বাংলাদেশই কি নতুন শ্রীলঙ্কা?

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪৫ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০১৭

নব্বইয়ের দশকের কথা। বিশ্ব ক্রিকেটে পরাশক্তি হয়ে আবির্ভাব শ্রীলঙ্কার। অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বাধীন লঙ্কান দলটি হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। সমীহ আদায় করে নেয় বড় দলগুলোর। ১৯৯৬ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের পর তো সাড়া ফেলে দেয় শ্রীলঙ্কা।

এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি লঙ্কানদের। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকরত্নে দিলশানদের মতো কিংবদন্তিদের পেয়ে যায় তারা। ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করেছে লঙ্কানরা। যদিও জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারা-দিলশানদের বিদায়ের পর পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলা শ্রীলঙ্কা দলটি বর্তমানে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। তবে কিছু প্রতিভাবান তরুণদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়...।

ক্রিকেট বিশ্বে শ্রীলঙ্কার আবির্ভাব ঘটেছিল অনেক আগেই। ১৯৭৫ সালে তারা খেলেছিল প্রথম ওয়ানডে। টেস্ট যাত্রা শুরু ১৯৮২ সালে। তবে নব্বইয়ের দশকের আগে জয়ের চেয়ে পাল্লা ভারি ছিল হারের। লঙ্কানদের ক্রিকেট পরিসংখ্যান বলছে এমনটাই।

পরিবর্তনের হাওয়া লাগে নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে। মুত্তিয়া মুরালিধরন, অরবিন্দ ডি সিলভা, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনাৎ জয়সুরিয়াদের নিয়ে গড়া লঙ্কান দলটি নিজেদের সেরা সময়টা পার করে। ওয়ানডে ও টেস্ট দুই সংস্করণেই ক্রিকেট বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা।

তৎকালীন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশ দলের অনেক মিলও খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট অঙ্গনের সেই বদলে যাওয়ার দৃশ্যটা একেবারে সামনের সারিতে বসে দেখেছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশকে সেরকমই শক্তিশালী একটি দলে পরিণত করতে চান। চলতি বছরের মার্চে এই লঙ্কান বলেছিলেন, ‘২০১৯ সালের মধ্যে আমি বাংলাদেশকে ১৯৯৬ সালের শ্রীলঙ্কা বানাতে চাই।’

বাংলাদেশ দল এখন নিজেদের মাটিতে অপ্রতিরোধ্য। ওয়ানডেতে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। ওয়ানডের পর টেস্টেও এখন ঘরের মাঠে ভয়ঙ্কর দলে পরিণত হয়েছে। গত বছর টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল মুশফিক বাহিনী (১০৮ রানে)। ওটাই ছিল ইংলিশদের বিপক্ষে টাইগারদের প্রথম টেস্ট জয়।

এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও সেই ধারবাহিকতা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে মাটিতে নামিয়েছে মুশফিকের দল। টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টাইগারদের পাওয়া প্রথম জয়টা ২০ রানের। তার মানে, ঘরের মাঠে টানা দুই টেস্টে জয় পেলেন টাইগাররা।

বাংলাদেশ দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্ব মিডিয়া। ভারতের জনপ্রিয় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। শিরোনাম- ‘বাংলাদেশই কি নতুন শ্রীলঙ্কা?’। বাংলাদেশ দলের প্রশংসা দিয়েই শুরু করেছে। লিখেছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে উপমহাদেশের ক্রিকেটে (ক্রিকেটীয়) শক্তির ভারসাম্য আসছে। ১৯৯৬ সালে বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলঙ্কা দলটি যখন শক্তি হারাচ্ছে, বাংলাদেশ তখন নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করছে। ক্রিকেটের পরাশক্তির হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন টাইগাররা।

বাংলাদেশ দল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আগেই সমীহ জাগিয়ানা দল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঘরের মাঠেও দুর্দান্ত টেস্ট দল। সফরকারী দলের সমীহ আদায় করে নিচ্ছে নিয়মিত। গত বছর ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল। সিরিজ শেষ করেছিল ১-১ ব্যবধানে। এবার মুশফিক বাহিনী হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে (ঢাকা টেস্টে, ২০ রানে)। নব্বইয়ের মাঝামাঝি সময়ে অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কার ছায়াই যেন টাইগারদের মধ্যে।’

বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারও দেখছেন ৯৬- এর লঙ্কান দলের সেই ছায়া। বলেন, ‘হ্যাঁ, সে সময়ের লঙ্কান দলটি ছিল ব্যতিক্রম। বাংলাদেশ দলের সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও অারও কয়েকজন ক্রিকেটার খুব ভালো করছে। এই দলটি যেভাবে খেলছে, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। ৯৬- এর লঙ্কান দলটি যা করেছিল, সেটাই করছে বাংলাদেশ!’

‘সম্প্রতি আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টগুলোতে বাংলাদেশ দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছে। বর্তমানে ঘরের মাঠে টেস্ট পারফরম্যান্সই আমাদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখছে। নিজেদের কন্ডিশনে যেকোনো দলকে হারাতে পারি। বিশেষ করে, আমাদের স্পিনারদের জন্য আমরাই ফেরাবিট।’-যোগ করেন বাংলাদেশের হয়ে ৫০টি টেস্ট খেলা হাবিবুল বাশার।

নব্বই দশকের শ্রীলঙ্কা দল ও বর্তমান বাংলাদেশ দলের মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছেন সাবেক লঙ্কান ক্রিকেট রাসেল আরনল্ডও। শ্রীলঙ্কার হয়ে ৪৪ টেস্ট খেলা রাসেলের মতে, ‘উভয়ই (৯৬- এর শ্রীলঙ্কা ও বর্তমান বাংলাদেশ) খুবই কাছাকাছি এবং লড়াকু দল। ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশের বর্তমান কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে শ্রীলঙ্কার সেই সময়ের ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি জানেন কীভাবে একটি দলকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলতে হয়। সম্ভাবত লঙ্কান ক্রিকেটের সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই বাংলাদেশ দলকে তিনি সাজিয়েছেন।’

এনইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।