অস্ট্রেলিয়া লিড পেলেও দিনের শেষটা বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:১০ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আর একটি মাত্র উইকেট। এটাও যদি শেষ মুহূর্তে তুলে নিতে পারত বোলাররা, তাহলে হয়তো বা আজই ব্যাট করতে পারত বাংলাদেশ। কিংবা আগামীকাল দিনের শুরুতেই হয়তো ব্যাট হাতে নামতে পারতেন তামিম-সৌম্যরা। তবে লেজটা রেখেই দিল অস্ট্রেলিয়া। উইকেটে এখনও টিকে রয়েছেন নাথান লায়ন এবং স্টিভেন ও’কিফ। অস্ট্রেলিয়ার রান তৃতীয় দিন শেষে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৭৭। লিড ৭২ রানের।

বাংলাদেশের ৩০৫ রান টপকে লিড নিয়েই ফেলেছে অস্ট্রেলিয়ানরা। শুধু তাই নয়, লিড প্রায় পৌনে একশ’। চট্টগ্রামের যে উইকেট, তাতে লিডটা নেহায়েত কম নয়। তবুও বলতে হবে, অস্ট্রেলিয়া লিড নিলেও দিনের শেষ অংশটা বাংলাদেশেরই। কারণ, বৃষ্টি শেষে দুপুরের দিকে খেলা শুরু হওয়ার পর পিটার হ্যান্ডসকম্ব এবং ডেভিড ওয়ার্নার যেভাবে ব্যাটিং শুরু করেছিলেন, তাতে প্রথম ইনিংসেই অনেক বড় লিড দাঁড় করিয়ে ফেলবে মনে হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া।

কিন্তু হ্যান্ডসকম্বের রান আউট, মোস্তাফিজের ব্রেক থ্রু বাংলাদেশকে খেলায় ফিরিয়ে আনে। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ চেপে বসেন অস্ট্রেলিয়ানদের ওপর। এর মধ্যে নিজের ক্যারিশমা অব্যাহত রাখেন মোস্তাফিজও। দিনের শেষ দিকে এসে উইকেটের দেখা মেলে সাকিবেরও। সুতরাং, বলাই যায়- লিড পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে তৃতীয় দিনের শেষ অংশটা বাংলাদেশের বোলারদের।

ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন তিনি। দুই ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন। ব্যাট হাতেও প্রথম ইনিংসে ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার। সেই সাকিব আল হাসান চট্টগ্রাম টেস্টে এসে যেন খানিকটা নিষ্প্রভ। তার বলগুলো বিপজ্জনকভাবে বাঁক খেয়ে অস্তস্তিতে ফেলছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের; কিন্তু দুর্ভাগ্য তার উইকেটের দেখাই মিলছিল না। অবশেষে সাকিব সাফল্যের মুখ দেখলেন। অসাধারণ এক ঘূর্ণিতে ফেরালেন ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা অ্যাস্টন অ্যাগারকে।

ইনিংসের ১১৭তম ওভারের শেষ বলে উইকেটের অনেক বাইরে স্পাইক আর বুটের আঘাতে তৈরি হওয়া ক্ষতের ওপর বল ফেলে টার্ন করান। সেটিই সোজা ভেতরে ঢুকে গিয়ে ভেঙে দেয় অ্যাগারের উইকেট। ৩৭৬ রানে পড়লো নবম উইকেট। ৩৫ বল খেলে অ্যাগার করলেন ২২ রান। দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ১১৯ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৭৭। লিড ৭২ রানের। উইকেটে রয়েছেন স্টিভেন ও’কিফ ৮ রানে এবং নতুন নামা নাথান লিওন শূন্য রানে।

এর আগে স্পিনারদের ট্র্যাকে ভালোই ঝড় তুললেন পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। গতকাল ইনিংসের শুরুতে তিনিই প্রথম ব্রেক থ্রুটা এনে দিয়েছিলেন ম্যাট রেনশকে আউট করে। আজও সেঞ্চুরিয়ান ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দারুণ ব্রেক থ্রু এনে দেন তিনি। তার দেখানো পথ ধরে মেহেদী হাসান মিরাজও জ্বলে উঠলেন। শেষ দিকে এসে আবারও দুই বন্ধু মোস্তাফিজ এবং মিরাজ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে আঘাত হানলেন। প্রথমে মোস্তাফিজ ফেরালেন ম্যাথ্যু ওয়েডকে। পরের ওভারেই ম্যাক্সওয়েলকে ফেরালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এর খানিক পর প্যাট কামিন্সকেও এলবির ফাঁদে ফেলেন অফ স্পিনার মিরাজ।

