগ্য হবে? টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়েই কী তবে শেষ হবে ম্যাচটি! কী মনে করছেন ক্রিকেট বোদ্ধারা! বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতার জগতে উইকিপিডিয়া হিসেবে ধরা হয় আরিফুর রহমান বাবুকে। লেখনির জগত কিংবা টিভি টক শো, ক্রিকেট নিয়ে তার বিশ্লেষণ সর্বজনগ্রাহ্য।
সেই আরিফুর রহমান বাবুর মতে, বিপিএলে ফাইনাল কতটা উপভোগ্য হবে, তা পুরোপুরিই নির্ভর করছে বিদেশি ক্রিকেটারদের ওপর। পুরো বিপিএলের অধিকাংশ ম্যাচেই কিন্তু ম্যাচের চাবিকাঠি ছিল বিদেশিদের হাতে। যে দুটি দল ফাইনালে উঠে এসেছে, তাদের এত দুর পর্যন্ত আসার পেছনে কিন্তু বিদেশিদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। ঢাকার এভিন লুইস, জো ড্যানলি, কাইরন পোলার্ড কিংবা শহিদ আফ্রিদি- এরাই মূলতঃ এই দলটির মূল চালিকাশক্তি।
আর রংপুরের কথা বললে তো নিশ্চিত করেই বলা যায়, পুরোপুরি বিদেশি নির্ভর। প্লে-অফের দুটি ম্যাচেই বিদেশিদের ব্যাটে ভর করে বেঁচে গিয়েছে তারা। প্রথম ম্যাচে গেইল, পরের ম্যাচে জনসন চার্লস এবং ব্রেন্ডন ম্যাককালামই রংপুরকে তুলে দিয়েছেন ফাইনালে। সুতরাং, পুরো টুর্নামেন্টের মত ফাইনালেও যদি এই বিদেশি ক্রিকেটাররা জ্বলে ওঠে, তাহলে ম্যাচটা নিশ্চিত উপভোগ্য হওয়ার কথা।
তবে ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফো জানিয়েছে, ফাইনালটি পুরোপুরি একপেশে হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। এর পেছনে যে যুক্তি তারা তুলে ধরেছে, তাতে উঠে আসছে বিদেশি ক্রিকেটারদের কথা। ক্রিকইনফোর যুক্তি হচ্ছে, যদিও ঢাকা ডায়নামাইটসের কোনো একটি ডিপার্টমেন্ট, সেটা হতে পারে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান কিংবা স্পিন বোলিং- পুরোপুরি ফর্মে চলে আসে, তাহলে নিশ্চিত রংপুর রাইডার্সকে ফাইনালে সংগ্রাম করতে হবে।
অন্যদিকে ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কিংবা জনসন চার্লস- এই তিনজন প্লে অফে ব্যাট হাতে যেভাবে জ্বলে উঠেছেন, যেভাবে একক নৈপুন্যে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দিয়েছেন ঠিক তেমন যদি ফাইনালেও একজন কিংবা দু’জন ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন, তাহলে ঢাকা ডায়নামাইটসের তাদের সামনে দাঁড়ানোরই সুযোগ থাকবে না।
ঢাকার চার বিদেশি ব্যাটসম্যান এভিন লুইস, জো ড্যানলি, শহিদ আফ্রিদি এবং সুনিল নারিন- টুর্নামেন্ট জুড়ে মেরেছেন মোট ৫৬টি ছক্কা। চারজনের মোট ব্যাটিংয়ের স্ট্রাইকরেট ১৪৪.৬১ করে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর জ্বলে উঠেছে তাদের ব্যাট। একই সঙ্গে ঢাকার নিয়মিত তিনজনের স্পিন অ্যাটাকের অন্যতম হলেন আফ্রিদি এবং নারিন। সঙ্গে তো রয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এবং দলীয় অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। পুরো টুর্নামেন্টে এই তিন স্পিনার ছিলেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ওপর খুবেই নির্দয়। সাকিব আল হাসান টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ (২১টি) উইকেশিকারী। আফ্রিদি দু’বার নিয়েছেন চারটি করে উইকেট। সুনিল নারিন হচ্ছেন সবচেয়ে কম ইকনোমি রেটে রান দেয়া একজন বোলার।
রংপুর রাইডার্সের তিন অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবং জনসন চার্লস- একেবারে সময়মত জ্বলে উঠেছেন। যখন প্রয়োজন তখনই জ্বলে উঠলো তাদের ব্যাট। দুই ক্যারিবিয়ান তো রীতিমত সেঞ্চুরিই মেরে দিলেন। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম খেললেন ৪৬ বলে ৭৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। যদিও গোড়ালির ইনজুরিতে হালকা ভুগছেন গেইল। তবুও ফাইনালে ব্যাট হাতে নামবেন এই ব্যাটিং দানব।
রংপুরকে এতদুর টেনে আনার পেছনে আরেকজনের অবদান কিন্তু সবচেয়ে বেশি। তিনি ইংলিশ ক্রিকেটার রবি বোপারা। টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান কিন্তু এসেছে তার ব্যাট থেকে। ১৪ ম্যাচ খেলে ৩৬৫ রান করেছেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে ২টি।
আরও একটি লড়াই এই দু’দলের অভ্যন্তরে হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ক্যারিবিয়ানদের সঙ্গে ক্যারিবিয়ানদের। ঢাকা এবং রংপুর- দুই দলেরই মূল চালিকাশক্তি কিন্তু ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা। ঢাকার ৫ বিদেশির মধ্যে তিনজনই ক্যারিবিয়ান। এভিন লুইস, কাইরন পোলার্ড এবং সুনিল নারিন। অন্যদিকে রংপুরের ৫ বিদেশির ২জনই ক্যারিবিয়ান। ক্রিস গেইল এবং জনসন চার্লস। ফাইনালের মধ্যে এই ৫ ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত লড়াইও জমে ওঠার সম্ভাবনা বেশ।
আইএইচএস/আইআই