অস্ট্রেলিয়া পারছে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কেন পারেনি?

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সাত উইকেট শিকারী স্পিনার নাথান লিওন যখন বলেন, ‘আমার বল একটুও টার্ন করেনি। আমি সোজা ডেলিভারি দিয়ে চারজনকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেছি- তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না উইকেট আর যাই হোক স্পিন ফ্রেন্ডলি নয়।’

তামিম, সৌম্য, ইমরুল, মুমিনুল আর সাব্বিরকে আউট করা অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার নাথান লিওন সোমবার প্রথম দিনের খেলা শেষে ঠিক ওই কথাই বলেছিলেন। লিওনের কথাতেই পরিষ্কার হয়েছে, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট শেরে বাংলার মত স্পিন সহায়ক নয়। এখানে বল পড়ে বিপজ্জনকভাবে লাফিয়েও ওঠে না। স্পিনারদের বল লাটিমের মত এদিক ওদিক ঘুরেও না।

অস্ট্রেলিয়ান কোচ ড্যারেন লেহম্যান আর বাংলাদেশ অলরাউন্ডার নাসিরও আজ দ্বিতীয় দিন শেষে প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। অসি কোচ লেহম্যানের মূল্যায়ন, ‘প্রথম টেস্টের তুলনায় এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন উইকেট। তবে এটাতো আর আমাদের পছন্দে তৈরি না। ঘরের মাঠে স্বাগতিক দল নিজেদের পছন্দের উইকেট তৈরি করবে সেটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে এটা উপমহাদেশের চিরায়ত ধারার পিচ। স্লো। তবে মনে হয় সময় গড়ানোর সাথে সাথে, মানে ম্যাচের আয়ুস্কাল বাড়তে থাকলে এক সময় গিয়ে ঠিক টার্ন করবে।’

লেহম্যান যোগ করেন, হ্যাঁ প্রথম টেস্টে টার্নিং পিচে আমাদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এ উইকেট এখন পর্যন্ত ভাল ব্যবহারই করছে। তারপরও আমার মনে হয় যত সময় গড়াবে, ততই উইকেটে বল ঘুরবে।’

একই সুরে কথা বলেছেন বাংলাদেশের নাসির হোসেনও। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে নাসির জানিয়ে দিলেন, ‘উইকেট থেকে বোলাররা, বিশেষ করে স্পিনাররা কোনই সাহায্য পাচ্ছে না। মিরপুরের উইকেটে স্পিনাররা খুব সাহায্য পেয়েছেন। এখানে তেমন বাউন্স পাচ্ছে না বোলাররা। আর স্ট্যাম্পের বল তেমন টার্ন করছে না। বাইরে যে সব জায়গায় বোলারদের বোলিং বুটের স্পাইকে ক্ষত তৈরি হয়েছে, সেখানে বল পড়লে টার্ন হচ্ছে। স্ট্যাম্পের বল টার্ন করলে লাভ হতো।’

ওপরের ওই কথা-বার্তায় পরিষ্কার, শেরে বাংলার উইকেটে বল লাটিমের মত এদিক ওদিক ঘুরলেও জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পিচ এখনো স্পিন বান্ধব নয়। তবে দু’দলই আশা করছে ম্যাচের বয়স বাড়ার সাথে সাথে উইকেটের আচরণ পাল্টাবে। বল ঘুরতে শুরু করবে।

এমন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুনে যে কেউ প্রশ্ন করবেন, তাই যদি হবে উইকেটে বল যদি নাইবা ঘুরবে, তাহলে নাথান লিওন একাই ৭ উইকেট পেলেন কি করে? তামিম, সৌম্য, ইমরুল, মমিনুল, সাব্বির, মুশফিক ও তাইজুল- এই সাতজন কেন লিওনের বলে আউট হলেন? আরেক বাঁ-হাতি স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগারই বা দুই উইকেটের পতন ঘটালেন কি করে?

এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে বাংলাদেশের ইনিংসের পুরো চালচিত্র খুঁটিয়ে দেখতে হবে। তাহলেই পরিষ্কার হবে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কি অজি স্পিনার লিওন-অ্যাগারের স্পিন ঘূর্ণিতে আউট হয়েছেন, না নিজের ভুলে উইকেট দিয়ে এসেছেন?

