টার্কি পালন করে সফল জিল্লুর রহমান
শখের বসে টার্কি পালন করে এখন সফলতার মুখ দেখছেন নওগাঁর জিল্লুর রহমান। টার্কি খামার গড়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তার টার্কি খামারের কথা জেনে খামার গড়ে তোলার জন্য অনেকেই ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছেন।
নওগাঁ সদর উপজেলার শালুকা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনতলা বিশিষ্ট টার্কি খামার গড়েছেন আলহাজ্ব জিল্লুর রহমান। এইচএসসি পাস করার পর দিল্লির একটি কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। সেখানে ভাল না লাগায় চলে যান আমেরিকায়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হন ডালাস হাইস্কুলে। এরই মধ্যে টুইন টাওয়ারে হামলা হওয়ায় আর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। ২০০২ সালের দিকে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
এরপর গ্রামে বাবার সঙ্গে প্রথমে চালকলের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা ভালো না হওয়ায় পরে গড়ে তোলেন গরুর খামার এবং পাশাপাশি মুরগির খামার। অজ্ঞাত রোগে কয়েকটি গরু মারা যায়। লোকসান হওয়ায় গরু এবং মুরগির খামার বন্ধ করে দেন। খুঁজতে থাকেন বিকল্প হিসেবে কিছু করা যায় কিনা। আমেরিকায় পড়াশুনা করা অবস্থায় টার্কি বিষয়টি তার মাথায় আসে। আর এ সৌখিন পাখিটি পালনের আগ্রহ হয়।
টার্কি বড় আকারের একটি গৃহপালিত পাখি। ময়ূরের মতো পেখম মেলতে পারে। ভারতে টার্কি পালনের বিষয়টি জানতে পেরে গত তিন বছর আগে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভারত থেকে ২২টি টার্কির বাচ্চা নিয়ে আসেন। প্রতি জোড়া টার্কির খরচ পড়ে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। এই ২২টি টার্কির মধ্যে মোরগ ১৪টি এবং মুরগি ৮টি।
শুধু টার্কি পালনই নয় পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন ‘নাফি পাখি সংগ্রহশালা’। যেখানে রয়েছে তিতির, লাভ বার্ড, গারল, বাজুরিকা, ঘুঘু, হরেক রকমের কবুতর ও ফেনসি বার্ডসহ কয়েক প্রজাতির পাখি। টার্কি নিচ তলায় ও তৃতীয় তলায় রাখা হয়েছে। এছাড়া হরিণ পালনের ইচ্ছা পোষণ করেন।
জিল্লুর রহমান জানান, টার্কির খাবারের জন্য কোনো সমস্যা হয় না। দানাদার থেকে কলমির শাক, বাঁধাকপি বেশি পছন্দ করে। এগুলো জোগার করা সহজ। মাংস উৎপাদনের জন্য দানাদার খাবার দেয়া হয়। ওজন হয় প্রায় ১৫/১৬ কেজি। আর ডিমের জন্য ৭/৮ কেজি ওজন হয়ে থাকে। টার্কির রোগ বালাই খুবই কম। বছরে ১১০ টির বেশি ডিম দিয়ে থাকে। ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দিতে শুরু করে। ছয় মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় পাঁচ থেকে ছয় কেজি। আর পুরুষগুলোর প্রায় আট কেজি।
তিনি আরও জানান, প্রথমে টার্কির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। এরপর নিজেই একটি ‘ইনকিউবেটর’ যন্ত্র তৈরি করেন। সমস্যা একটাই যে দিনে কয়েকবার ডিম উল্টে দিতে হয় হতো। আর আর্দ্রতা ঠিক রাখার জন্য যন্ত্রের বাইরে পানি ছিটাতে হয়। ভেতরেও পানি রাখতে হয়। এই যন্ত্রের সাহায্যে ২৭ দিনে টার্কির ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। গত দুই বছরে তিনি ২২টি টার্কি থেকে প্রায় ৭০০ টার্কি বিক্রি করেছেন। বর্তমানে খামারে রয়েছে ৩০০ টার্কি। এখন ডিম দেয়ার উপযোগী প্রতি জোড়া টার্কি বিক্রি করছেন আট হাজার টাকায়।
জিল্লুর রহমান জানান, টার্কির দাম তুলনামূলক একটু বেশি। উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেশি। চর্বি কম হওয়ায় অন্যান্য পাখির তুলনায় মাংস খুবই সুস্বাদু। তবে বাণিজ্যিকভাবে মাংস উৎপাদন এবং টার্কি প্রজাতির বংশ বৃদ্ধি করা হবে।
এসএস/এমএস