বোলিং ব্যর্থতার কারণইে এমন করুণ পরিণতি

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৩:০৭ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে রীতিমত তুলোধুনো বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে ছিল ভিন্ন চিন্তা। সমর্থকদের বিশ্বাস, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হয়ত টেস্টের চেয়ে পারফরমেন্স উজ্জ্বল থাকবে। ফলও ভাল হবে; কিন্তু তার আর হলো কই? তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শুরুতে ১০ উইকেটের লজ্জাজনক হার মাশরাফি বাহিনীর।

২৭৮ রানের মোটামুটি বড় স্কোর গড়েও শেষ পর্যন্ত ১০ উইকেটে হার টাইগারদের। ওয়ানডেতে এর আগেও ১০ উইকেটে পরাজয় রয়েছে বাংলাদেশের; কিন্তু ২৭৮ করে আগে ১০ উইকেটে হারেনি। এই যে এত রান করেও অমন করুণ পরিণতি- তা নিয়েই কথা হচ্ছে বেশি। বাংলাদেশ দলের অন্ধ সমর্থকেরও মুখ বন্ধ। সবার মুখে একই কথা- ‘একি হলো? ২৭৮ রান করেও ১০ উইকেটে হার? দক্ষিণ আফ্রিকার একজন ব্যাটসম্যানকেও আউট করা সম্ভব হলো না?’

শুধু ভক্তদের কথা বলা কেন? খোদ টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও হতাশ। তারও বড় দুঃখ ১০ উইকেটে হার। কাল খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে মাশরাফি খানিক আফসোসের সুরেই বলেছেন, ১০ উইকেট হার মেনে নেয়া কঠিন। মাশরাফির বিশ্বাসই হচ্ছে না তারা একটি উইকেটেরও পতন ঘটাতে পারেননি।

টাইগার ক্যাপ্টেনের ধারনা, কিম্বার্লির যে উইকেটে খেলা হয়েছে, সেটা ২৮০‘র উইকেট নয়। আরও বেশি রানের। তারপরও এ উইকেটে ২৮০ একদম কম রান নয়। এ রান নিয়েও জেতা সম্ভব।’ কি করে সম্ভব? তার ব্যাখ্যাও আছে। মাশরাফির ব্যাখ্যা, ‘আমরা যদি শুরুতে উইকেট নিয়ে দু’দিক থেকে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলতে পারতাম, তাহলে অবশ্যই সম্ভাবনা থাকতো; কিন্তু আমরা কোন উইকেটই নিতে পারবো না- তা যে ভাবনার অতীত।’

মাশরাফির কন্ঠে বোলারদের অতি দ্রুত ভুল থেকে শিক্ষা নেবার তাগিদ। তার অনুভব, বোলাররা আলগা বল করেছে। বলে ধার ছিল না। শৃঙ্খলায়ও কমতি ছিল। তাই তো কণ্ঠে এমন কথা, ‘আমরা কিম্বার্লিতে যে বোলিং করেছি, আশা করছি সব বোলারই তা নিয়ে চিন্তা করবে। আমরা আরও সুশৃঙ্খল বোলিং করতে পারতাম।’

বিশেষজ্ঞ, সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকরা অবশ্য একটা জায়গায় মাশরাফির সাথে একমত নন। তাদের সবার কথা, কিম্বার্লির উইকেটে ৩২০/৩৩০ রান করতে না পারলে স্বাগতিক দলকে চাপে ফেলা খুব কঠিন। আর সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের পেস বোলাররা কিছুই করতে পারেননি। তারা ওই পিচে ঠিক কোন জায়গায় বল ফেললে উইকেট নেয়া যাবে, আর কোন লেন্থে বল করলে রানের গতি নিয়ন্ত্রনে রাখা যাবে- সেটা বুঝে উঠতে পারেননি।

অধিনায়ক মাশরাফি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি খাটিয়ে বল করে একটু আধটু সমীহ আদায় করলেও বাকিরা কিছুই করতে পারেননি। তাই ১০ উইকেটের এই হার। মুশফিকুর রহীম চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, এই পিচে দেখে খেললেই রান করা সম্ভব; কিন্তু বাকিরা কেউ সে পথে হাঁটেননি। ইমরুল (২৯), লিটন দাস (২১), সাকিব (২৯), মাহমুদউল্লাহ (২৬) আর সাব্বির (১৯) সবাই সেট হয়ে আউট হয়েছেন।

বড় ইনিংস খেলার দৃঢ় সংকল্পে ঘাটতি ছিল। উইকেট ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি। বেশি সময় থাকলে পারলেই রান করা যাবে। এ বোধ ও উপপলিব্ধিতে ঘাটতি ছিল তাদের। আর একজন মুশফিককে সঙ্গ দিতে পারলে আরও ৪০-৫০ রান বেশি করা যেত।

জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ও খালেদ মাসুদ পাইলট জাগো বাংলার সাথে আলাপেও এমন কথাই বলেছেন। আকরাম খানের কথা, এ উইকেটে অন্তত আরও ৫০ রান বেশি করা উচিৎ ছিল। আর দ্বিতীয়ত: বোলাররা বিশেষ করে, পেসাররা ভাল জায়গায় বল ফেলতে পারেননি। যে লাইন ও লেন্থে বল ফেললে ব্যাটসম্যানের জন্য সাবলিল ব্যাটিং ও ফ্রি স্ট্রোক খেলা কঠিন- সে জায়গায় বল ফেলতে পারেনি কেউ।

খালেদ মাসুদের কন্ঠেও একই সুর- ‘আমি প্রথম ১০ ওভার খেলা দেখেই বলে দিয়েছি এটা সাড়ে তিনশো রানের উইকেট। এখানে ২৭০-২৮০ দিয়ে হবে না। মুশফিক দেখিয়ে দিয়েছে, ইচ্ছে থাকলেই এ উইকেটে টিকে থাকা যায়। বড় রান করা যায়। সে কাজটাই আর কেউ করলো না। সবাই সেট হয়ে আউট হলো। আর বোলিংয়ের কথা কি বলবো? আমার মনে হয় বোলিং নিয়ে অনেক কাজ করা বাকি আছে।’

এআরবি/আইএইচএস/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।