পুঁজিবাজারে অর্থের জোগান বাড়ানো প্রয়োজন


প্রকাশিত: ০৪:৪২ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে অর্থের জোগান বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বাজার সম্পর্কে নেতিবাচক বক্তব্য ভেবে চিন্তে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)-এর নতুন সভাপতি সায়েদুর রহমান।
 
মো. সায়েদুর রহমান। দীর্ঘ দিন যাবত তিনি পুঁজিবাজারের সঙ্গে রয়েছেন। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন ইবিএল ইনভেস্টমেন্টের লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে। একইসঙ্গে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী দুই বছর (২০১৬-১৭) বিএমবিএর নেতৃত্ব দেবেন তিনি। সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সায়েদুর রহমান। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম। সেখান থেকে চুম্বক অংশ পাঠকের জন্য উপস্থাপন করা হলো-

জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
সায়েদুর রহমান : ভালো।

জাগো নিউজ : বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?

সায়েদুর রহমান : ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা প্রতিবেদন বের হয়েছে। প্রতিবেদনে সবগুলো সূচক ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়সহ সব সূচক ইতিবাচক রয়েছে। তারপরও আমাদের পুঁজিবাজারে কেন এত নেতিবাচক প্রভাব? আসলে আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশে বুদ্ধিজীবীর অভাব নাই। অনেকেই নিজেকে বুদ্ধিজীবী দাবি করেন। তারা হঠাৎ করে গণমাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য বলে দেয়। আর তা প্রচার হয়ে যায়।

নেতিবাচক খবর প্রচারের ফলে বাজারে পেনিক সৃষ্টি হয়। বিষয়টি বিনিয়োগকারীরা সহজভাবে নেয় না। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়। তাই যিনি বক্তব্য দিচ্ছেন তার ভাবা উচিত কেন আমি পুঁজিবাজার নিয়ে এ কথা বলছি। যদি সুনির্দিষ্ট কোনো ডাটা তার কাছে থাকে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। তারপরও যদি দেখা যায় এটা সমাধান না হয় তখন মিডিয়ায় বলা উচিত।

পুঁজিবাজারের যে কোনো তথ্য যাচাই-বাছাই না করে বাজার সম্পর্কে কথা বলা ঠিক না। পুঁজিবাজারের আমরা ৩০ লাখ বিনিয়োগকারী বললেও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২ কোটি মানুষ এ বাজারের উপর নির্ভয়শীল।
 
জাগো নিউজ : লেনদেনের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে নেতিবাচক বক্তব্যে প্রভাব পড়ছে, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয়। তারপরও বাজারে লেনদেন কম কেন?

সায়েদুর রহমান : লেনদেন করার মূল সোর্স টাকা। ব্যাংকগুলোতে অনেক টাকা অলস পড়ে আছে। কিন্তু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলে ব্যাংগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারছে না। ২০১০ সালে যে ব্যাংক ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারত। ব্যাংকগুলো সেখানে ১২শ’ থেকে ১৫শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এখন সেই ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকাও বিনিয়োগ করতে পারছে না। ফলে বাজারে লেনদেন কমে গেছে। আর তা সমন্বয় করার জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সাব সিডিয়ারি কোম্পানির ইনভেস্টমেন্টকে এক্সপোজার লিমিটের বাইরে নিয়ে আসেন। এটা বাজারের জন্য ভালো। এছাড়া বাজার উন্নয়নে আমাদের বেশ কয়েকটি দাবি রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা বাণিজ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও কথা বলেছি। সেগুলো বিবেচনাধীন রয়েছে। তবে এ জন্য সময় প্রয়োজন। বাস্তবায়ন করতে গেলে বাজারে কোনো প্রভাব পরবে কি না তা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করছি।

এক্সপোজার লিমিটেডর সময় শেষ হবে চলতি বছরের জুন মাসে। অথমন্ত্রী এর সময় ২ বছর বাড়ানোর কথা বলেছেন। আশা করি, অথমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে।

জাগো নিউজ : স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর জন্য আলাদা বাজার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। এটিকে কিভাবে দেখছেন?

BMBA-jagonews
সায়েদুর রহমান : পৃথিবীর অনেক দেশে বড় ও ছোট মূলধনী কোম্পানির জন্য আলাদা মার্কেট আছে। এ ধরণের মার্কেট হলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য একটা বাউন্ডারি দিয়ে দেয়া হবে, যাতে এর ভিতরে না আসে। এতে যদি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মনে করেন তাদের অধিকার খর্ব হয়েছে, তা ঠিক হবে না। আপনাকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা রেগুলেটরেরির দায়িত্ব। আমরা এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি।
 
আমাদের দেশের মতো এতো বেশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নেই। বিশেষ করে ভারতেও এতো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নেই। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অনেক ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য ও শিক্ষার অভাব থাকে। যথাযথ তথ্য উপাত্ত না থাকলে ভুল ক্রটি ক্ষতিগ্রস্থের আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের বাজার হলে তারা নিরাপদ দূরত্বে থাকবে।
 
