সেই রানা প্লাজায় এখন চলছে কই মাছের চাষ


প্রকাশিত: ০৬:১৩ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০১৬

এক সময় স্থান‌টি‌‌তে হাজার হাজার প্রা‌ণের সঞ্চার ছিল। এরপর প‌রিণত হ‌লো মৃত্যুকূ‌পে। এখন সেখা‌নে গ‌ড়ে উঠেছে শ্র‌মি‌ক সংগঠনগু‌লোর অস্থায়ী স্মৃ‌তিস্তম্ভ। অার সেই স্মৃ‌তিস্তম্ভ এখন প‌রিণত হ‌য়ে‌ছে রা‌তের অাড্ডাস্থ‌লে। সারা‌দিন যেসব মানুষ কাজ ক‌রে ক্লান্ত হ‌য়ে প‌ড়ে সেই মানুষগু‌লোই একটু ঠাণ্ডা হ‌তে এসে ব‌সে এই স্ম‌ৃতিস্ত‌ম্ভে।

পাঠক একটুও‌ কি অনুমান কর‌তে পার‌ছেন, কোন স্থান‌টির কথা বল‌ছি? বল‌ছি দে‌শের সব‌চে‌য়ে বড় ট্রা‌জে‌ডি রানা প্লাজার কথা।

অার মাত্র এক‌দিন পর অাস‌ছে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ট্রা‌জে‌ডির তিন বছর পূ‌র্তি হ‌তে চ‌লে‌ছে।

অার এই দিন‌টি‌তেই ঘ‌টে‌ছিল বাংলাদে‌শের অন্যতম রানা প্লাজা ধ‌সের ঘটনা। এ ঘটনায় মৃত্যুবরণ ক‌রে‌ছেন এক হাজার ১৭৫ জন পোশাক শ্র‌মিক। অাহত হ‌য়ে পঙ্গুত্ববরণ ক‌রে‌ছেন প্রায় অাড়াই হাজার শ্র‌মিক। অার নি‌খোঁজ র‌য়ে‌ছেন ৯৯৯ জন শ্র‌মিক।

শুক্রবার রাত ১০টায় হা‌জির হই রানা প্লাজায় গ‌ড়ে উঠা স্ম‌ৃতিস্ত‌ম্ভে। সেখা‌নে গি‌য়ে দেখা যায় কিছু শ্র‌মিক ব‌সে অা‌ছেন স্মৃ‌তিস্ত‌ম্ভের নি‌চে। তা‌দের ম‌ধ্যে কেউ রিকশাচালক। কেউবা অাবার দিনমজুর।

রানা প্লাজা ভবন‌টি যে স্থা‌নে ছিল সেখা‌নে এখন এক কোমর পা‌নি। অ‌নে‌কে জানা‌লেন সেই কোমর পা‌নি‌তে কই মাছ চাষ কর‌ছেন কেন্দ্রীয় যুবলী‌গের এক নেতা ও তার বোন। নাম জান‌তে চাই‌লে তারা বল‌তে সাহস পান‌নি।

অাশরাফুল ইসলাম না‌মে এক পথচারী বল‌লেন, রানার যেসব সম্প‌ত্তি সরকার সিলগালা ক‌রে‌ছে সেগু‌লো এক‌দিন সরকা‌রের হাতছাড়া হ‌য়ে যা‌বে। কারণ স্থানীয় অাওয়ামী লী‌গের কিছু প্রভাবশালী সেগু‌লো দখ‌লের পায়তারা কর‌ছে।

রানা প্লাজার পা‌শেই ছিল এক‌টি চারতলা ভবন। রানা প্লাজা ধ‌সে সেই ভব‌নের উপর পড়ায় সে‌টিও সে‌দিন গু‌ড়ি‌য়ে যায়। এ ঘটনার পর অ‌নে‌কে বি‌ভিন্নভা‌বে লাভবান হ‌লেও একটুও লাভবান হন‌নি ওই ভব‌নের মা‌লিক র‌বিন্দ্র কুমার মন্ডল। অার তাই তি‌নি সেই স্থান‌টিতে তু‌লে‌ছেন টি‌নের তৈ‌রি বেশ কিছু দোকান। সেগু‌লো ভাড়া দি‌য়ে‌ছেন।

সেখা‌নেই গ‌ড়ে উঠে‌ছে কি‌শোরগঞ্জ না‌মে এক‌টি হো‌টেল। অালাপকা‌লে হো‌টেল ম্যা‌নেজার জানা‌লেন, রানা প্লাজার মা‌লি‌কের অা‌গে খুব প্রভাব ‌ছিল। ভবন ধ‌সের পর বল‌তে গে‌লে সাভা‌রে তার অার কো‌নো নাম নেই।

তি‌নি বল‌লেন, মানুষ অার ইতিহাস ম‌নে রাখ‌তে চায় না। সারা‌দিন অামরা এত ব্যস্ত থা‌কি রানা প্লাজার ঘটনা ম‌নে প‌ড়ে বছর ঘু‌রে এলে স্মৃ‌তিস্ত‌ম্ভে ফুল দেয়া দে‌খে। অথচ ওই স্থান‌টি‌তে অামরা হো‌টে‌লের ময়লাগু‌লো ফেল‌ছি।

শা‌হেদ অালী না‌মে এক দোকানদার জানা‌লেন, সো‌হেল রানার বেশ কিছু সম্প‌ত্তি অা‌ছে সাভা‌রে। সেগু‌লো সরকার সিলগালা ক‌রে রে‌খে‌ছে। এভা‌বে কিছু‌দিন থাক‌লে সেগু‌লো দখল হ‌য়ে যা‌বে। অথচ সরকার চাই‌লেই ওইসব সম্প‌ত্তি ব্যবহার ক‌রে‌ রানা প্লাজায় অাহত‌দের জন্য বা পোশাক শ্র‌মিক‌দের জন্য এক‌টি তহ‌বিল গঠন ক‌রে দি‌তে পা‌রে। তাহ‌লে সম্প‌ত্তিগু‌লো রক্ষা পা‌বে।

একই কথা বল‌লেন স্থানীয় সাংবা‌দিক সাইফুর ইসলাম সা‌কিব। তি‌নি বল‌লেন, ভবন ধ‌সে এতগু‌লো মানু‌ষের মৃত্যুর পর অামরা একটুও স‌চেতন হই‌নি। সেই স‌ঙ্গে শ্র‌মিক‌দের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেই অা‌গের ম‌তোই র‌য়ে গে‌ছে। তি‌নি ম‌নে ক‌রেন সরকারের উচিত জরু‌রি ভি‌ত্তি‌তে এসব ব্যাপার নি‌য়ে ভাবা।

উ‌ল্লেখ্য, ২০১৩ সা‌লের ২৪ এপ্রিল সকাল পো‌নে ৯টার দি‌কে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে। এ দুর্ঘটনায় এক হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। নি‌খোঁজ র‌য়ে‌ছে ৯৯৯ জন। বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে রানা প্লাজা ধ‌সের ঘটনা।

এমএএস/একে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।