আশ্বাসেই ঝুলে আছে পুঁজিবাজারে ব্যাংক ঋণ সমন্বয়ের সময়সীমা


প্রকাশিত: ০৬:১৫ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংকে একক গ্রাহক ঋণ সমন্বয়ের সময় (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) দুই বছর বাড়ানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু ঘোষণার তিন মাস পার হলেও বাস্তবায়নে নেই কোনো উদ্যোগ। যেন আশ্বাসেই ঝুলে আছে ঋণ সমন্বয়ের সময়সীমা।

পুঁজিবাজারে অর্থের জোগান বাড়াতে বিনিয়োগকারী, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসে প্রতিনিধিসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা ঋণ সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর কথা বললেও এর প্রয়োজন নেই বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে আইনের বিষয় বলে চিঠি দিয়েই দায় সেরেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় নিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। ফলে তারল্য সংকটে নতুন করে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, নতুন অর্থবছরের (২০১৫-১৬) বাজেট কার্যকর হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়। বাজারের এই অবস্থা থেকে উত্তোলনে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ বাজার সংশ্লিষ্টসব প্রতিষ্ঠান একাধিক বৈঠক করে। এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) তাদের সুপারিশ দেয়া হয়। কমিশন সব স্ট্রেকহোল্ডারদের সুপারিশ আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়কে গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করে। একই সঙ্গে ঋণ সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও। এরই প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারে স্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধন করে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত (অথাৎ নতুন করে আরো ২ বছর) ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সময় বাড়ানোর আশ্বাস দেন।

এবিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশনাও দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে আবারো অনিশ্চয়তায় মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এখন অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় করতে গেলে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ থেকে আলাদা করা হয়েছে। এর ফলে বেশির ভাগ ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ কমে এসেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আপাতত সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। আর দরকারও হবে না বলে মনে করেন তিনি।

বিএসইসির নিবার্হী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, বিএসইসির পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো জবাব আসেনি। নতুন করে আর আবেদন করা হবে না বলেও জানান তিনি।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট বাড়ানো পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। এতে ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার লোকসান থেকে মুক্তি পাবেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এমন উদ্যোগ মন্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।

আবু আহমেদ বলেন, এই পর্যন্ত সরকার পক্ষ থেকে বাজার নিয়ে যত প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। যত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবই লোক দেখানো। এগুলোর কোনোটাই কার্যকর করতে পারেনি। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের বিষয়ে শঙ্কার কথা জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ছিল মোট দায়ের ১০ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ সালে ব্যাংকগুলো এই সীমা অতিক্রম করে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করে। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে ব্যাংকের বিনিয়োগ কমিয়ে আনা হলে বাজারে বিপর্যয় ঘটে। এরপর ২০১৩ সালে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে সাবসিডিয়ারি মার্চেন্ট ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ ইক্যুইটির (পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ রিজার্ভ এবং অবণ্টিত মুনাফা) ২৫ শতাংশ করা হয়। যা চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।  

এসআই/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।