‘ইনশাআল্লাহ আবার কামব্যাক করব’

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৩:১১ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৭

তার যে কৃতিত্ব আছে, বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানের তা নেই। শুধু বাংলাদেশের কথা বলা কেন, মমিনুল হক হচ্ছেন বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্সের পর টানা ১১ টেস্টে অন্তত একবার পঞ্চাশ বা তার বেশি রান করার দুর্লভ রেকর্ড গড়েছেন।

কিন্তু এমন টানা ১০-১২ টেস্ট খুব ভাল খেলার পুরষ্কার কি পেলেন তিনি? হঠাৎ এক বা দুই টেস্টে রান করতে না পারলেই বাদ! তার আগের সব কৃতিত্ব, সাফল্য, অর্জন ও প্রাপ্তি শেষ? আগের পারফরমেন্সের কোনই মূল্য নেই?

যে কেউ বলবেন, কেন থাকবে না? অবশ্যই থাকবে। থাকা উচিৎ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে সম্ভবত এই উচিৎ-অনুচিতের বালাই নেই। থাকলে বাংলাদেশের মুমিনুল হক ঘরের মাঠে টেস্ট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টে দল থেকে বাদ পড়তেন না।

এরপর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট স্কোয়াডেরও বাইরে থাকতে হতো না তাকে। টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হাফ সেঞ্চুরি (২০১৩ সালের মার্চে, ৫৫) দিয়ে। একই সফরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে আবার হাফ সেঞ্চুরি (৬৪)। তৃতীয় টেস্টটাই শুধু হাফ সেঞ্চুরিশূন্য (২৩+২৯)।

২০১৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮১ রানের বিশাল ইনিংস দিয়ে শুরু। তারপর টানা ১১ টেস্টে তিন শতক আর অন্তত একটি ফিফটি। এমন দুর্লভ কৃতিত্বেও অধিকারি মুমিনুল হক এখন টেস্ট দলের বাইরে।

প্রধান নির্বাচক ও হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে মুমিনুলের বাদ পড়া নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। আনুষ্ঠানিক দল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচক ও কোচ নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যার সারমর্ম হলো, ‘মমিনুলের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স তেমন ভাল নয়। তার ব্যাটে রান নেই। তাই নেই মুমিনুল।’

খালি চোখে এ মন্তব্য ও ব্যাখ্যাকে অসাড় মনে হলেও পরিসংখ্যান কিছুটা তাই জানাচ্ছে। মুমিনুল ২০১৫ সালের জুলাই থেকে গত মার্চে গল টেস্ট (৫+৭) পর্যন্ত ৬ টেস্টে ১২ ইনিংসে করেছেন মাত্র ২৭৮ রান। (৫+৭+২৭+১২+২৩+৬৪+১+৬৬+২৭+০+৪০+৬ = ২৭৮)।

তারপরও ২২ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারের প্রায় ১৫-১৬ টেস্টে অনেক বেশি ভাল খেলার পর এমন হতেই পারে। নির্বাচকরা ও টিম ম্যানেজমেন্ট সেটা বিবেচনায় আনতেই পারতেন। এই না আনা ভক্ত ও সমর্থকদের মনোকষ্টের কারণ। অগনিত মুমিনুল ভক্ত যারপরনাই হতাশ।

বাংলাদেশ সমর্থকদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মুমিনুলের বাদ পড়া মেনে নিতে পারেননি। আজ দুপুরে দল ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রেস কনফারেন্সর প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিলেন মুমিনুল। কেন নেই মুমিনুল? কোন বিবেচনায় তাকে বাইরে রাখা হলো? প্রশ্নের পর প্রশ্ন। প্রশ্ন বাণে জর্জরিত প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হেড কোচ হাথুরুসিংহে।

তবে যাকে নিয়ে এত কথা, যার বাদ পড়া রীতিমত ‘টক অফ দ্যা কান্ট্রি’ সেই মুমিনুল কি হতাশ? তার অনুভুতি কি? খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাই না। তাহলে শুনুন, মুমিনুল মোটেই হতাশ নন। মন খারাপ কিন্তু অভিব্যক্তি স্বাভাবিক।

জাগো নিউজের সাথে শনিবার বিকেলে একান্ত আলাপে এ বাঁ-হাতি উইলোবাজ জানিয়ে দিয়েছেন হতাশা তাকে গ্রাস করতে পারেনি। কেন হতাশ নন? কথা বার্তায় পরিষ্কার মুমিনুল নিজেও মনে করেন, তার ফর্মটা মাঝে ভাল যায়নি।

তাইতো সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মমিনুল জানালেন, ‘আমি হতাশ নই। বাদ পড়াটাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে চাই না। আমি বাদ পড়া নিয়ে ভেবেছি। তাতে যে খুব হতাশ হয়েছি, তা নয়। হ্যাঁ দলে না থাকায় খারাপ লাগছে। তাই বলে হতাশায় মুষড়ে পড়িনি। বরং বাদ পড়াটাকে অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করছি। তাতে একটা নতুন বোধোদয় হয়েছে। আমার মনে হয় নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়টা আমার খুব একটা ভাল যায়নি। তবে সেটাও অস্বাভাবিক না। এটা অনেকেরই যায়। ক্যারিয়ারে কখনো কখনো এমন সময় আসে, যখন ফর্ম ও পারফরমেন্স একটু খারাপ হয়। ছন্দপতন ঘটে। আমারও হয়ত তেমন হয়েছিল।’

এ কারণেই মুমিনুলের অনুভব, ‘আমার মনে হয় আমাকে আরও বেশি ভাল খেলতে হবে। আমাকে বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে। এখন যা পরিশ্রম করি, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে। সে সাথে পারফরমেন্সের গ্রাফটাও আরও উঁচুতে টেনে তুলতে হবে। আমি জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবো আবার সেরাটা উপহার দিতে।’

অনেকেরই মত, শুধু মাত্র টেস্ট দলে থাকা এবং বছরে মাত্র একটি-দুটি টেস্ট খেলার কারণে মনোযোগ-মনোসংযোগে চিড় ধরেছে মুমিনুলের। ছন্দপতনও ঘটছে। বছরের বেশির ভাগ সময় তার সতীর্থরা ব্যস্ত সময় কাটান ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যটের প্র্যাকটিসে। আর তখন সাদা বলে প্র্যাকটিসের প্রহর গোনেন মমিনুল। এটা কি ভাল খেলায় বড় অন্তরায়?

বেশিরভাগ সময় দলের বড় অংশ যখন প্র্যাকটিস করে তখন আপনি একা একা থাকেন। এটা কি মনোযোগ-মনোসংযোগে চিড় ধরায়? বিনয়ী মমিনুল অবশ্য তা মানতে নারাজ। তার ব্যাখ্যা, ‘নাহ তেমন কোন অজুহাত দিতে চাই না। তবে এটা সত্য, আমরা বছরে মাত্র ২-৩টা টেস্ট খেলি।’

মুমিনুলের শেষ কথা, ‘ইনশাল্লাহ আবার কামব্যাক করতে পারবো। আমি বিশ্বাস করি ভাল খেললে আবার ফিরে আসবো।’ এ সিরিজে দলে ফেরার আশা করেন? মুমিনুল বলেন, ‘হ্যাঁ, সে চেষ্টা তো থাকবেই। প্রস্তুতি ম্যাচে ভাল খেলতে সাধ্যমত চেষ্টা করবো। সেখানে ভাল খেলতে পারলে দ্বিতীয় টেস্টে দলে জায়গা মিলতেও পারে।’

এআরবি/আইএইচএস/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।