২০১৭-এর পর সীমান্ত অরক্ষিত থাকবে না : বিজিবি ডিজি


প্রকাশিত: ০২:৫১ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বীরত্ব ও ঐতিহ্যের গৌরবমণ্ডিত এক সুশৃঙ্খল আধা-সামরিক বাহিনী। প্রতিষ্ঠার পর ২১৬ বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বর্তমানে এ বাহিনীর দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপকতা বৃদ্ধি এবং কর্মকুশলতা বহুমাত্রিকতা লাভ করেছে। ১৭৯৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক গঠিত ‘ফ্রন্টিয়ার প্রটেকশন ফোর্সে’র নাম পরিবর্তন করে ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন ‘রামগড় লোকাল ব্যাটেলিয়ান’ নামে এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।

‘ফ্রন্টিয়ার গার্ডস’, ‘বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ’, ‘ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলস্’, ‘ইপিআর’ থেকে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ এ বাহিনী ‘বিডিআর’ (বাংলাদেশ রাইফেলস্) নাম ধারণ করে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বাহিনীর সদর দফতরে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর নতুন নাম ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ পায় এ বাহিনী।

বর্তমানে বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। সম্প্রতি জাগো নিউজের কাছে বিশেষ সাক্ষাতকারে বাহিনীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন তিনি। আজিজ আহমেদ জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের পর বাংলাদেশের সীমান্ত আর অরক্ষিত থাকবে না। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো। আজ থাকছে এর প্রথম পর্ব।

জাগো নিউজ: আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
আজিজ আহমেদ: জ্বি, শুভেচ্ছা। ভালো আছি।

জাগো নিউজ: অনেক দিনই তো হলো আপনি বিজিবির ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামীতে বিজিবিকে নিয়ে কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে?
আজিজ আহমেদ: এই মুহূর্তে আমি দুটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। স্বাধীন সার্বভৌম এ দেশের ৫৩৯ কিলোমিটার যুগ যুগ ধরে অরক্ষিত। আমি আসার পর এই অরক্ষিত সীমান্ত রক্ষা করা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে অনেকগুলো বিওপি করেছি। এ বছরের জুন নাগাদ পার্বত্য অঞ্চলে ১৩২ কিলোমিটার এবং সুন্দরবন এলাকায় ৬০ কিলোমিটারসহ মোট ১৯২ কি.মি. ছাড়া পুরো সীমান্ত এলাকা বিওপির নজরদারির আওতায় চলে আসবে।
    
আমার প্রথম লক্ষ্য বছর শেষের আগেই বাকি ১৯২ কি.মি. সীমান্ত নিরাপত্তা ও নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা। এ জন্য বিওপি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি, কাজও চলছে। এই বছরই আরও ২/১টি ভাসমান বিওপি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে হয়তো ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের আর কোনো সীমানা অরক্ষিত থাকবে না।

দ্বিতীয়ত, লজিস্টিক সাপোর্ট, ট্রেনিং, ইক্যুইপমেন্ট আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। ধীরে ধীরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।

জাগো নিউজ: বিজিবি সদস্যদের নিরাপত্তা ও সীমান্ত রক্ষায় উন্নত ট্রেনিং দিচ্ছেন?
আজিজ আহমেদ: সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হয়। টেকনিক পরিবর্তন হয়। টেকনোলজিও পরিবর্তন হয়। সেসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অস্ত্র, ইক্যুইপমেন্ট, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি। আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জেসিওদের বিভিন্ন স্থানে ট্রেনিংয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন প্রমোশন ক্যাডারের ট্রেনিং দিয়ে তাদের আধুনিক করার চেষ্টা চলছে।

জাগো নিউজ: প্রতিবেশি দেশগুলোর সীমান্ত বাহিনীর সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে বিজিবির কি আরো জনবল বাড়ানো উচিত নয়?
আজিজ আহমেদ: আমাদের বিজিবির বিওপিগুলোর মধ্যে অনেক দূরত্ব। ভারত কিংবা মিয়ানমারের তুলনায় আমাদের বিওপিগুলোর দূরত্ব বেশি। এই ঘাটতি পূরণ করতে হলে দরকার জনবল নিয়োগ। আমাদের প্রায় ৫২ হাজারের উপরে জনবল দরকার। এই জনবল ঘাটতি পূরণের চেষ্টা চলছে।

জাগো নিউজ: বিজিবির দায়িত্ব সীমান্ত রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ জন্য আর কতো বিওপি কিংবা ব্যাটেলিয়ান প্রয়োজন?
আজিজ আহমেদ: ব্যাটেলিয়ান এবং বিওপি আরো বাড়ানো দরকার। সরকারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সীমান্ত রক্ষা ও রাস্তা করার। এসবের জন্য সীমান্তে চারটি নিরাপত্তামূলক ও দুটি কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ান দরকার। সেনাবাহিনী অনেক সীমান্তে কনস্ট্রাকশনের কাজ করে থাকে। কিন্তু সব জায়গায় সেনাবাহিনীর পক্ষে তা সম্ভব হবে না। সেজন্য ভবিষ্যতে সীমান্তে যেসব রাস্তা হবে সেসব রক্ষা, মেইনটেনেন্স, যন্ত্রপাতি রক্ষা ও নিরাপত্তায় বিজিবির আরো ব্যাটেলিয়ান দরকার পড়বে। আমরা আলোচনা করেছি। প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছি।

জাগো নিউজ: বিভিন্ন অরক্ষিত এলাকায় বিওপি ও ব্যাটেলিয়ান করবেন, কিন্তু নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ ও তাদের সুবিধার জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে?
আজিজ আহমেদ: প্রত্যন্ত এলাকায় করা বিওপি ও ব্যাটেলিয়ানের মধ্যে সমন্বয় ও দ্রুত যোগাযোগ রক্ষা ও লজিস্টিক্যাল মেইনটেইন করতে হবে। এজন্য হেলিকপ্টার দরকার। এয়ার উইং করা হচ্ছে। আমরা জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছি। এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের একটা হেলিকপ্টার রয়েছে। আরো দুটি চেয়েছি। এসব পেয়ে গেলে বিজিবি এয়ার উইং করা হবে। এতে করে জরুরি অবতরণ, যোগাযোগের জন্য অন্য কোনো বাহিনীর প্রতি নির্ভর করতে হবে না।

জাগো নিউজ: পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে যদি বলতেন।
আজিজ আহমেদ : বিচারিক বিষয়, আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। ১৬২ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। অগ্রগতি ভালোই। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সঠিক প্রক্রিয়ায় হচ্ছে।

জাগো নিউজ: সাজা কিংবা ফাঁসির বাইরে যারা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন তাদের বিজিবিতে আবার ফিরিয়ে নেয়ার কোনো উদ্যোগ আপনারা নিয়েছেন কি?
আজিজ আহমেদ: অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। ফাঁসি কিংবা যাজ্জীবনের বাইরে অনেকের আবার অন্য অভিযোগেও সাজা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল তাদের ফেরানো হয়নি। যারা গ্রেফতারের পরবর্তীতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, তাদের অনেকে বিজিবিতে ফিরে এসেছেন। ফিরে আসার ক্ষেত্রে তাদের কোনো বাধা দেয়া হয়নি।

জেইউ/এমএমজেড/এনএফ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।