সিপিআর কী, তাৎক্ষণিক যেটার কারণে প্রাণে বাঁচলেন তামিম!

ক্রীড়া প্রতিবেদক ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২৫

তামিম ইকবাল এখন শঙ্কামুক্ত। রিং পরানোর কারণে হার্টের ধমনীতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। হাঁটাচলাও করছেন। যদিও ডাক্তাররা ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন তাকে। অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টার আগে তামিমকে স্থানান্তর করা যাবে না। তাতে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

সোমবার যখন তামিমের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল, তখন অনেকেই তার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমনকি ডাক্তাররাও তার ব্যাপারে কোনো নিশ্চিয়তা দিতে পারেননি। ডাক্তাররা পরে জানিয়েছিলেন, কিছুক্ষণের জন্য হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার। এমন পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসাটা একেবারেই অলৌকিক।

বিজ্ঞাপন

তবে ডাক্তাররা ধন্যবাদ দিচ্ছেন মোহামেডান ক্লাবের ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরীকে। হার্ট অ্যাটাক করলে হাসপাতালে নিতে নিতে তাৎক্ষণিক রোগীকে কী করতে হবে, সে বিষয়ে তার অবশ্যই ট্রেনিং ছিল কিংবা জানতেন। সে কারণে তামিমকে যখন অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়, তখন তাকে সিপিআর দিয়েছিলেন ইয়াকুব চৌধুরী।

মূলত বিকেএসপির মাঠে থাকতেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন তামিম। ওই অবস্থায় হাসপাতালে নিতে নিতেই মৃত্যু হতে পারতো তার। কিন্তু ইয়াকুব চৌধুরী তার বুকের ওপর পাঞ্চ করতে থাকেন। প্রায় ২২ মিনিট তিনি তামিমের বুকে জোরে জোরে পাঞ্চ করেন। জরুরি মুহূর্তে এ কাজটিই রোগীর জীবন বাঁচায়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সিপিআর কী?

হঠাৎ করে কেউ কোনো সাড়া না দিলে দ্রুততম সময়ে সিপিআর শুরু করতে হয়। কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) হলো একটি জরুরি প্রক্রিয়া, যা একই সাথে মুখে মুখ দিয়ে বায়ু সঞ্চালন ও বুকে চাপ দেওয়ার সমন্বয়ে ম্যানুয়ালি হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা চালু রাখার মধ্যমে মস্তিষ্কের ডেমেজ থেকে রক্ষার তাৎক্ষণিক প্রচেষ্টা। যতক্ষণ না স্বতঃস্ফূর্ত শ্বাস-প্রশ্বাস পুনরুদ্ধার না হয় বা হাসপাতালে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, এই প্রক্রিয়া চালু রাখতে হয়।

ভিডিওতে দেখুন কীভাবে সিপিআর করতে হয়

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বুকের ওপর প্রচুর শক্তি দিয়ে চাপ দিতে হয়। সঠিকভাবে সিপিআর দিতে গেলে মিনিটে ১০০ বারও পাঞ্চ করা লাগে। পাঞ্চ করাই এ প্রক্রিয়ার অংশ। হৃৎপিণ্ড নিঃসাড় হয়ে গেলে সিপিআরের মাধ্যমে তা আবার সক্রিয় করার সম্ভাবনা থাকে। সফল সিপিআরে এভাবেই রোগীর জীবন বেঁচে যায়। মোহামেডানের ট্রেইনার ইয়াকুব চৌধুরী সময় মতো সঠিক কাজটিই করেছিলেন। তিনি সিপিআর চালু রেখেছিলেন বলেই বর্ডার লাইন ক্রস করার পরও তামিমের হৃদপিণ্ড আবার সচল হয় এবং জীবন রক্ষা পায়।

সিপিআর জেনে রাখা কেন জরুরি

বিজ্ঞাপন

অনেক সময় না জানার কারণে সিপিআর দিতে গেলে রোগীর স্বজনরা এর বিরোধিতা করেন। অনেকে মনে করেন, রোগীকে উল্টো মেরে ফেলা হচ্ছে; কিন্তু এ বিষয়টা যে কতটা জরুরি, তা বলে বোঝানো যাবে না।

তামিম ইকবালের এ ঘটনা থেকে আবারও এই সত্য সামনে চলে এলো, জীবন বাঁচাতে সিপিআর শিখে রাখা উচিত সবারই। এজন্য কিন্তু মেডিকেল পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন নেই। এই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন যে কেউ। তাতে আপনজনসহ চেনা-অচেনা বহু মানুষের জীবন বাঁচানো যায়।

হার্ট অ্যাটাক হয়েছে জানার পর কী করতে হবে

বিজ্ঞাপন

হার্ট অ্যাটাকের ন্যূনতম সন্দেহের ক্ষেত্রে রোগীকে রেফার করার আগে অবশ্যই সম্ভাব্য পরবর্তী অ্যাটাক ঠেকানোর জন্য জীবনরক্ষাকারী ‘স্ট্রেপটোকাইনেজ’ ইনজেকশন পুশ করার পর রেফার করা উচিত। এই ওষুধটি পরে অপ্রয়োজনীয় প্রমাণ হলেও রক্তের ঘনত্ব সাময়িকভাবে কমানো ছাড়া দেহের কোনো ক্ষতি করে না। সম্ভবত এটা না করায় তামিম দ্বিতীয় ম্যাসিভ অ্যাটাকে হার্ট ফেইলিওর এর শিকার হয়ে মৃত্যুর সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলেছিলেন।

আর হার্ট অ্যাটাকের যে কোনো উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে নিশ্চিত হলে চিকিৎসক দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দূরে কোথাও রওয়ানা হওয়ার চেয়ে নিকটস্থ যে হাসপাতালে এনজিওগ্রাম ও স্টেন্টিংয়ের ব্যবস্থা আছে, সেখানে চিকিৎসা নেওয়াই ভালো সিদ্ধান্ত। তাতে মূল্যবান সময় বেঁচে যায়। বাঁচে অমূল্য প্রাণ।

আইএইচএস/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।