ডি ভিলিয়ার্স ঝড়

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

‘একি ! বোলাররা কি বোলিং ভুলে গেছেন? একটা উইকেটও পাচ্ছেন না। আগের ম্যাচে ২৭৮ রানের বড় স্কোর গড়েও এক উইকেটের পতন ঘটানো সম্ভব হয়নি। আজও কি তাই হবে ?

পেসাররা না হয় বোলিং ভুলে গেছেন। সারা বিশ্বে খেলে বেড়ানো সাকিবও কি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন ? কই তার বলওতো ঘুরছেনা। তাকেও দেখি স্বচ্ছন্দে খেলছেন প্রোটিয়ারা। তাহলে কি হবে? ব্রেক থ্রু দেবেন কে? বোলিংয়ের যে হতচ্ছিরি অবস্থা, তাতে রান আউট ছাড়া আজও প্রোটিয়া উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গবে কিনা, কে জানে’ -এক সাংবাদিকের আক্ষেপ, অনুশোচনায় ভরা উক্তি।

প্রথম ঘন্টা পেড়িয়ে যাবার পরও যখন দক্ষিণ আফ্রিকান দুই ওপেনার হাশিম আমলা ও ডি কক অনায়াসে খেলছিলেন, তখন ঐ সাংবাদিক একা নন, প্রতিটি বাংলাদেশ সমর্থকের মনে অমন প্রশ্ন উকি ঝুঁকি দিচ্ছিল। আজ পার্লের বোল্যান্ড পার্ক ওভালে প্রথম বোলিং নিয়েও যে সেই আগের ম্যাচের মতই নির্বিষ নখদন্তহীন চেহারা বাংলাদেশের।

তিন পেসার মাশরফি, রুবেল ও তাসকিন হালে পানি পাননি। ১৫ ওভার শেষে প্রোটিয়া ওপেনিং জুটি অক্ষত। আমলা ও ডি কক অনায়াসে দেখে শুনে ইচ্ছেমত খেলছিলেন। অবশেষে ১৮তম ওভারে গিয়ে ভাঙ্গলো দক্ষিণ আফ্রিকান উদ্বোধনী জুটি। ১৭.৩ ওভারে ব্রেক থ্রু দিলেন সাকিব আল হাসান। আগের ম্যাচে দারুণ সেঞ্চুরি হাঁকানো ডি কককে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেললেন এ বাঁহাতি স্পিনার।

শুধু তাই নয় প্রথম ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে উইকেট না পাওয়া সাকিব পঞ্চম ওভারে দু’দুটি উইকেট উপহার দিলেন। আর তাতেই প্রায় মুষড়ে পড়া বাংলাদেশ সমর্থকরা নড়ে চড়ে বসলেন। সাকিবের প্রথম শিকার ডি কক ( ৬১ বলে ৪৬) আউট হলেন মিডল স্টাস্পে পড়া সোজা ডেলিভারি ব্যাটে আনতে না পেরে। ৯০ রানে ভাঙ্গলো প্রোটিয়া উদ্বোধনী জুটি।

এরই সঙ্গে দুই ম্যাচে ৩৭.২ ওভার পর ৩৭২ ( আগের দিন ২৮২+৯০) রানে অবশেষে একটি উইকেট খোয়া গেল দক্ষিণ আফ্রিকার। ঠিক দুই বল পর আবার আঘাত সাকিবের। এবার সেই চিরচেনা সাকিবের স্পিন ঘূর্নি ! মিডল স্টাম্পে পিচ পড়া গুডলেন্থ ডেলিভারি। কিছুটা টার্নও করলো। তাতেই পরাস্ত প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস ( ০)।

অধিনায়ক ডু প্লেসিসকে শুন্য রানে ফেরানো সাকিব এক ওভারে দুই উইকেট পেয়ে উজ্জীবিত, অনুুপ্রাণিত। ঠিক পরের ওভারের প্রথম বলে আবার উইকেট পেতে যাচ্ছিলেন। তার তীক্ষ্ণ ডেলিভারিতে উইকেটের পিছনে প্রায় ক্যাচ দিয়ে ফেরত যাচ্ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স।

সাবেক দ. আফ্রিকান অধিনায়কের রান তখন মাত্র ২। সাকিবের বলে অফস্টাম্পের বাইরে পরাস্ত ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাটের বাইরের কোণায় লেগে বল চলে গেল কিপার মুশফিক আর প্রথম স্লিপ ফিল্ডার নাসিরের মাঝখান দিয়ে।

নাসিরের বাঁ দিক দিয়ে নীচু হয়ে যাওয়া ঐ ক্যাচ ধরার জন্য যত চপলতা ও ক্ষিপ্রতা দরকার, তার কোনটাই ছিল না নাসিরের। অনেক দেরিতে চেষ্টা করলেন , ততক্ষনে বল চলে গেছে থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে সীমানার ধারে।

ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘হাফ চান্স ’ যাকে বলে, এটা তার চেয়ে বেশী ছিল। কিন্তু নাসির প্রস্তুত না থাকায় তা ধরা সম্ভব হয়নি। সেই ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারলে নির্ঘাত দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩০০ ‘র আশপাশে রাখা যেত।

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হাশিম আমলা আজ ৯২ বলে ৮৬ রানে ফিরেছেন সাজঘরে। পেসাররা হতাশা ঘুচিয়ে হাশিম আমলাকে সাজঘরে ফেরত পাঠান রুবেল হোসেন। কিন্তু শুরুতে সুযোগ দিয়ে বেঁচে যাওয়া ডি ভিলিয়ার্স আর পিছন ফিরে তাকাননি।

প্রথমে খানিকক্ষণ নিজেকে পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়েছেন। তারপর একের পর এক আক্রমনাত্মক শটস খেলে ক্যারিয়ারের ২৫ নম্বর শতরান পূর্ন করে ফেলেন।

মাঝে অনেকদিন রানে ছিলেন না। শেষ ২৩ ম্যাচে তার ব্যাট পাঁচবার পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছলেও তিন অংক ছুঁতে পারেনি। অবশেষে আজ পার্লে শতরানের দেখা পেলেন ডি ভিলিয়ার্স। খেললেন ১০৪ বলে ১৭৬ রানের উত্তাল ইনিংস। ৩৪ বলে পঞ্চাশে পা রাখা ডি ভিলিয়ার্স শতরান পূর্ন করেন ৬৮ বলে। শতরান করার পর উড়িয়ে মারা শুরু করেন।

১০০ হবার আগে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন মাত্র একটি। শতরান পূরনের পর শুরু হলো ছক্কা বৃষ্টি। পরের ৭৬ করতে ডি ভিলিয়ার্স হাঁকালেন ৬ ছক্কা। মোট ১৫ বাউন্ডারি আর ৭ ছক্কায় দুইশ থেকে মাত্র ২৪ রান দূরে থাকতে এই ব্যাটিং দানবকে ফেরালেন রুবেল।

ডি ভিলিয়ার্স যেভাবে খেলছিলেন, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার রান অনায়াসে ৩৬০-৩৭০ ‘এ গিয়ে ঠেকতো। ইনিংসের ১৪ বল আাগে ডি ভিলিয়ার্স আউট হবার পর প্রোটিয়ারা আর মাত্র ১০ রান যোগ করে। তারপরও ৫০ ওভার শেষে ফাফ ডু প্লেসিসের দলের রান ৬ উইকেটে ৩৫৩।

এআরবি/এমএমআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।