বিফলে সোহানের লড়াকু সেঞ্চুরি, ২৩ রানের জয় মোহামেডানের

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:৪৩ পিএম, ২১ মার্চ ২০২৫

নুরুল হাসান সোহানের সক্ষমতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট, বিপিএল ও এনসিএল ও বিসিএলে বহুবার কঠিন বিপদে হাল ধরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার রেকর্ড আছে ডানহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটারের।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের চলতি আসরেও সোহানের দৃঢ়তায় দুই ম্যাচ জিতেছে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব। গেল ১৬ মার্চ চলতি মৌসুমের পঞ্চম ম্যাচে বিকেএসপি ৩ নম্বর মাঠে শাইনপুকুরের বিপক্ষে সোহানের ‘বিগ হান্ড্রেডে (১৩২) জয়ের ভীত গড়ে উঠেছিল ধানমন্ডির।

বিজ্ঞাপন

তারও আগে প্রথম ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে সোহানের ৫৮ রানের হার না মানা ইনিংসে ৮ বল হাতে রেখে ৪ উইকেটের জয় পায় ধানমন্ডি।

আজ শুক্রবারও হোম অব ক্রিকেট খ্যাত শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মোহামেডানের বিপক্ষে একাই লড়াই করেছেন সোহান। নিজের ব্যাটকে মশাল বানিয়ে ধানমন্ডিকে আলোর দিশা খুঁজে দিচ্ছিলেন। কিন্তু ধানমন্ডি অধিনায়কের সংগ্রামী ব্যাটিং কাজে দিলো না আজ। একজন সহযোগীর অভাবে অল্পের জন্য বিফলে গেছে সোহানের লড়াকু সেঞ্চুরি।

২১৬ রানের নড়বড়ে পুুঁজি নিয়েও শেষ পর্যন্ত ২৩ রানের স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে মোহামেডান। সোহানের সেঞ্চুরির পরও তামিম ইকবালের দলের কাছে ৪৩.৩ ওভারে ১৯৩ রানে গুটিয়ে গেছে ধানমন্ডি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

একটা সময় মনে হচ্ছিল, মোহামেডানের ২১৬ রানের ছোট পুঁজির বিপক্ষেও বড় ব্যবধানে হারবে ধানমন্ডি। কেননা ৬৮ রানেই ইনিংসের অর্ধেক উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল সোহানের দল। স্কোরবোর্ডে ১১৭ রান জমা পড়তেই সাজঘরে ফেরেন ধানমন্ডির ৭ ব্যাটার।

এরপর ১৫৮ রানে ৮ উইকেটের পতনের পর মনে হচ্ছিল, ধানমন্ডির হার সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সেই খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও হিমালয়ের বিশালতা নিয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে শেষ পর্যন্ত দারুণ লড়াই করেন সোহান। সব দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে একাই দলকে ধীরে ধীরে লক্ষ্যের কাছে নিয়ে যেতে থাকেন।

বিপর্যয়ের মুখে রয়েসয়ে খেললেও হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন ৫৫ বলে। যখন দেখেন কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার নেই তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো, তখন মারকুটে হয়ে ওঠেন সোহান। সঙ্গীহীন হয়ে লড়াই করেন শেষ ব্যাটারকে নিয়ে। আউট হওয়ার আগে ইনিংসের ৪৩তম ওভারে মোহামেডান পেসার সাইফউদ্দীনকে টানা দুই বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে ৯২ বলে শতরান পূর্ণ করেন সোহান।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তিন নম্বর বলে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে আবার ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানার একদম সামনে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন সোহান। শেষ হয় ধানমন্ডি ক্যাপ্টেনের ৯৩ বলে ৪ ছক্কা ও ১০ বাউন্ডারিতে সাজানো ১০০ রানের সাহসী ও দৃঢ়চেতা ইনিংস। স্বস্তির জয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে মোহামেডান শিবির।

এ জয় লিগ টেবিলে মোহামেডানের অবস্থান সমৃদ্ধ করেছে। এখন ৭ ম্যাচে ৫ জয়ে মোহামেডানের পয়েন্ট দাঁড়ালো ১০। অন্যদিকে সমান ম্যাচে ধানমন্ডি ক্লাব হারলো চতুর্থবারের মতো।

