বাংলাদেশ যে কারণে টেস্ট ড্র করতে পারে না

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজ জেতাটাই বড় কথা। অজিদের দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করতেই হবে। তাদের বাংলাওয়াশের এটাই মোক্ষম সুযোগ এমন চিন্তা, ভাবনা ও লক্ষ্য, পরিকল্পনাই কি শেষ পর্যন্ত ডোবাল? বাংলাদেশ কি ২-০ তে সিরিজ জিততে গিয়ে উল্টো শেষ ম্যাচ হেরে সিরিজ জেতার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করল?

এ প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। এ প্রশ্নকারীদের আরও একটি সম্পূরক প্রশ্নও আছে। আচ্ছা, ঢাকায় জেতা বাংলাদেশ কি চট্টগ্রামে ড্র করে সিরিজ নিজেদের হাতে রাখতে পারত না? অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাক্রমশালী দল ও কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে সিরিজ জেতাটাই কি বড় কৃতিত্ব বলে গণ্য হত না?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই মনে করছেন বাংলাদেশ দ্বিতীয় টেস্ট জিততে চেয়ে সিরিজ জয়ের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করল। এ কারণে আজ খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনেও উঠল এ প্রশ্ন। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের কাছে জানতে চাওয়া হলো, ‘আচ্ছা আপনারা কি চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র করতে পারতেন না? অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ কি ড্র করার মানসিকতা নিয়ে খেলে অমীমাংসিত রাখতে পারে না?

এ প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে টাইগার অধিনায়ক মুশফিকও মানছেন তার দলের টেস্ট ড্র করার সামর্থ্য কম। কেন সে সামর্থ্যের ঘাটতি? তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুশফিক অনেক কথা বলেছেন। তার কথার সারমর্ম হলো- বাংলাদেশ যখনই কোনো জটিল ও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে তখনই সব কেমন এলোমেলো হয়ে যায়। একটা সেশন এমন বাজে কাটে, যা আর কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। এছাড়া ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং টেকনিকে সমস্যা আছে। টেকনিকে সমস্যার কারণে মানসিক দুর্বলতাও কাজ করে। এর বাইরে ম্যাচিউরিটিও কম। সে কারণেই ড্র করার পরিস্থিতির উদ্রেক ঘটলেও শেষ পর্যন্ত আর পরাজয় এড়ানো সম্ভব হয় না।

মুশফিক বলেন, সম্প্রতি যে ম্যাচগুলো খেলেছি, আমার মনে পড়ছে গল টেস্টেও কিন্তু আমাদের সামনে খুব ভালো সুযোগ ছিল ড্র করার। আমাদের যখন এমন ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন হয় তখন দেখা যায়, একটা সেশন এত বাজে যায়, ওখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন হয়ে যায়।’

ম্যাচিউরিটি আর টেকনিকে ঘাটতির প্রসঙ্গ টেনে টাইগার অধিনায়ক বলেন, অবশ্যই আমাদের ম্যাচিউরিটির প্রবলেম আছে। স্বাভাবিকভাবেই টেকনিক্যাল কিছু সমস্যাও হয়তো আছে। যখন টেকনিক্যালি আপনার কোনো খুঁত থাকবে তখনই কিন্তু আপনি মানসিকভাবে একটু দুর্বল হবেন। তখন কিন্তু ডিফেন্স করায় সে আত্মবিশ্বাস থাকবে না। তখন হয়তো স্কোর করার জন্য আপনি ভিন্ন কোনো পথ বেছে নেবেন। অনেকেই ভাবেন আমরা হয়তো টেকনিক্যালি খুব সাউন্ড।’

এটুকু বলে মুশফিক আরও যোগ করেন, ‘হয়তো টেকনিক্যালি আমরা খুব ভালো কিন্তু অনেক জায়গা আছে উন্নতি করার। এই যেমন উইকেটে কিভাবে থাকতে হবে, কিভাবে রান করতে হবে- এই অভিজ্ঞতা কিন্তু আমাদের কম।’

