বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আনন্দে কাটালো শিশুরা


প্রকাশিত: ০১:৩১ পিএম, ১৭ মার্চ ২০১৬

সকাল আনুমানিক সাড়ে নয়টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার অনুষদের বিপরীতে ছবির হাটের ফটক দিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সঙ্গে দল বেঁধে প্রবেশ করলো দেড়শতাধিক শিশু। সুশৃঙ্খলভাবে পায়ে হেটে পূর্বদিকে  শিখা চিরন্তনের সামনে এসে জড়ো হলো ওরা।

ওই শিশুদের সঙ্গে রয়েছেন কয়েকজন তরুণ। তাদের একজন শিশুদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা শোন, আজ আমরা সারাদিন এখানে কাটাবো, খাওয়া দাওয়া, গানবাজনা ও খেলাধুলা হবে। আনন্দে কাটাবো সারাটা দিন।’
 
যুবকের কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফড়িংয়ের মতো এদিক সেদিক ছুটোছুটি শুরু করলো শিশুরা। ওদের কেউ কেউ শিখা চিরন্তনের পূর্ব দিকের উচুঁ প্রাচীরে উঠা-নামা করতে লাগলো।

child

কেউ দৌড়ে গাছে উঠতে চেষ্টা চালালো, কেউ আবার হাত ধরাধরি করে উদ্দেশ্যহীনভাবে হাটতে লাগলো আবার কেউবা মাথায় ফুল গুজে বসে থাকলো মাটিতে। ওদের বয়স খুব বড় জোর গড়ে চার থেকে নয় বছর।

একসঙ্গে এত শিশুর হাকডাক শুনে ছুটে এলো একজন নিরাপত্তা প্রহরী। তরুণরা ওদের কানে কানে কি যেন বলতেই ওরা হেসে চলে গেল। যাওয়ার সময় শিশুদের দিকে ভালভাবে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়ে গেল।

আজ ১৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার)। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। আজ দিনভর আনন্দ করে কাটলো সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে গঠিত ‘শিশু স্বর্গ আমার পাঠশালা’ নামের একটি সংগঠনের শিশুদের।

এস এম জামিল দর্পন। এ সংগঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। আজ জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, তেজগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকার বৌবাজার এলাকায় ২০১৩ সালের ১৭মে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

child-patshala

স্বেচ্ছাসেবী কতিপয় যুবকের প্রচেষ্টায় এ প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে ১৬০ জন সুবিধা বঞ্চিত শিশুকে পাঠদান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। বর্তমানে একবেলা খাবার দেয়ারও প্রক্রিয়া চলছে। পার্ট টাইম করে স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষিত যুবকরা শিশুদের পড়াশুনা করিয়ে থাকেন।

দর্পন যখন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ করছিলেন তখন জনা দশেক ক্ষুদে শিশু তার চারপাশে ভিড় করে দাদাভাই পানি খাবো, বাদাম কিনে দাও, খেলা কখন হবে, ক্রিকেটের ব্যাটবল কার কাছে ইত্যাদি প্রশ্নবানে জর্জরিত করছিল। কিন্তু তিনি মোটেই বিরক্ত না হয়ে হেসে হেসে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।

তিনি জানান, শিশুরা তাকে দাদাভাই বলে ডাকে। এ সব শিশুরা ভালবাসার কাঙ্গাল। একটু আদর করে কাছে ডেকে নিলে তারা খুব খুশি হয়।

child

দর্পন জানান, জাতির পিতার জম্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আজ সারাদিন ওদের  জন্য ক্রীড়া উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সারাদিন আনন্দ শেষে বিকেলে ওরা বাড়ি ফিরে যাবে।

তেজগাঁও এলাকার কাঠ মিস্ত্রি শিমুলের মেয়ে সুরমা। মা নাসা গ্রুপের গার্মেন্টসে চাকরি করতো। শিশু স্বর্গ স্কুল থেকে তাকে আজ সারাদিনের জন্য নিয়ে এসেছে। এখানে খোলা মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতে পেরে তার খুব ভাল লাগছে।

আরেক শিশু জীবন। ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সে বার বার দর্পন দাদাভাইয়ের কাছে কখন মাঠে ক্রিকেট খেলা হবে জানতে চাইছিল। সে জানায়, শিশু স্বর্গ স্কুলের শিক্ষকরা খুব ভাল। আদর করে লেখাপড়া শেখায়।

কাজল নামের একটি শিশু মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলতে দেখে তার একটি ছবি তোর বায়না ধরে। যখন কথা হচ্ছিল তখন তাদের এক শিক্ষক বাঁশিতে হুইসেল বাজালো। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো শিশুরা তার পিছু পিছু ছুটে চললো।

এমইউ/একে/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।