ওয়াকার ইউনুসের রিভার্স সুইং দেখতে দেখতে শিখেছি

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ এএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ধূমকেতুর মত তার উত্থান। বলা হয়, পাকিস্তান হলো পেস বোলার প্রসবিনি একটি দেশ। অলিতে গলিতে জন্ম নেয় কত-শত পেসার। হাসান আলি মাত্র ২১ বছর বয়সেই যেভাবে বিশ্ব ক্রিকেটের নজর কেড়ে নিলেন, সেটা রীতিমত অবিশ্বাস্য। ক্যারিয়ারের শুরুতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মত টুর্নামেন্টে তার বোলিংয়ের সামনে উড়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের মত শক্তিশালী দেশ।

অভিষেকের প্রথম বছরই ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি। সেই হাসান আলি এবার এসেছেন বাংলাদেশে প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলতে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে মাঠে নেমেই চমক দেখালেন। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে একাই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।

কুমিল্লায় যোগ দেয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিটি জয়েই তিনি অবদান রাখছেন। সেই হাসান আলির মুখোমুখি হয়েছিলো জাগো নিউজ২৪.কম। জাগো নিউজের বিশেষ সংবাদদাতা আরিফুর রহমান বাবু কথা বলেছেন হাসান আলির উঠে আসা, তার আদর্শ, ক্যারিয়ার, ভবিষ্যতের লক্ষ্য-অনেক বিষয়েই। দুই পর্বে এই সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হচ্ছে জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

hasan

জাগো নিউজ : আপনার আদর্শ, রোল মডেল কে? কাকে দেখে ক্রিকেটার বিশেষ করে ফাস্ট বোলার হবার ইচ্ছে জেগেছিল?

হাসান আলি : আসলে আমার হিরো ‘ভিকি ভাই’ (ওয়াকার উউনুস)। আমি একদম ছোটবেলায় ভিকি ভাইকে দেখে উদ্বুদ্ধ হই। তার বোলিং অ্যাকশন, বলের কাজ এবং উইকেট পাওয়ার পর তার আগ্রাসী উৎসব-আনন্দ আমাকে আকৃষ্ট করতো সব সময়। আমি সেটা দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছি।

জাগো নিউজ : উইকেট পাওয়ার আপনি যেভাবে সেলিব্রেশন করেন সেটার রহস্য কি?

হাসান আলি : খেলাতো আমি আগ্রাসন নিয়েই খেলতে চাই। সেলিব্রেশনটা মূলত দর্শক ও ভক্তদের জন্য করা। তারা গাঁটের পয়সা খরচ করে অনেক কষ্ট করে খেলা দেখতে আসেন। কেউ চাকুরি ছেড়ে আসেন। আবার কেউ লেখাপড়া ছেড়ে ক্রিকেটের টানে মাঠে চলে আসেন। তাদের আনন্দ দেবার জন্যই উইকেট পাওয়ার পর আমি একটু ভিন্ন ধরনের উৎসব করার চেষ্টা করি। বলতে পারেন দর্শকদের কথা ভেবেই আমার এ রকম ব্যতিক্রমী উৎসব-আনন্দ।

জাগো নিউজ : আপনার ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার গল্পটা যদি একটু বলেন...।

হাসান আলি : আমার বেড়ে ওঠা গুজরানওয়ালাবাদের নাদেওয়ালা বারাইচ গ্রামে এবং ক্রিকেটার হওয়ার গল্পটাও খুবই সাধারণ। পাকিস্তানের অন্য আট দশজন ক্রিকেটার যেভাবে বেড়ে ওঠেন, আমিও তাদের মত গলি-মহল্লার ক্রিকেট খেলেই বড় হয়েছি।

hasan

আমার প্রথম প্রশিক্ষক, উৎসাহদাতা আর মেন্টর যাই বলুন না কেন- সেটা আমার বড় ভাই আতাউর রহমান। তিনিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। তবে খেলেছেন মাত্র একটি ম্যাচ। তেমন সুযোগ পাননি। এরপর তার চিন্তা ছিল আমাকে প্রতিষ্ঠিত করা। তিনি আমার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। নিজে ব্যাটসম্যান ছিলেন। আর আমি বোলার। ক্যাটাগরি ভিন্ন।

আমাকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রাণপন চেষ্টা করেছেন। প্রথম রোল মডেল তো আমার ভাই। এখনো আছেন। তার হাত ধরে ক্রিকেট খেলতে খেলতে আমি ধীরে ধীরে, স্টেপ বাই স্টেপ ওপরে উঠে আসি। প্রথমে বয়স ভিত্তিক, মানে ক্লাব ক্রিকেট অনূর্ধ্ব-১৬ থেকে ১৯ দলে খেলি। তারপর জেলা ক্রিকেটে সিনিয়র দল এবং প্রাদেশিক দলের হয়ে খেলে এসেছি আজকের জায়গায়।

জাগো নিউজ : ফাস্ট বোলার হবার ইচ্ছে জাগলো কিভাবে? প্রথম কবে কোন ফাস্ট বোলারের বোলিং দেখেছিলেন?