তবে মুশফিকের ধারণা, কম টেস্ট খেলাও সামর্থ্যের কমতির অন্যতম কারণ। তাই মুখে এমন কথা, ‘আমরা খুব বেশি সুযোগ কিন্তু পাই না। আমরা গত কিছু দিনে দুই বা তিনটা টেস্টে এই সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। সুযোগগুলো যদি কাজে লাগাতে নাই পারি তাহলে কিন্তু শিখতেও পারব না।’

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যে উইকেটে খেলা হলো, সে উইকেটের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটের পিচের মিল নেই। একথা আবারও উল্লেখ করে মুশফিক বলেন, ‘এই ধরনের উইকেট কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা খুব বেশি পাই না। শুধু এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাই। আপনি যতই অনুশীলন করেন না কেন এমন চাপের মতো পরিস্থিতি কিন্তু শুধু টেস্টেই পাওয়া যায়। এখানে ভালো একটা সুযোগ ছিল। কিন্তু একটা সেশনে যখন আপনি দুই-তিনটা উইকেট হারাবেন সেখান থেকে ঘুরে দাড়ানো যায়। কিন্তু যখন পাঁচ-ছয়টা উইকেট হারাবেন বা টপ অর্ডার ফিরে যাবে- যা কি না শ্রীলঙ্কায় গল টেস্টে আর এখানে হয়েছে সেখান থেকে ফেরা কিন্তু ভীষণ কঠিন হয়ে যায়।’

নিজ দলের ঘাটতির জায়গা চিহ্নিত করে মুশফিক বলেন, ‘প্রতিপক্ষের বোলাররা জানে, যখন আমাদের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ফিরিয়ে দিতে পারবে, তখন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা সেই চাপ নিতে পারবে না। আমার মনে হয়, এই ব্যাপারে আমাদের অনেক কাজ করার রয়েছে। শুধু ইচ্ছা শক্তি থাকলেই হবে না, আমাদের কিছু টেকনিক্যাল ব্যাপারও আছে যা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

অজি ওপেনার ওয়ার্নারের ব্যাটিং শৈলির প্রসঙ্গ টেনে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘ওয়ার্নারকে দেখেন, ও কত আক্রমণাত্মক একজন ব্যাটসম্যান। কিন্তু এখানে কত কষ্ট করে রান করেছে, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হয়তো ওর সবচেয়ে মন্থর সেঞ্চুরি। আমার মনে হয়, আমরা এখান থেকে অনেক কিছু দেখতে পারি, শিখতে পারি, যে এই উইকেটে সে কিভাবে রান করেছে। হয়তো সবার রান করার ধরন আলাদা। সে চাইলে আরও আক্রমণাত্মক খেলতে পারত। তখন অনেক সুযোগ আসতে পারত তাকে আউট করার।

কেউ বলতে আর কবে শিখবেন। ১৭ বছর হয়তো হয়ে গেছে- আমাদের টেস্ট একাদশ প্রতি ম্যাচেই কিন্তু একটা-দুইটা-তিনটা করে পরিবর্তন করতে হয়। পেসাররা হয়তো অনেক দিন পরপর টেস্ট ম্যাচ খেলে। ব্যাটসম্যানরা খুব কমই নিয়মিত টেস্ট ম্যাচ খেলে। তাদের জন্যও কঠিন। মুমিনুলের কথাই ধরেন, এতদিন পর এসে খেলা। এমন চাপে থাকা। আমি মনে করি, আমাদের সার্বিক পরিস্থিতি অন্যান্য দলের চেয়ে একটু কঠিন।

তবে কি মুশফিক নৈরাশ্যবাদী? নিজ দলকে নিয়ে তার এত হতাশা? আশার আলো কি নেই? আছে। মুশফিকের ধারণা, গত আড়াই বছর ধরে তার দল ভালো ক্রিকেট খেলছে। সেটাই শেষ নয়। তার লক্ষ্য আরও সামনে আগানো। ‘এখন আমাদের আরেক ধাপ এগোতে হবে। সব সময় জিততে না পারলেও যেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি, এটা পরবর্তী লক্ষ্য হওয়া উচিত।’

এআরবি/এমআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।