বেহাল জবির শৌচাগার, চরম দুর্ভোগে ছাত্রীরা

নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবন পার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের আবাসন ও ক্যাম্পাসের আয়তন সমস্যা সমাধান রাতারাতি সম্ভব না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শৌচাগার বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও সেদিকে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শৌচাগার বেহাল অবস্থায় থাকলেও অনেক বিভাগে আবার তাও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন অল্প হওয়ার অজুহাতে প্রশাসন অনেক সমস্যার সমাধান না করলেও শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জবির শৌচাগারের টয়লেটগুলোর বেহাল অবস্থা, আশেপাশেই গেলেই গন্ধে বমি আসে। এসব শৌচাগারের ভিতরে আরো খারাপ অবস্থা। শৌচাগারগুলো ভেতর অন্ধকার। অধিকাংশ শৌচাগারের দরজা নেই। দরজা থাকলেও খিল নেই। খিলের কাজ চলে নষ্ট কলমে। শৌচাগারগুলোর এমন বেহাল দশা মেনে নিতে পারছেন না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে একাধিক বিভাগ থাকলেও ছাত্রীদের জন্য একটিও শৌচাগার নেই। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, শৌচাগার নেই। সেসব বিভাগের শৌচাগার হয়তো আগে ছিল, তা ভেঙ্গে বর্তমানে সেস্থানে শিক্ষকদের বসার কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে।
ভাষা শহীদ রফিক ভবনে রয়েছে চারটি বিভাগ। এ ভবনে প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র ২টি শৌচাগার। যার মধ্যে নিচ তলারটি পুরাতন ভাঙ্গা বেঞ্চ দিয়ে স্টোর রুম বানানো হয়েছে। এই ভবনের তৃতীয় তলায় ইতিহাস ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি কক্ষ। এটি ব্যবহারের অনুপোযী হলেও ছাত্ররা বলতে গেলে জোর করেই ব্যবহার করছেন। এখানে যে শৌচাগার রয়েছে সেগুলোর খিল নেই। ছাত্ররা নষ্ট কলম দিয়ে খিলের কাজ করে। এটিতে সারা বছর ময়লা পানি জমে থাকে। এর ভেতরে তিনটি শৌচাগারেই অবস্থা বেহাল। কেউ নিতান্ত বাধ্য না হলে প্রবেশ করেন না। এর গন্ধে অতিষ্ট এর আশপাশের চলমান শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। ভাষা শহীদ ভবনে ছাত্রীদের জন্য কোনো শৌচাগার নেই।এ ভবনের নতুন একাডেমিক ভবনে ছাত্রীদের কমন রুমে যেতে হয় প্রাকৃতিক কাজ করার জন্য। এখানে ভিড় লেগেই থাকে। কারণ যেসব বিভাগে মেয়েদের শৌচাগার নেই তারা এটি ব্যবহার করেন।
নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় গত একবছর ধরে একটি শৌচাগারে রান্নাঘর নির্মাণ করে শিক্ষকদের জন্য ক্যান্টিন বানানো হয়েছে। এ ভবনের ৪র্থ তলায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, নৃবিজ্ঞান, আইন ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্রদের জন্য রয়েছে মাত্র একটি শৌচাগার। এখানেও ছাত্রীদের জন্য কোনো শৌচাগার নেই। তারাও অন্য বিভাগ ও ভবনের নিচতলায় মেয়েদের কমন রুমের শৌচাগার ব্যবহার করেন।
বিজ্ঞান অনুষদের সবগুলো বিভাগের শৌচাগার বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। এখানে শুধুমাত্র ছাত্ররা বসার অবস্থা না থাকায় দাঁড়িয়ে প্রসাব করে। এখানেও মেয়েদের কোনো শৌচাগার নেই। মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞান বিভাগের শৌচাগার অন্ধকার, নোংরা আর দুর্গন্ধময়। দরজায় খিল নেই, মেয়েদেরও শৌচাগার নেই।
কলা ভবনের দর্শন বিভাগের যে শৌচাগারটি রয়েছে তাও আবার সেমিনারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থীকেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এখানেও মেয়েদের জন্য শৌচাগার নেই। ইংরেজি বিভাগের শৌচাগারের অবস্থাও তেমন ভালো না। এখানকার শৌচাগার নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শৌচাগারেরও অবস্থা ভয়ানক খারাপ। এখানে রয়েছে দুটি অপরিষ্কার টয়লেট। টয়লেটগুলো যেমন নোংরা তার চেয়েও বেশি দুর্গন্ধ। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২টি শৌচাগারের অবস্থা জরাজীর্ণ। এদের একটির খিল অনেক কষ্টে আটকানো গেলেও আরেকটা আটকানো যায় না। ফলে খুব কায়দা-কানুন করে পিঠ ঠেকিয়ে বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে কেবল মাত্র প্রসাব করা যায়।
দুটি বেসিনেই নষ্ট ট্যাপ আর একটা ট্যাপ দিয়ে যাও একটু পানি পড়ে তা নষ্ট পাইপের জন্য সম্পূর্ণ শৌচাগার ভেসে যায়। ভেতরে পানির লাইনে সমস্যা। ফ্ল্যশ নষ্ট হয়ে পোঁকামাকড় আর নোংরা পানির ট্যাংকে পরিণত হয়েছে। যা থেকে নিয়মিত দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ বিভাগে ছাত্রীদের জন্য আলাদা শৌচাগার থাকলেও তার অবস্থা প্রায় একই।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। তারা আশু এর প্রতিকার চান। অনেক মেয়েও এই বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান লিখন জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভাগগুলোতে টয়লেটের সমস্যা থাকলেও তা সংস্কার করা হচ্ছে না। অধিকাংশ পানির ট্যাপই অকেজো থাকতে দেখা যায়। টয়লেটের ফ্ল্যাশ অকেজো থাকায় তা নোংরা এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়। ফলে শিক্ষার্থীদের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মেয়েরা। তাছাড়া অব্যবস্থাপনার কারণে এবং নিয়মিত পরিষ্কার না করায় অধিকাংশ শৌচাগারই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি। তিনি বিশেষ করে নতুন ভবনের ক্যান্টিনের পাশের টয়লেটগুলোর দ্রুত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংস্কার প্রত্যাশা করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইঞ্জিনিয়ার ওহিদজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, সব বিভাগে ক্লিনার আছে। তারা কেন পরিষ্কার করে না তা আমি জানি না। তবে আমার নির্দেশ থাকবে ক্লিনারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার করার পরামর্শ প্রদান করেন।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানও প্রোকৌশল দফতরের কথা বলেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার চন্দ্র সাহা নিজেও স্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শৌচাগার ব্যবহারের অনুপোযোগী।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সবগুলো বিভাগের শৌচাগার কী অবস্থায় আছে তা আমার কাছে সুষ্পষ্ট নয়। কোন বিভাগ যদি বিষয়টি আমাদের নজরে দেন আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
তিনি আরো বলেন, বিভাগগুলো কীভাবে চলবে তা বিভাগীয় প্রধানরা ভালো জানেন। তাদের কী সমস্যা রয়েছে তা সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানাতে হবে। তবে বেশ কিছু বিভাগের শৌচাগার পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ওই বিভাগের নির্দেশে। তাছাড়া প্রতিটি বিভাগে আলাদা আলাদা ক্লিনার রয়েছে।
এসএম/বিএ