হাসান আলি : আগেও বলেছি, আমার রোল মডেল ‘ভিকি ভাই’ (ওয়াকার ইউনুস)। শুরুতে আমি ছিলাম ব্যাটসম্যান। হাতে ব্যাট থাকতো। সহযোগিদের বলতাম আমাকে বোলিং করো। আমি ব্যাটিং করতাম। ভিকি ভাইকে দেখেই আমার প্রথম ফাস্ট বোলার হওয়ার ইচ্ছে জাগে। ১৯৯৯- ২০০০ সালে ভিকি ভাইকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং করতে দেখে আমারও ফাস্ট বোলার হওয়ার বাসনা জাগে। আমি ফাস্ট বোলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।

জাগো নিউজ : আপনাকে পেশোয়ার জালমি একটা বড় ব্রেক দিয়েছে, সে সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?

হাসান আলি : প্রতিশ্রুতিশীল ও সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার হিসেবে পেশোয়ার জালমি আমাকে ব্রেক দিয়েছে। আমার বেড়ে ওঠা ও আজকের অবস্থানে উঠে আসার পেছনে তাদেরও একটা বড় ভুমিকা আছে।

আমার সুযোগ হয় পেশোয়ার জালমির হয়ে খেলার। সেখানে আমার অধিনায়ক ছিলেন শহিদ আফ্রিদি। পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ আকরামও ছিলেন। শাহেদ ভাই আমাকে যথেষ্ঠ আত্মবিশ্বাস জুুগিয়েছেন। সেখানে শেষ তিন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাই। তেমন উইকেট না পেলেও আমার ইকোনমি খুব ভাল ছিল। জালমি ও মোহামদ আকরাম এবং আফ্রিদি ভাইয়ের ভূমিকা ছিল দারুণ।

জাগো নিউজ : ওয়াকার ইউনুসের কোন কোন দিকগুলো আপনার বেশি ভাল লাগতো, আপনি আকৃষ্ট হতেন বেশি?

হাসান আলি : ভিকি ভাইয়ের রিভার্স সুইং অমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করতো। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। তার মতো রিভার্স সুইং করার চেষ্টা করতাম। জানেন, এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের সাথে খেলার দিন সকালেও আমি ইউটিউবে ভিকি ভাইয়ের একটি বোলিং স্পেল দেখি। সেখানে তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। অবশ্য সেটা রিভার্স সুইংয়ে ছিল না। নতুন বলেই ইংলিশ ব্যাটিং তছনচ করে দিয়েছিলেন ভিকি ভাই। আমি সেটা দেখে অনুপ্রাণিত হই।

hasan

এক কথায় যদি বলতে বলেন, তাহলে বলবো ওয়াকার ইউনুসের রিভার্স সুইং আমাকে দারুণ দোলা দিত। আমি অবাক বিস্ময়ে তা দেখতাম। উদ্বেলিত হতাম। অনুপ্রাণিতও হতাম।

জাগো নিউজ : ওয়াকার ইউনুসের সাথে আপনার প্রথম সাক্ষাত কি মাঠে? না অন্য কোথাও?

হাসান আলি : না ভাই মাঠে নয়। ওয়াকার ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম দেখা হয় দুবাই বিমান বন্দরে। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে খেলে দেশে ফিরছি। তিনিও অন্য দেশ থেকে পাকিস্তান যাচ্ছিলেন। দুবাই বিমান বন্দরের লাউঞ্জে ওয়াকার ভাইকে খুব কাছ থেকে দেখি। এক ঘণ্টা ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে মূলত কথা হচ্ছিলো আমাদের বর্তমান বোলিং কোচ এবং ওয়াকার ভাইয়ের সতীর্থ আজহার মাহমুদ ভাইয়ের। তবে আমি ওই এক ঘণ্টা ওয়াকার ভাইয়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। চোখের পলক ফেলিনি। তিনি কি বলেন, কি করেন- সেগুলোই শুধু দেখেছি।

এআরবি/আইএইচএস/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।