অফ স্পিনের বিপক্ষে কেন পরপর পাঁচ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান?

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:৫১ এএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সাফল্যে অনেক কিছুই ঢাকা পড়ে যায়। কারণ সবাই সাফল্যকেই বড় করে দেখেন। সাফল্যের মোড়ক আর বিশালতায় হারিয়ে যায় ছোটখাটো ব্যর্থতা ও ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো। ঢাকায় প্রথম টেস্ট শুরুর আগে মুমিনুলকে না খেলানো আর ইমরুলকে ওপেনারের বদলে ওয়ান ডাউন খেলানো নিয়ে কতো হইচই হলো।

তখন মনে হচ্ছিল সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে বুুঝি; কিন্তু শেরে বাংলায় ২০ রানের উদ্ভাসিত জয়ের পর সমালোচনার ঝড় বয়ে যাওয়া বহুদুওে, কেউ টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করলো না। মিরপুরে মুশফিক বাহিনীর জয়ের পর কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের লক্ষ্য-পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে সে অর্থে আর কথা হয়নি। তার একাদশ সাজানো ও ব্যাটিং অর্ডার যে মোটেই ঠিক ছিল না, ভুলে ভরা ছিল- তা নিয়েও সে অর্থে সমালোচনা হয়নি।

কিন্তু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আবার কোচ হাথুরুর ভুল ফর্মুলা! ঢাকায় পেসাররা কিছুই করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ার ২০ উইকেটের ১৯টিই নিয়েছেন স্পিনাররা, সাগরিকার উইকেটও হবে স্পিন সহায়ক- সেখানে একজন পেসার কম খেলানোর চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে তেমন হইচই হয়নি। বরং এটাকে কার্যকর সিদ্ধান্ত বলেই ভাবা হয়েছে।

কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। আবার ব্যাটিং অর্ডার সাজানোয় অদুরদর্শিতা। অস্ট্রেলিয়া একদিকে ডানহাতি অফ স্পিনার দিয়ে (নাথান লিওন) বোলিংয়ের সূচনা করেছে। অন্যদিকে পেসার প্যাট কামিন্স। কামিন্সের সাথে নতুন বল ভাগ করে নিয়েছেন অফ স্পিনার লিওন। তা দেখে, জেনে এবং বুঝেও ব্যাটিং অর্ডার একই থাকলো!

মিডিয়া সেন্টার প্রান্ত দিয়ে বোলিং করে গেলেন অফ স্পিনার লিওন। তার বিপরীতে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানরাই শুধু ব্যাট করলেন। একজন অফ স্পিনার ডান হাতিদের চেয়ে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে তুলনামুলক সফল, এটা প্রায় স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার। পাড়া এবং গলির ছেলেরাও এ অঘোষিত ফর্মুলা জানে। ব্যবহারও করে।

পাড়ার ক্রিকেটেও দুই প্রান্তে দু-জন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক অন্য যে কোন ক্যাটাগরির বোলার বাদ দিয়ে একজন অফ স্পিনারে হাত বল তুলে দেন। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ডান হাতি অফ স্পিনার ব্যবহারের উদ্দেশ্য একটাই- প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের একটু অস্বস্তিতে ফেলা।
ডান হাতি ব্যাটসম্যানের জন্য ডানহাতি অফ স্পিন মানেই হচ্ছে ভিতরে আসা ডেলিভারি। যা অনায়াসে খেলা যায়। তাই ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ডানহাতি অফ স্পিনারের সাফল্যও তুলনামুলক বেশ কম।

বাংলাদেশর প্রথম তিন ব্যাটসম্যান (তামিম, সৌম্য আর ইমরুল) যেহেতু বাঁ-হাতি, তা দেখে ও জেনেই অস্ট্রেলিয়ান টিম ম্যানেজমেন্ট প্যাট কামিন্সের সাথে অফ স্পিনার নাথান লিওনকে উদ্বোধনী বোলারের ভূমিকায় আনেন অসি ক্যাপ্টেন স্টিভেন স্মিথ।

সে ফর্মুলা কাজেও দিয়েছে। প্রথম ৩০ মিনিট যেতেই সাজঘরে তামিম ইকবাল। প্রথম টেস্টে সাকিবের অলরাউন্ড পারফরমেন্সের দ্যুতির কাছে ¤øান মনে হলেও তামিমের দুই ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে লড়াই করার সাহস জুগিয়েছে।

সেই তামিমকে এবার বোলিংয়ের সূচনা করতে এসে নিজের পঞ্চম ওভারে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেললেন লিওন। এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের অপর দুই টপ অর্ডার ইমরুল আর সৌম্য সরকারও অফস্পিনার লিওনের শিকার হলেন।