জাগো নিউজ : জেড ক্যাটাগরিতে অনেক দিন ধরে কোম্পানি পড়ে থাকে। এ বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
 
সায়েদুর রহমান : আপনি একজন উদ্যোক্তা। আমাদের দেশে এখনও ডিসক্লোজার বেইজ প্রসপেক্টাস, আপনি ডিসক্লোজার দিয়েছেন। ডিসক্লোজার ইন অডার ছিল, আপনি অনুমোদন পেয়েছেন, বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। দুই চার বছর ডিভিডেন্ড দিয়েছেন। ভালোই চলছে। হঠাৎ করে কোনো কারণে আপনার ব্যবসা ধস নেমেছে। আপনি ডিভিডেন্ড দিতে পারছেন না দিয়ে জেড ক্যাটাগরিতে চলে গেছেন বা পাঠিয়েছেন। টুটাল বিজনেস ফল করলে এখন রেগুলেটর কী করবে।

তাদেরকে শোকজ করছে, জরিমানা করছে, তাদের ব্যবসার উন্নয়ন করতে বলেছে। এরপরও উন্নত হচ্ছে না। এর চেয়ে আর কী করতে পারবে রেগুলেটরি। বিশ্বের যেখানে পুঁজিবাজার আছে সেখানে কম বেশি এমন ঘটনা ঘটছে।

জাগো নিউজ : বর্তমান বাজার নিয়ে আপনার প্রত্যাশা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

সায়েদুর রহমান : আপনি একটা দশ টাকার শেয়ার কিনেছেন তার বিপরীতে উপযুক্ত ডিভিডেন্ড পাচ্ছেন কি না। দশ টাকা ব্যাংকে রাখলে যদি বছর শেষে ৫০ পয়সা লভ্যাংশ পেতেন সেখানে শেয়ারে বিনিয়োগ করে ৬০ পয়সা লভ্যাংশ পেয়েছেন কি না। যদি পেয়ে থাকেন তাহলে আমি মনে করি এটা স্বাভাবিক বাজার। এখানে আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন।

তবে আপনি বলতে পারেন আমি দশ টাকায় শেয়ার কিনেছিলাম কিন্তু নয় টাকা প্রাইজ হয়েছে। আমি আপনাকে বলবো আপনি বিনিয়োগকারী, আপনি সম্পদ কিনেছেন। আপনি তো ট্রেডার নন। বিনিয়োগ করেছেন এ জন্য সময় দিতে হবে। তবে বিনিয়োগের আগে বুঝে শুনে করতে হবে। কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের পূর্বে তার ইতিহাস ঘাটতে হবে, যাচাই বাছাই করতে হবে। তার ধারাবাহিক ডিভিডেন্ডের হার কেমন, ইপিএস কেমন সেগুলো দেখে তারপর ভালো মনে হলে বিনিয়োগ করুন। তাছাড়া কোনো কোম্পানি জেড ক্যাটাগরিতে ৫ বছর পড়ে থেকে হঠাৎ ডিভিডেন্ড দিয়ে এ ক্যাটাগরিতে ওঠে এসেছে সেটা কিনলে তো আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। আপনার সম্পদের নিরাপত্তা, আপনার অর্থে নিরাপত্তা আপনাকেই নিতে হবে।

জাগো নিউজ : আপনারা কী ধরনের সমস্যা দেখছেন। মার্চেন্ট ব্যাংকের ভূমিকা কী হওযা উচিত?
 
সায়েদুর রহমান : আমরা মনে করি বাজারে অর্থের জোগান বাড়াতে হবে। তাহলে বাজারে লেনদেন বাড়বে। লেনদেন বাড়লে বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তখন আস্থা বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা ইনডিভিউজিয়াল ইনভেস্ট নিয়ে চিন্তা করেন। খারাপ বাজারেও অনেক কোম্পানির শেয়ার দর পড়ছে না, ওঠছে। কারণ তাদের পারফরমেন্স ভালো। এমন ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে।

আমাদের মার্চেন্ট ব্যাংকারদের বলবো, সবাইকে অনুরোধ করবো ও পরামর্শ দেব তারা আইপিও নিয়ে আসার সময় কোনো কিছু গোপন না করে সঠিক তথ্য উপাত্ত দেয়। একটি আইপিওর জন্য আমারা কয় টাকা ফি পাই? এই অল্প কয়েক টাকা ফি নিয়ে আমরা কেন বাজারে একটি বোঝা টেনে আনবো। তাই নতুন কোম্পানি আনার আগে বিচার বিশ্লেষণ করে আনা প্রয়োজন।

জাগো নিউজ : ব্যস্ততার মাঝে মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

সায়েদুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

এসআই/আরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।