দায়িত্বহীন ব্যাটিং আর কত!

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

‘সাফল্য’ যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে টাইগারদের কাছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেন ‘শনি’ ভর করেছে। সে শনির দশা কাটছেই না কিছুতে। এ যেন সেই স্বতঃসিদ্ধ, ‘সর্বাঙ্গে ব্যাথা, ঔষধ দিব কোথা!’

একেক ম্যাচে দুর্বলতা একেক রকম চিত্র। এক ম্যাচে মনে হয় বোলিং দূর্বল। বোলাররা উইকেটের পতন ঘটানো ভুলে গেছেন। ভাল জায়গায় বল ফেলার সামর্থ্যও গেছে কমে। আবার পরদিন দেখা যাচ্ছে ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজটুকু করতে গিয়ে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করছেন।

শুনতে যতই কানে লাগুক না কেন, কঠিন সত্য হলো- যতই সময় গড়াচ্ছে এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ক্রমেই দুঃস্বপ্নের মিশনে পরিণত হচ্ছে। গত দুই ম্যাচের চালচিত্রই তার প্রমাণ। ১৫ অক্টোবর কিম্বার্লিতে ২৭৮ রান করেও ১০উইকেটের লজ্জাজনক হার। আর বুধবার এবি ডি ভিলিয়ার্সের উত্তাল উইলোবাজি এবং পরে বোলারদের সাঁড়াসি বোলিং তোপে ১০৪ রানের পরাজয়।

এমন নয় গত তিন বছরে বাংলাদেশ আর কখনও হারেনি। এই তো, বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। আর গত জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ভারতের সাথে ২৬৪ রানের লড়াকু স্কোর করেও ৯ উইকেটে হেরে বাড়ী ফিরতে হয়েছে।

তারওপর এবার বাংলাদেশ দলকে একটু বেশি অগোছালো মনে হচ্ছে। ব্যাটিং-বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগের সামগ্রিক অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন ও পারফরমেন্স নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ।

কন্ডিশন খুব খারাপ হলে কথা ছিল। সাধারণতঃ দক্ষিণ আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়ায় অনেক কঠিন পিচ আছে, যেখানে অজি ও প্রোটিয়া ফাস্ট বোলিংয়ের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে নাস্তানাবুদ হন অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যান; কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় তো সে ধরনের দ্রুত গতির আর বাড়তি ও বিপজ্জনক বাউন্সি পিচে খেলা হচ্ছে না।

আজকাল বাণিজ্যিক কারণে যেমন ওয়ানডে উইকেট হয়, কিম্বার্লির ডায়মন্ড পার্ক ও পার্লের বোল্যান্ড ওভালের উইকেট ছিল ঠিক তেমনি- একদম ব্যাটিং সহায়ক।

এ ধরনের উইকেটে আসলেই বোলারদের ভাল করা কঠিন। আর বাংলাদেশের বোলারদের জন্য আরও বেশি কঠিন। কারণ, তারা সারা বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন স্লো ও লো ট্র্যাকে। আর এ বছরের বেশিরভাগ সময় কেটেছে দেশের মাটিতে খেলে খেলে।

তাই ধরে নেয়া যায় প্রথম ম্যাচে কিম্বার্লির সেই ব্যাটিং স্বর্গে নিজেদের করণীয় কাজ ঠাউরে উঠতে পারেননি বোলাররা। তারা দ্বিধায় ছিলেন- রান নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবো, নাকি উইকেটের জন্য বল করবো? এমন দোটানা অবস্থায় কোনটাই হয়নি।

এ কারণে ২৭৮ রানের মোটামুটি সমৃদ্ধ পুঁজি নিয়েও একটি উইকেটের পতনও ঘটানো সম্ভব হয়নি। ১০ উইকেটের হার সঙ্গী থেকেছে। খেলা শেষ হয়েছে সাত ওভারের বেশি, ৪৩ বল আগে।

বুধবার দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য সেই অসহায় ভাব কিছুটা কেটেছে বোলারদের। শতভাগ লাইন ও লেন্থ বজায় রেখে উইকেটের চরিত্র বুঝে আর প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের মনোভাব দেখে খুব আহামরি ভাল বোলিং করতে না পারলেও পেসার রুবেল আর স্পিনার সাকিব মোটামুটি উৎরে গেছেন। সাকিব প্রথম স্পেলে দারুণ বল করেছেন। কিছু ডেলিভারি ছিল বেশ সমীহ জাগানো। ‘ডেড ওভারে’ রুবেলের বোলিংও ছিল বেশ বুদ্ধিদীপ্ত। যে কারণে একবার হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জেগেছিল।