কাকতালীয়ভাবে তিনজনই লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়ালেন। এ তিনজনের সাথে অসি অফ স্পিনার লিওনের চতুর্থ শিকার হলেন আবার দলে ফিরে কিছু করার ইঙ্গিত দেয়া মুমিনুল হক। এ বাঁ-হাতিকেও ফাঁদ পেতে আউট করলেন লিওন।

অফ স্পিনার লিওন একদিকে বোলিং চালিয়ে যাচ্ছেন, তাকে নিবৃত করতে কোথায় ব্যাটিং লাইনআপ পাল্টে এবং নতুন কৌশল এঁটে তাকে থামাবে- তা না উল্টো লিওনকে সফল হবার সুযোগ দিল বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। তার বিরুদ্ধে ব্যাটিংয়ে নামানো হলো পাঁচ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে।

তামিম-সৌম্য, তিন নম্বরে ইমরুল, চারে মুমিনুল আর পাঁচ নম্বরে সাকিব আল হাসান। অফ স্পিনারের বিপক্ষে পরপর পাঁচ বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে খেলানো বড় ধরনের ঝুঁকি। তাতে ওই অফ স্পিনার একটা ছকে বল করতে পারেন, তার লাইন ও লেন্থ বদলানোর দরকার পড়বে না। তিনি একটা লাইনে বল করে বাঁ-হাতিদের কাছ থেকে সমীহ আদায় করতে পারবেন, তা বোধকরি মাথায়ই আসেনি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের। আর আসলেও হয়তো তা আমলে নেয়নি তারা।

তা না করা ছিল আরেক ভুল। এই ভুলের খেসারত- চা বিরতির আইে প্রথম ইনিংসের অর্ধেকটা শেষ। অফ স্পিনার নাথান লিওন একাই যার চার উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন। প্রায় সারাক্ষণ একই চেইনে বল করেছেন লিওন। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের একটু বেকায়দায় ফেলতে রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করে একটা কোন তৈরি করলেন এ মেধাবি অফ স্পিনার। অফ মিডলে বল ফেলে খানিক ভিতরে ঢোকানোর চেষ্টায় দারুন সফল হলেন লিওন। সে কৌণিক ডেলিভারির মুখে স্বচ্ছন্দে খেলতে কষ্ট হলো তামিম, সৌম্য, ইমরুল ও মুমিনুল হকের। চারজনই লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে ফিরলেন সাজঘরে।

এই চারজন আউট হয়েছেন বলেই শুধু নয়, একদিকে অফস্পিন বোলিং অব্যাহত থাকার পরও পরপর পাঁচজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে কেন নামানো হলো? সে প্রশ্ন সচেতন ক্রিকেট অনুরাগিদের।

কোচ হাথুরু হয়ত বলবেন, আমার ব্যাটিং অর্ডার আগে থেকেই ঠিক করা। তামিম আর সৌম্য ওপেন করবে, ইমরুল তিন আর মুমিনুল চারে খেলবে। যদিও পাঁচ নম্বর সাকিব বাঁ-হাতি স্পিনার অ্যাস্টন অ্যাগারের বলে আউট হয়েছেন, তারপরও প্রথম পাঁচজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে পরপর ব্যাটিংয়ে নামানো- বড় ধরনের অদুরদর্শিতার পরিচয়। তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনাও হলো। অথচ একটু ভেবে চিন্তে ব্যাটিং অর্ডার সাাজালেই লেন্থের কার্যকরিতা বন্ধ করে দেয়া যেত।

টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয়া। তাই কিপিং করে ক্লান্ত ও অবসন্ন হবার প্রশ্নই আসে না। তাহলে মুশফিককে কেন পাঁচে খেলানো হলো না? তাকে তো মুমিনুলের পরপরই নামানো যেত। পরপর কয়েকটি ইনিংসে চার নম্বরে খেললেও মুমিনুল একাদশে ফেরায় তাকে আবার নিজের স্থানটি ছেড়ে দিতে হয়েছে সাব্বিরের। তবে একের পর এক বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানরা যখন লিওনের বলে আউট হচ্ছিল তখন সাব্বিরকেও পাঁচে নামানো যেতো।

নাসিরও স্পিনে ভাল খেলেন। তাকেও পাঁচ নম্বরে ব্যবহার করা যেত। তাতে যে বাংলাদেশ একেবারে আকাশে উঠে যেত, তা নয়। তবে পাল্টা কৌশল তো অবলম্বন করা যেত। তা না করে অসিরা যে ফাঁদ পাতলো নিজেরা যেচে সে ফাঁদেই পা দিলো।

ঢাকায় দুই বাঁ-হাতি তামিম ও সাকিব প্রথম ইনিংসে জোড়া হাফ সেঞ্চুরি করেছেন, ১৫৫ রানের বড় জুটিও গড়ে উঠেছিল। তা দেখে হয়ত হাথুরু ভেবেছিলেন চট্টগ্রামেও তাই হবে; কিন্তু তা কি আর সব সময় হয়? সব দিন কি আর এক সমানও হয়?

এআরবি/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।