শেষ হলো হতাশার এক সিরিজ

স্পোর্টস ডেস্ক
স্পোর্টস ডেস্ক স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:০১ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৭

তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক। টেস্টে মুশফিক, ওয়ানডেতে মাশরাফি এবং টি-টোয়েন্টিতে সাকিব আল হাসান। ফরম্যাট অনুযায়ী নেতৃত্ব বদলালেও ভাগ্য বদল হয়নি বাংলাদেশের। হারের বৃত্তেই বন্দী থাকতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে চরম হতাশা আর দুঃস্বপ্ন সঙ্গী করেই দেশে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। সিরিজে দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে এবং দুটি টি-টোয়েন্টি, সবগুলোতেই পরাজয়। বিশেষ করে টেস্ট, ওয়ানডে সিরিজে এবং শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে লজ্জাজনক পরাজয়ই সবচেয়ে বেশি হাতাশায় পুড়িয়েছে বাংলাদেশ দলকে।

পচেফস্ট্রমের সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়াম থেকে সফরের শুরু। বৃত্তের মতোই সফরটা ঘুরে এসে শেষ হলো সেই সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়ামেই। শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যদিয়ে। পুরো সফরে লড়াই করার মতো ম্যাচ ছিল একটাই। প্রথম টি-টোয়েন্টি। লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা ঠিক থাকলে হয়তো ওই ম্যাচে জিততেও পারত বাংলাদেশ।

মাঙাউঙ্গ ওভালে যেখানে টেস্ট সিরিজের সময়ই দেখা গিয়েছিল দুর্দান্ত ব্যাটিং উইকেট, সেখানে চারজন পেসার নিয়ে টি-টোয়েন্টি খেলতে নামার মতো বিলাসিতার যুক্তি খুঁজে পায় না কেউ। পেসাররা যে হারে রান দিয়েছে, সেটাই বাংলাদেশের জন্য কাল হয়েছে। তারা যদি রানের লাগামটা শেষ দিকে টেনে ধরতে পারত, তাহলে ২০ রানের হার নয়, হয়তো জয় নিয়েই ফিরতে পারত বাংলাদেশ।

কিন্তু পুরো বাংলাদেশকে হতাশাতেই ডুবিয়ে টাইগাররা হারল ২০ রানে। ১৯৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ থেমেছে ১৭৫ রানে। ম্যাচ শেষে তাই আফসোস আর আফসোস! ভুলগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ। কী করলে এই ম্যাচটা হাতের মুঠোয় পুরে নেয়া সম্ভব ছিল। বিশ্লেষণ করে যদি রেজাল্ট পরিবর্তন করা যেত, তাহলে তো অনেক কিছুই করে ফেলা যেত। সেটা তো আর সম্ভব নয়! সুতরাং, পরের ম্যাচেই কী করা যায় সেই পরিকল্পনাই করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অনুধাবন করে পরিকল্পনাগুলো আগে থেকে সাজানো যেত কি না সেটা একটা প্রশ্ন। আরও প্রশ্ন উঠেছে, টিম ম্যানেজমেন্ট কি সত্যি সত্যি পরিবেশ পরিস্থিতি অনুধাবন করতে সক্ষম? তারা কি উইকেট পড়ার ক্ষমতা রাখে? না হলে কেন সিরিজের শুরু থেকে এতটা অগোছালো ঠেকেছে বাংলাদেশ দলকে?

পচেফস্ট্রমের সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে মাঠে নামার আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকুর রহীম বলেছিলেন, ব্যাটিং উইকেট। শুকনো এবং ফ্ল্যাট। এমন উইকেটে পরেরদিন টস জিতে কীভাবে তিনি ফিল্ডিং নিলেন সেটা কারও বোধগম্য নয়। ম্যাচ শেষে বোলারদের ওপর দোষ চাপিয়ে মুশফিক জানিয়ে দিলেন ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত তার একার নয়। সবাই মিলে নিয়েছেন।