আগের রাতে এক পশলা হালকা বৃষ্টি হয়েছে। সকালের আকাশে রোদ ছিল না। মেঘ আর সূর্যের লড়াই চলেছে দুপুরের পর পর্যন্ত। একটু আধটু বাতাসও বইছিল। সব মিলে খানিক সিমিং কন্ডিশন। স্বাভাবিকভাবে বোলাররা উইকেট থেকে কিছু সাহায্য পেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ধানমন্ডির প্রধান স্ট্রাইকবোলার অভিজ্ঞ পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি এবং দুই বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ ও সাঞ্জামুল ইসলাম মাপা লাইন ও লেন্থে বল ফেলে মোহামেডান ব্যাটারদের হাত খুলে খেলা থেকে বিরত রাখেন। মোহামেডান ব্যাটাররাও একটু বেশি সতর্ক ও রক্ষণাত্মক মেজাজে খেলেন।

প্রথম তিন ব্যাটার রনি তালুকদার (৬৪ বলে ৩৯), অধিনায়ক তামিম ইকবাল (৫৩ বলে ২৬) ও ওয়ান ডাউন মাহিদুল ইসলাম অংকন (৭৭ বলে ৪৪) খেলেছেন অনেক স্লো ও কম স্ট্রাইকরেটে।

ওপরের দিকে ব্যাটারদের স্ট্রাইকরেট কম থাকায় রানের গতি বাড়াতে সাইফউদ্দীনকে ৪ নম্বরে নামানো হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ৯ বল খেলেও রান খাতা খুলতে না পারা বাঁহাতি সাইফউদ্দীন আউট হন কামরুল ইসলাম রাব্বির অফস্টাম্পের বাইরে থাকা বল টেনে মারতে গিয়ে। ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে উইকেট ভেঙে দেয় তার।

পরের ধাক্কাটা ছিল বিশাল। ব্যর্থ হন মুশফিকুর রহিম। উইকেট স্লো দেখে হৃদয়ের আগে পাঠানো হয় মুশফিককে। আগের ম্যাচে ৪৯ রান করলেও আজ দলের বিপর্যয়ে কিছুই করতে পারেননি দেশের ক্রিকেটের অভিজ্ঞতম ব্যাটার। ০ রানে থাকতে কামরুল ইসলাম রাব্বির হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গিয়েও চরম ব্যর্থ মুশফিক। পছন্দের শট স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে ফিরে গেছেন মাত্র ৬ রানে।

বিজ্ঞাপন

হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ (২৪ বলে ২৬) ও আবু হায়দার রনি (১৩ বলে ১৮*) শেষ দিকে হাত খুলে কিছু রান করে দলকে দুইশো পার করে দিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ নম্বরে নেমে ১০০+ স্ট্রাইকরেটে হাফসেঞ্চুরি (৪৭ বলে ৫৩*) উপহার দিয়েছেন হৃদয়। এই ইনিংসের ওপর ভর করেই ২০০ পার করে মোহামেডান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

মোহামেডান: ৫০ ওভারে ২১৬/৬ (রনি তালুকদার ৩৯, তামিম ইকবাল ২৬, মাহিদুল অংকন ৪৪, মুশফিকুর রহিম ৬, হৃদয় ৫৩*, মেহেদি হাসান মিরাজ ২৬, আবু হায়দার রনি ১৮*; কামরুল ইসলাম রাব্বি ৩/৫৪, হাসান মুরাদ ২/৩১, সাঞ্জামুল ১/৪১)।

বিজ্ঞাপন

ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাব: ৪৩.৩ ওভারে ১৯৩ (হাবিবুর রহমান সোহান ৩১, সাঞ্জামুল ৭, ফজলে রাব্বি ০, ইয়াসির আলী রাব্বি ১৪, নুরুল হাসান সোহান ১০০, মাসুম খান টুটুল ১৮; সাইফউদ্দীন ৩/৩৬, তাসকিন ২/৫০, তাইজুল ২/৪০, আবু হায়দার রনি ১/১৪, মিরাজ ১/২৪, নাসুম ১/৩১)।

ফল: মোহামেডান ২৩ রানে জয়ী।

এআরবি/এমএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।