হাবিবুল বাশার সুমন
‘১০০ ওভার ব্যাটই করতে পারি না, টেস্ট জিতবো কীভাবে?’
যে জিম্বাবুয়ে সর্বশেষ ১০ টেস্টে জিততে পারেনি। যে জিম্বাবুয়ে ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড আর আফগানিস্তানসহ মোট (শেষ ১০ টেস্টের মধ্যে) ৮টিতেই হেরেছে। ঘরের মাঠে টেস্ট র্যাংকিংয়ের সবার তলানিতে থাকা সেই জিম্বাবুয়ের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।
এরচেয়ে ব্যর্থতার, গ্লানির, হতাশার আর কি হতে পারে? ক্রিকেটবোদ্ধা, বিশ্লেষক, পন্ডিত থেকে শুরু করে পাড়ার ও গলির কিশোর ছেলেটির কণ্ঠেও একই সুর, জিম্বাবুয়ের মতো অতি দুর্বল, কমজোরি আর অনভিজ্ঞ দলের কাছেও দেশের মাটিতে টেস্ট হারলো বাংলাদেশ! সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে নাজমুল হোসেন শান্ত বাহিনীর এ করুণ পরিণতি ও অনুজ্জ্বল, শ্রীহীন পারফরম্যান্স কেন?
চেনাজানা উইকেটে দুই ইনিংসে এত খারাপ ব্যাটিংয়ের কারণ কী? সবাই কারণ খোঁজায় ব্যস্ত। হাবিবুল বাশার সুমন মনে করেন, ‘এত কারণ খুঁজে লাভ নেই। বড় ব্যাখ্যা কিংবা বিশ্লেষণেরও কোনো দরকার নেই। সোজা কথা, আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। টেস্টে যেমন ব্যাটিং দরকার, আমাদের ব্যাটাররা তা করতে পারেনি। তাই হেরেছি।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, নির্বাচক ও বর্তমানে বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার সুমনের সোজা-সাপ্টা কথা, ‘আমরা ১০০ ওভার ব্যাট করতে পারি না। টেস্ট জিতবো কীভাবে?’
পরিসংখ্যান সাক্ষী দিচ্ছে, প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৬১ ওভার ব্যাট করে ১০১ রানে অলআউট হয়েছে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ইনিংস স্থায়ী হয় ৭৯.২ ওভার।
হাবিবুল বাশার সুমনের অনুভব, বাজে ব্যাটিংই ডুবিয়েছে। আর সে সাথে টপ অর্ডারে কারও ভালো খেলতে না পারা, লম্বা সময় উইকেটে থেকে দীর্ঘ ইনিংস খেলতে না পারাও অনেক ভুগিয়েছে।
তাই সুমনের মুখে এমন কথা, টপ অর্ডার ভালো করছে না। সেটা এ ম্যাচেই শুধু নয়। পাকিস্তানের মাটিতে যে সিরিজ জিতেছিলাম, সেখানেও ওপরের দিকে ব্যাটাররা রান করতে পারেনি। টেস্ট ক্রিকেটে ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানরা রান করতে না পারলে ভালো করা ও ম্যাচ জেতা খুব কঠিন।
টেকনিকের ঘাটতি ও কমতি আছে কি না? জানতে চাইলে জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের ব্যাখ্যা, ‘ওসব কিছুই নেই। আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। আমাকে যদি কেউ সিলেট টেস্টের পোস্ট মর্টেম করতে দেন, তাহলে এক কথায় বলবো, আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। তাই হেরেছি। টেস্টে যেমন ব্যাটিং দরকার আমরা তা করতে পারিনি।’
জিম্বাবুয়ের প্রশংসা করে সুমনের কথা, জিম্বাবুইয়ানরা তাদের সীমিত সামর্থ্য অনুযায়ী অনেক ভালো ক্রিকেট খেলেছে; কিন্তু আমরা কিছুই খেলিনি। খুব বাজে ক্রিকেট খেলেছি। বলবো যে, অ্যাভারেজ ক্রিকেটের চেয়েও নিচের ক্রিকেট খেলেছি। তারপরও শেষমেশ জেতার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। বাট, এটা জেতার জন্য যথেষ্ঠ ছিল না। যতটুকু হয়েছে সেটা আমার মনে হয় হওয়ারও কথা ছিল না। হয়ে গেছে। জিম্বাবুয়ে আরও কম উইকেট হারিয়ে জিতলে অবাক হওয়ার কিছু থাকত না।
প্রথম ইনিংসের বাজে ব্যাটিংটাকে টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে হয় বাশারের। আমরা শেষ পর্যন্ত ফাইটব্যাক করলেও আমার মনে হয়, প্রথম ইনিংসের বাজে ব্যাটিংটাই আমাদের ম্যাচ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেখান থেকে জিম্বাবুয়ের কাছে হারা খুবই ব্যর্থতার। লজ্জার ও গ্লানির। ব্যাপারটা পানির মতো পরিষ্কার। আমরা ১০০ ওভার ব্যাট করতে পারিনি। টেস্টে ১০০ ওভার ব্যাট করা মিনিমাম রিক্যুয়ারমেন্ট। ১০০ ওভার ব্যাট করা মানে একদিনের একটু বেশি সময় উইকেটে কাটানো। সেই কাজটাও আমরা করতে পারিনি। তাও পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল টেস্ট দলের সাথে। একদিন পুরো, আর পরদিন ১০ ওভার ব্যাট করতে পারি না, টেস্ট ম্যাচ জিতবো কীভাবে?
এআরবি/আইএইচএস