দ্বিতীয় টেস্টে ব্লুমফন্টেইনের মাঙ্গুয়াঙ ওভালে উইকেট বুঝতেই পারেনি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। টস জিতে আবারও ফিল্ডিং নিলেন তিনি। প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস জানিয়ে দিলেন, ‘তিনি ১০ বার টস জিতলে ৯ বারই ব্যাটিং নিতেন।’ ক্রিকইনফোর কমেন্টেটর বললেন, ‘মুশফিকের জন্য ভালো হয়, টসই না জেতা। তাহলে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য অভিযুক্ত হতে হতো না তাকে।’

ফল যা হওয়ার তাই হলো। বাংলাদেশ হারল ইনিংস এবং ২৫৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। এত বড় ব্যবধানে এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে আর কখনও হারেনি বাংলাদেশ। লজ্জার ষোলকলা পূর্ণ হলো যেন তাতে। যে দলটি মাত্র কয়েকদিন আগেই ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়েছে, তারা দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে হারবে- এটা ছিল অনেকটাই জানা কথা।

তাই বলে এতটা অসহায় আত্মসমর্পণ! কেউ মেনে নিতে পারে না। পারেওনি। সিরিজের মাঝপথ থেকেই আবার বিতর্ক দানা বেঁধেছে। মাঝপথেই মুশফিক বলে দিয়েছেন, ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত তার একার নয়। ম্যানেজমেন্টের। এমনকি তিনি কোথায় ফিল্ডিং করবেন, সেটাও তাকে ড্রেসিংরুম থেকে বলে দেয়া হচ্ছে।

ম্যাচ চলাকালীনই মুশফিকের নেতৃত্ব তুমুল আলোচনার বিষয়বস্তু। বিসিবি প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত দেশে বসে মুশফিকের সিদ্ধান্তে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি অবাক হয়েছেন। বলেছেন, ওটা মুশফিকেরই সিদ্ধান্ত। টিমের নয়। গুঞ্জন ওঠে, টেস্ট নেতৃত্ব হারাতে পারেন মুশফিক।

এরই মাঝে শুরু হয়ে যায় ওয়ানডে সিরিজ। কিম্বারলির ডায়মন্ড ওভালে সেই মুশফিকই সেঞ্চুরি করে দেখিয়ে দিলেন, সমালোচনা তাকে কখনও ছোঁয় না। ২৭৮ রান করেও অবশ্য এই ম্যাচে বাংলাদেশকে হারতে হলো ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। এরপর পার্লের বোল্যান্ড পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করতে নেমে তুলল ৩৫৩ রান। বাংলাদেশ অলআউট ২৪৭ রানে। পরাজয় ১০৪ রানের বড় ব্যবধানে।

শেষ ম্যাচটি আরও বেশি হতাশা নিয়ে উপস্থিত ছিল। ইস্ট লন্ডনে দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশের বিপক্ষে করল ৩৬৯ রান। এত বড় রানের নিচে চাপা পড়ে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেল মাত্র ১৬৯ রানে। ২০০ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করতে হলো মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। যে ফরম্যাট নিয়ে ছিল বাংলাদেশের গর্ব। সেটা ধুলোয় মিশিয়ে দিল প্রোটিয়ারা।

এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজ। নতুন অধিনায়ক। নতুন দল। নতুন শুরুর প্রত্যাশা। বাংলাদেশের শুরুটা তেমনই হতে পারত। কিন্তু সেই পরিকল্পনার দৈন্যতা আবারও ডোবাল বাংলাদেশকে। না হয়, হতাশা কাটিয়ে একটা জয় পেলে বাংলাদেশ দল যে বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠতে পারত, তাতে তো কোনো সন্দেহ নেই।

শেষ টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হলো সেই পচেফস্ট্রমের সেনউইজ পার্ক স্টেডিয়ামে। এখানেও যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স। প্রোটিয়াদের ২২৪ রানের নিচে চাপা পড়ে হারল ৮৩ রানে। এই ম্যাচে হতাশাজনক পরাজয়ের মধ্যদিয়েই শেষ হলো বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর।

আইএইচএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।