তবু পিচ কিউরেটর গামিনির পক্ষই নিলেন মল্লিক

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গতকালকের ম্যাচে রংপুর রাইডার্স মাত্র ৯৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। আর ৯৭ রান তাড়া করতে নেমে খাবি খেয়েছেন কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা। এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে দুই দলের অধিনায়কই উইকেট নিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জাগো নিউজেও কিউরেটর এবং উইকেট নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এর একদিন পরই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্পোরেট বিল্ডিংয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে গামিনি ডি সিলভার পক্ষেই সাফাই গাইলেন বিপিএল গভার্নিং কমিটির সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক।

যেখানে উইকেট কেমন হবে, তা ঠিক করেন শেরে বাংলার কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। সেখানে তিনি মনেই করেন না, এমন উইকেট বানানোর জন্য তার দোষ। গামিনিকে দোষ দিতে তিনি সম্পূর্ণ নারাজ। তার মতে, 'কিউরেটরের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন আসাটা এখানে অবান্তর। এই কিউরেটরের অধীনে গত চার বছর ধরে মাঠ পরিচালিত হয়ে আসছে। এই মাঠে আমাদের বাংলাদেশ দলের অনেকগুলো সফলতা রয়েছে। আমরা এই মাঠে ভারতকে হারিয়েছি, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছি, দুইটা টেস্ট জিতলাম। তখন এই সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি।'

মল্লিক কোনভাবেই কিউরেটরের দোষ মেনে নিতে চান না । তিনি বলেন, 'এখন একটা দল ৯৭ রানে অলআউট হয়ে গেল,ব্যাটসম্যানরা খেলতে পারেনি আর তাতেই কিউরেটরকে দোষ দিলে তো মেনে নেয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমি একদম স্পষ্ট বলতে পারি।'

কিউরেটর নিয়ে প্রশ্ন করাতে এক সময় রেগে গিয়ে এক সাংবাদিককে 'পাগল' বলে বসেন মল্লিক। উত্তেজিত হয়ে তিনি এসময় বলেন, 'আপনি যদি একই কথা বলেন, বুঝতে না চান । পাগলকে তো আমি বুঝাইতে পারবো না।'

এরপরই যখন তিনি বোঝেন তার এভাবে 'পাগল' বলাটা ঠিক হয়নি তিনি ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। তখন তিনি আবার বলেন, 'আমার উত্তর তো ক্লিয়ার করে দিছি। এটাতেই তো বাংলাদেশ দল খেলছে, ম্যাচ জিতেছে। একই উইকেটে ২০৫ ও হইছে আর ৯৭ ও হইছে। আমি তো আগেই স্বীকার করে নিছি এটা প্রোপার টি২০ উইকেট না। সেটা আমাদের একটা ব্যর্থতা আছে। এটা আপনাকে দেখতে হবে উইকেটটা আমরা আরও ঠিক করতে পারে কিনা। আর ঐ পাগল/টাগল বলছি এগুলা দেখাইয়েন না।'

উইকেট সম্পর্কে বলতে গিয়ে মল্লিক বলেন, 'দেখুন, উইকেটের ব্যাপারটা যা আসছে, খালি চোখে যদি বলেন তবে আমাদের এই উইকেটটা আমাদের কাছে টি২০ এর উইকেট মনে হয় না। উইকেটটা একটু স্লো। এই উইকেট ১০০ রান করার মত উইকেট না, এটা কিন্তু ১৪০/৫০ করার মত উইকেট। গতকালও যদি দুইটা ম্যাচ দেখেন, এক ম্যাচে স্কোর হল ৯৭ আরেক ম্যাচে হল ২০৫।'

তবে উইকেট এবং কিউরেটরের পক্ষে কথা বললেও আবার তিনিই বললেন গ্রাউন্ডস কমিটিকেও নাকি মাঠ নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'উইকেট নিয়ে আমরা গ্রাউন্ডস কমিটির সাথে বসেছি। আমরা তাদেরকে বলেছি উইকেটটা যেন আর একটু ব্যাটিং বান্ধব হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে।'

গ্রাউন্স কমিটিকে সে নির্দেশনা দেয়ার কথা বলে আবার দোষ দিলেন ব্যাটসম্যানদের উপরে। তিনি বলেন, 'তাই বলে উইকেট এতটা খারাপ না। এটা বেসিক কথা। একটা ম্যাচে এক্সিডেন্টালি কম রান হয়ে গেছে। গতকালকের ম্যাচে ব্যাটসম্যনরা ভুলে করে আসছে, সেটা বোঝাই গেছে।'

তবে এই উইকেটকে জঘণ্য বলতে নারাজ ইসমাইল হায়দার। তিনি বলেন, 'জঘণ্য উইকেট না। এই উইকেটেই কিন্তু ওরা (তামিম-মাশরাফি) জাতীয় দলের ম্যাচ খেলে। তবে আপনারা বলতে পারেন এই উইকেটটা টি২০ এর জন্য ওতটা ভাল না। কালকে খেলা শেষে তামিম আমার কাছে অভিযোগ করেছে, এই উইকেট ঠিক নেই। এই ব্যাপারে আমি ওর সাথে একমত যে, এটা প্রোপার উইকেট না। তবে এটা জঘণ্য উইকেটও না।'

উইকেট গুলো নাকি জাতীয় দলের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়। যেটা রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব না-কিউরেটরের বক্তব্যের সুরেই সুর মেলালেন মল্লিক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের উইকেটটা জাতীয় দলের কথা চিন্তা করে বানানো হয়। কাজেই এই উইকেটটা রাতা-রাতি কিন্তু পরিবর্তন করা যায় না। এটা করতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। তারপরও একবারে খারাপ উইকেট যাতে না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। ওনারা বলেছেন সামনের ম্যাচগুলোতে ব্যবস্থা নিবেন। '

একটা উইকেট বানাতে প্রচুর সময় লাগে, জানান তিনি। তার মতে, 'উইকেট একটা বানাতে হলে ছয় মাস থেকে আট মাসের ব্যাপার থাকে। চিটাগং আর ঢাকার উইকেট কিন্তু আলাদা। সবকিছু মাথায় রাখতে হয়। রাতারাতি তো আর কিছু করা সম্ভব না। তারপরও উইকেট একবারে আনপ্লেয়াবেল ছিল না। এখানে একটা দল ২০৫ আর আরেকটা দল ৯৭ করবে তার মানে বোঝাই যাচ্ছে একটা দল ব্যর্থ। '

তবে মুখে যাই বলুক প্রথম ম্যাচ শেষে কিউরেটরকে সাথে নিয়ে উইকেটে দেখা গেছে ইসমাইল হায়দার মল্লিক, সিইও নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজনকে। তারা বেশ কিছু সময় সেখানে ছিলেন। কথা বলছিলেন কিউরেটরের সাথে।

এমএএন/এমএমআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।