সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রী ভোগান্তি : চুক্তি না হয় বকশিশ
সরকারের নেয়া কঠোর পদক্ষেপের পরও রাজধানীতে মিটারে চলছে না সিএনজি চালিত অটোরিকশা। কোনো কোনো চালক মিটারে যেতে রাজি হলেও তারা পুরোনো সুরে একই দাবি করেন ‘বকশিশ’ বা ‘বাড়িয়ে’ দিয়েন। এভাবে সকাল-সন্ধ্যা চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
নতুন নিয়মে সিএনজিচালিত অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে। প্রথম দুই কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বেড়ে এখন ১২ টাকা। প্রতি মিনিট বিরতির জন্য যাত্রীকে গুণতে হচ্ছে দুই টাকা করে, আগে যা ছিল ১ টাকা ৪ পয়সা। এর পরও যাত্রী ভোগান্তি যেন চরম আকার ধারণ করেছে।
সম্প্রতি রাজধানীর খামারবাড়িস্থ ইস্পাহানী ইসলামীয়া আই ইনস্টিটিউটের সামনে ৮টি সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়নো আবস্থায় দেখা যায়, বুঝতে বাকি রইলো না যে ‘চালকরা যাত্রীর অপেক্ষায়’। আই ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া রোগীসহ তাদের স্বজনরা সিএনজি অটোরিকশার এক চালকের সঙ্গে কথা বলেই আবার অন্য চালকের কাছে যাচ্ছেন। সেই চালকের সঙ্গে কথা বলে আবার ফিরছেন আরেক চালকের কাছে।
বুঝাই যাচ্ছে যাত্রী আর চালকের মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না। কৌতূহলবসত এগিয়ে গেলে কথা হয় সুলতান আহমেদের সঙ্গে। নাটোর থেকে আই ইনস্টিটিউটে এসেছেন চাচা হাসমত আলীর চিকিৎসার জন্য। যাবেন কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যাবো কল্যাণপুর, এই সামান্য দূরত্বে ভাড়া চায় ৩০০ টাকা। মিটারে যেতে চাইলে কোন চালক যেতে রাজি হয় না। তাহলে নতুন নতুন নিয়ম করে লাভ কী?
সিএনজিচালিত অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়েছে তারপরও কেন চুক্তিতে যেতে চাচ্ছেন জানতে চাইলে চালক আহাদ মিয়া বলেন, ‘মিটারে পোষায় না, যাত্রীরাও চান না। তাই অধিকাংশ অটোরিকশা মিটারে চলে না।’
আসমা আক্তার ডলি অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে আজিমপুরের বাসায় ফিরবেন তিনিও দরকষাকষি করছেন চালকদের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখনো চালকরা আগের মতোই যাত্রীর চাহিদামতো গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না, মিটারে যাওয়া তো দূরের কথা।
সম্প্রতি যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিকশার ৬২ ভাগ চুক্তিতে চলাচল করে। মিটারে চলাচলকারী অটোরিকশার ৮১ শতাংশ ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বকশিশ দাবি করে। যাত্রীদের চাহিদার গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৭৩ ভাগ অটোরিকশা।
এছাড়াও প্রাইভেট অটোরিকশা ভাড়ায় যাত্রী বহন এবং ঢাকা জেলার অটোরিকশা বেআইনিভাবে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রবেশ করে ৩৮ শতাংশ গাড়ি মিটার বিহীনভাবে চলাচল করে।
এদিকে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে না গেলে এবং স্বল্প বা দীর্ঘ যেকোনো দূরত্বে যেতে না চাইলে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
অন্যদিকে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানবনন্ধন করে ‘ঢাকা জেলা ফোরস্টোক অটোরিকশা (সিএনজি) ড্রাইভার্স ইউনিয়ন দাবি জানিয়ে বলেছে, ‘চালকদের উপর নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। কথায় কথায় জেল জুলুম ও নির্যাতন করা চলবে না। চালকদের অবিলম্বে জেল থেকে মুক্তি দিতে হবে অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
পাশাপশি তারা বলছেন, ৬০০ টাকা জমার গাড়ি ৯০০ টাকা করা হয়েছে, এতে শ্রমিকদের কোন লাভ হয়নি তাই জমার টাকা পুনরায় বিবেচনা করা হোক।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর বিআরটিএর এক সুপারিশের ভিত্তিতে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানো হয়। এতে অটোরিকশা মিটারে চলতে প্রথম দুই কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা করা হয়। ওয়েটিং টাইমের চার্জও প্রতি মিনিট ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা। আর মালিকের জমার পরিমাণ ৬০০ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৯০০ টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন এ ভাড়া গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
এএস/জেএইচ/এসকেডি/আরআইপি