মিরাজের বলে কার্টরাইট ফিরে যাওয়ার পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে জুটি বাধেন ম্যাথ্যু ওয়েড। তবে জুটিটা বড় করতে পারলেন না। মাত্র ২১ রানের জুটিতে তিনি একা রান করেন ৮টি। অবশেষে ইনিংসের ১০৬তম ওভারে, মোস্তাফিজের সোজা লেন্থের তৃতীয় বলটি এক পা এগিয়ে এনে খেলতে যান ওয়েড। নিচু হয়ে আসা বলটিতে তিনি ব্যাটই লাগাতে পারেননি। দুই প্যাডেই আঘাত হানে বল। আম্পায়ার আউট ঘোষণা করার পরও রিভিউ নেন ওয়েড। তাতেও টিকতে পারলেন না তিনি। আউট হয়ে গেলেন।

পরের ওভারেই মিরাজের আঘাত। এবার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে সাজঘরে ফেরত পাঠালেন তিনি। তবে এ উইকেটরক্ষক মুশফিকের দুর্দান্ত এক ক্যাচ ছিল মূল ভুমিকায়। মিরাজের ঘূর্ণিতে বোকা বনে বল ব্যাট-প্যাড করে যখন ঠিক স্ট্যাম্পের পাশে মাটিতে পড়তে যাচ্ছিল, তখনই একেবারে মাটির ওপর ধরে ফেলেন মুশফিক। আম্পায়ার আউট দিলেও ম্যাক্সওয়েল রিভিউ নেন। তাতেও স্পষ্ট দেখা গেলো তিনি কট বিহাইন্ড। ৩৪২ রানে ৬ষ্ঠ উইকেটের পর ৩৪৬ রানে পড়ল ৭ম উইকেট। ম্যাক্সওয়েল ফিরলেন ৯৮ বলে ৩৮ রান করে।

ম্যাক্সওয়েল আউট হওয়ার পর অ্যাস্টন অ্যাগার এবং প্যাট কামিন্স মিলে ২০ রানের জুটি গড়েন। এরপর আবারও মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়েন প্যাট কামিন্স। যদিও শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। মুশফিক রিভিউ নিলে টিভি আম্পায়ার আলিম দার দেখে-শুনে আউটের ঘোষণা দেন। ৪ রান করে ফিরে যান কামিন্স। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ৮ উইকেটে ৩৬৪।

এর আগে বৃষ্টিতে তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন ভেসে গেলেও দুপুর সোয়া ১ টায় ব্যাটিংয়ে নামে অস্ট্রেলিয়া। দিনের শুরুটা দারুণ করে অস্ট্রেলিয়া। দূর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নেন ডেভিড ওয়ার্নার। যদিও তার সেঞ্চুরির আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান দারুণ ছন্দে থাকা পিটার হ্যান্ডসকম্ব। সেঞ্চুরির পর ওয়ার্নারকেও ফেরান মোস্তাফিজ। আর সর্বশেষ অসি শিবিরে ভাঙ্গন ধরান মেহেদী হাসান মিরাজ। তুলে নেন কার্টরাইটকেও।

চা বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কার্টরাইটকে সাজঘরে পাঠান মিরাজ। ৯৭তম ওভারের শেষ বলে মিরাজের ঘূর্ণিতে বোকা হয়ে কার্টরাইট স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্যর হাতে ক্যাচ তুলে দেন। ক্রিজে ২৫ রান নিয়ে ব্যাটি করছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

এর আগে ডেভিড ওয়ার্নার তার ক্যারিয়ারের ২০তম টেস্ট সেঞ্চুরিটি তুলে নেন। তার সেঞ্চুরির ওপর ভর করেই বড় সংগ্রহের দিকে এগুচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। তবে এই ওয়ার্নারকে সাজঘরের পথ দেখান কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। ১২৩ রান করে আউট হন তিনি।

ইনিংসের ৮৮তম ওভারের চতুর্থ বলে কিছুটা বাউন্স দেন মোস্তাফিজ। বলটিকে লেগ গালিতে দাঁড়িয়ে থাকা ইমরুলের মাথার উপর দিয়ে খেলতে গেলে কায়েসের হাতেই ধরা পড়েন তিনি। অসাধারণ একটি ক্যাচ ধরেছেন ইমরুল কায়েস। বলটিকে লাফিয়ে উঠে তিনবারের চেষ্টায় তালুবন্দী করেন ইমরুল। এ ইনিংসে এটি মোস্তাফিজের দ্বিতীয় উইকেট।

এর আগে ৮২ রান করে হ্যান্ডসকম্ব ফিরে যাওয়ার সময় অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ২৫০। হ্যান্ডসকম্ব সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত এক থ্রোতে রানআউট হয়ে যান।

এমএএন/আইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।