আগেই জানা, কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের ভুল গেম প্ল্যান ও ব্যাটিং অর্ডার সাজানোয় অদুরদর্শিতার কারণে প্রথম দিনই ভুগিয়েছে। অফ স্পিনার লিওন রাউন্ড দ্য উইকেটে একটানা অনেকক্ষণ বল করার পরও বাংলাদেশ প্রথম পাঁচজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে ক্রিজে পাঠিয়েছে।

তামিম, সৌম্য, ইমরুল ও মুমিনুল- এই চার বাঁ-হাতি কাল প্রথম দিন লিওনের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে আউট হয়েছেন। রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে অফ মিডলে সোজা ডেলিভারি ছুঁড়ে ওই চার ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছেন লিওন।

তবে আজ তার ছয় নম্বর শিকার হয়েছেন ডানহাতি মুশফিক। এই ডানহাতিকে ওভার দ্য উইকেটেই বোল্ড করেন লিওন। সেটাও টার্নে নয়। অফ মিডলে পিচ পড়া বল একটু ভিতরে ঢোকার মুখে বাম পা পুরো সামনে না এনে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। শরীর ও পা ঠিক বলের পিছনে না আসায় ব্যাটের ভিতরে লেগে বল উইকেট ভেঙ্গে দেয়।

এখানেই শেষ নয়। আট নম্বরে নেমে বেশ ভাল খেলছিলেন নাসির। মনে হচ্ছিল, তার ব্যাট থেকে লম্বা ইনিংস বেরিয়ে আসবে; কিন্তু অর্ধশতক থেকে মাত্র ৫ রান দুরে দাঁড়িয়ে নাসিরও ভুল পথে পা বাড়ালেন। বাঁ-হাতি স্পিনার অ্যাগারের অফ স্ট্যাম্পের ঠিক বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে মাঝ ব্যাটে আনতে পারলেন না নাাসির। ব্যাটের বাইরের কোনায় লেগে বল চলে গেল কিপারের গ্লাভসে।

মোদ্দা কথা বাংলাদেশের অদুরদর্শি ব্যাটিং লাইনআপ সাজানো ভুল কৌশল অবলম্বন ও ত্রুটিপূর্ণ ব্যাটিং অ্যাপ্রোচের কারণেই অস্ট্রেলিয়ান স্পিনাররা চেপে বসতে পেরেছিলেন। ধৈর্য্য, সংযম নিয়ে উইকেটে বেশি সময় কাটানোর চেষ্টা করলে অবশ্যই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও সফল হতে পারতেন।
তা যে পারতেন, এর প্রমাণ ওয়ার্নার-স্মিথ এবং ওয়ার্নার-হ্যান্ডসকম্বের জুটি। ওয়ার্নারের মত মারকুটে ব্যাটসম্যান স্লো উইকেটে হাত খুলে খেলার চেয়ে রয়েসয়ে খেলাকে অধিক যুক্তিযুক্ত ও লাগসই কৌশল মনে করেন।

তাই তো এ ড্যাশিং উইলোবাজ ৮৮ রান করতে সময় নিয়েছেন ২৬৬ মিনিট। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ক্রিজে থেকে ১৭০ বলের মোকাবিলায়, মাত্র চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ওয়ার্নার।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু অধিনায়ক মুশফিকের মাঝেই অমন অ্যাপ্রোচ দেখা গিয়েছিল। তিনি ২৫২ মিনিটে ১৬৬ বলে রান করেছেন ৬৮। আর কেউ সে পথে হাঁটার চেষ্টা করলেন কই?

সেই সঠিক পথে না হাঁটার চেষ্টাই এখন দারুণ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তাই তো দিন শেষে নাসিরের আক্ষেপ, ‘আমরা ১০০ থেকে ১৫০ রান কম করে ফেলেছি। স্কোর ৪০০-৪৫০ হলে ভাল হতো।’

এআরবি/আইএইচএস/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।