তারপরও এবি ডি ভিলিয়ার্সের উত্তাল ব্যাটিংয়ের মুখে সব গেছে ভেস্তে। ২ রানে কট বিহাইন্ড হবার সুযোগ দিয়ে বেঁচে যাওয়া আর তার কিছুক্ষণ পর রান আউটের হাত থেতে পরিত্রান পাওয়া এবি ডি ভিলিয়ার্স পরে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলেছেন। ১০৪ বলে ১৭৬ রানের ঝড়ো ইনিংসের মুখে ছিন্ন ভিন্ন হলো বাংলাদেশের বোলিং। তার একার নৈপুন্যের ওপর ভর করেই ৫০ ওভারে ৩৫৪ রানে পাহাড় সমান স্কোর পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

সাড়ে তিনশোর বেশি রানের লক্ষ্য সামনে। যত ব্যাটিং সহায়ক উইকেটই হোক না কেন, বাংলাদেশ ওই রান টপকে যাবে, পার্লে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় ধরা দেবে- এমন স্বপ্ন খুব কম বাংলাদেশ সমর্থকই দেখেছেন।

সবার আশা ছিল, উইকেট খুব ভাল। বাড়তি বাউন্স নেই। বল ব্যাটে আসে। বিপজ্জনকভাবে বুক, কাঁধ, মুখ ও মাথার সমান উচ্চতায় লাফিয়েও ওঠে না, সুইংও নেই তেমন। মোট কথা স্বচ্ছন্দ-সাবলীল ব্যাটিংয়ের অনুকুল ক্ষেত্র।

এখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সামর্থ্যরে বড় অংশের প্রয়োগ ঘটাতে পারলে হয়ত মোটামাটুটি লড়াই হবে। বাংলাদেশ ৩০০ প্লাস রান করতে পারবে। এমন আশায় টিভি সেটের সামনে বসা।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশা ভঙ্গের বেদনায় ডুবতে হলো। প্রথম ম্যাচে হার না মানা সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহীম আর ইমরুল কায়েস ছাড়া একজন ব্যাটসম্যানও নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।

চরম দায়িত্ববোধের অভাব ছিল সবার মাঝে। ভাল খেলার বাড়তি তাগিদটাই ছিল না। তামিম (২৩), লিটন (১৪), সাকিব (৫), মাহমুদউল্লাহ (৩৪) আর সাব্বির (১৭), নাসির (৩)- একঝাঁক দেশসেরা ব্যাটসম্যান ব্যর্থতার মিছিলে অংশ নিলেন।

খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে প্রথম ম্যাচের (২৭৮) চেয়ে কাল (২৪৯) আরও ২৯ রান কম হয়েছে। দুই ম্যাচের সামগ্রিক ব্যাটিং চিত্র খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে প্রথম দিন মুশফিক একা যা করেছিলেন, কাল মুশফিক আর ইমরুল কায়েস মিলে তার কাছাকাছি রান করেছেন।

প্রথম দিন মুশফিকের একার রান ছিল ১১০। আর অতিরিক্ত ও সবাই মিলে করেছিলেন ১৬৮। আর কাল ওপেনার ইমরুল কায়েস ৬৮ এবং মুশফিক ৬০ = ১২৮। আর বাকি নয়জন মিলে করেছেন ১০৮। অথচ এক সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ অনেকদুর যাবে।

ইমরুল-মুশফিক তৃতীয় উইকেটে যখন ব্যাট করছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের রান ৩০০ পেরিয়ে যাবে; কিন্তু লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের গুগলিতে ইমরুল ও সাকিব আউট হবার পর ছন্দপতন। সেখান থেকে যে দু’জন দলকে টেনে নিতে পারতেন, সেই মুশফিক ৬০ রানে গিয়ে থামলেন।

এরপর মাহমুদউল্লাহ পড়লেন উভয় সংকটে। মারবো, ঠেকাবো নাকি ধরে খেলবো- এমন করতে করতে অপরপ্রান্তে সাব্বির এবং নাসির আউট। ২৯ ওভারে ১৬২ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো দল পরের ৭ উইকেট খুইয়ে বসলো মাত্র ৮৭ রানে। ভাবা যায়! এমন করুন ব্যাটিংয়ের মাশুলই, ১০৪ রানের হার।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।