ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সফলতা আসবেই : ডিসি বিপ্লব
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আটটি বিভাগে বিভক্ত। এরমধ্যে নানা কারণেই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ তেজগাঁও। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দিয়ে তেজগাঁও বিভাগ পুলিশকে পরিচালনায় উপ-কমিশনারের (ডিসি) দায়িত্ব পালন করছেন বিপ্লব কুমার সরকার।
তিনি মনে করেন, যেকোনো সেক্টরই হোক না কেন ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকলে সফলতা আসবেই। কেউই একা সব কাজ করতে পারেন না। এজন্য দরকার টিমওয়ার্কিং, অদম্য চ্যালেঞ্জিং মানসিকতা ও ধৈর্য্য। তবে সর্বোপরি সমন্বয় করে কাজে সফলতা অর্জনই একজন পুলিশ অফিসারের আসল যোগ্যতা বটে।
ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার গত ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করায় ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখায় ডিএমপিতে পর পর পাঁচবার শ্রেষ্ঠ ডিসির পুরস্কার পেয়েছেন। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএমপির ক্রাইম কনফারেন্সে পঞ্চমবারের মতো শ্রেষ্ঠ বিভাগের ডিসি মনোনীত হয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি স্বরূপ মিলেছে পিপিএম ও বিপিএম পদকও।
গত মাসে শ্রেষ্ঠ ডিসি ও বিপিএম পদক লাভের পর সম্প্রতি জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে তার সফলতার কারণ ও কর্ম পরিকল্পনার কথা। পুলিশ অফিসার হিসেবে হিসেবে দায়িত্বের কথা। তেজগাঁও বিভাগ পুলিশের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা। কাজের চ্যালেঞ্জ ও পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব কি তাও বলেছেন অপকটে।
ডিএমপিতে পর পর পাঁচবার শ্রেষ্ঠ ডিসির পুরস্কার ও পিপিএম ও বিপিএম পদক পেয়েও সন্তুষ্ট নন নিজের সফলতা নিয়ে। চাই আরও সফলতা। জাগো নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারের দুটি পর্বের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
জাগো নিউজ : কেমন আছেন আপনি?
বিপ্লব কুমার সরকার : জ্বি, সবার সহযোগিতা আর শুভ কামনায় অনেক ভালো আছি।
জাগো নিউজ : শুরুতেই আপনার অনুভূতি জানতে চাই। ডিএমপির আটটি বিভাগে আপনিই একমাত্র ডিসি যিনি পরপর পাঁচবার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পেয়েছেন। পাশাপাশি পিপিএম ও বিপিএম পদকও লাভ করেছেন। কেমন লাগছে?
বিপ্লব কুমার সরকার : সত্যি কথা বলতে যেকোনো অর্জনের স্বীকৃতি অত্যন্ত আনন্দের। এই স্বীকৃতি কিন্তু আমার একার নয় আমার ডিপার্টমেন্টের সবার। কারণ শ্রেষ্ঠ ডিসি কিন্তু শুধু আমার নিজের যোগ্যতা আর কাজের কারণে পাইনি। পুরো তেজগাঁও বিভাগের সকল পুলিশ সদস্যের সহযোগিতা কাজের যোগ্যতা, সফল অপারেশন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ কমিয়ে আনা, মামলা তামিল ইত্যাদি কারণেই সম্ভব হয়েছে। আর বুঝতেই পারছেন এতো কাজ একা আমি করতে পারবো না (হেসে)! আমি শুধু সমন্বয় করি খেয়াল রাখি মাত্র। আর যেকোনো স্বীকৃতি কিন্তু কাজের আগ্রহ ও গতি বাড়িয়ে দেয়।
জাগো নিউজ : কি ধরনের সফলতার জন্য আপনি শ্রেষ্ঠ ডিসির স্বীকৃতি পেলেন?
বিপ্লব কুমার সরকার : শ্রেষ্ঠ ডিসির স্বীকৃতি ডিএমপি এমনি দেয়নি। কাজের হিসেব বুঝেই দিয়েছে। আমার বিভাগে মামলার তামিল, মাদকবিরোধী অপারেশন ও সফলতা, মাদকের বিরুদ্ধে কতটা সফল, অস্ত্র উদ্ধার, ঘটে যাওয়া অপরাধের কারণ ডিটেক্ট করা ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, অপরাধ দমন করার ক্ষেত্রে সফলতার গ্রেডিং হিসেব করা হয়। বলতে পারেন, আমার বিভাগের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় পাঁচবার একই স্বীকৃতি মিলেছে। এতে করে আমিতো বটেই, আমার বিভাগের সকল সদস্য কাজে সজীবতা পেয়েছে।
জাগো নিউজ : বিপিএম ও পিপিএম পদকপ্রাপ্তি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন? :
বিপ্লব কুমার সরকার : বিপিএম ও পিপিএম পদক পুলিশ সদস্য হিসেবে এক বড় অর্জন ও প্রাপ্তি। ২০১৪ সালে আমি প্রথম পিপিএম পদক পাই। দুই বছর পর এবার বিপিএম পদক অর্জন করেছি। মূলত এক বছরের সফলতা ও ব্যর্থতার সার্বিক মূল্যায়ন করেই এই পদক দেয়া হয়। আবার নির্দিষ্ট কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতার কারণে দেয়া হয়ে থাকে।
২০১৫ সালে রাজধানীসহ দেশব্যাপী ব্যাপক নাশকতা চলেছে। আমার এলাকায় আমি সর্বোচ্চ চ্যালেঞ্জ নিয়ে নাশকতারোধ ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। রাজধানীর বিভিন্ন বিভাগের তুলনায় আমার এলাকায় অপরাধ ও নাশকতা কমই ঘটেছে। পদকপ্রাপ্তিতে আমাকে মনোনীত করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
জাগো নিউজ : করণীয়টা সবাই জানেন কিন্তু সবাই সফল হন না। সফলতার জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তার আর কী করা উচিত?
বিপ্লব কুমার সরকার : আপনি যেখানেই যান না কেন, যোগ্যতা, বিচক্ষণতা ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মতো হিম্মত থাকতে হবে। তবে সর্বোপরি যেটা দরকার তা হলো কাজের টিউনিং। টিমওয়ারি কাজ করতে না পারলে সকল যোগ্যতা বৃথা যাবে। সুতরাং পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আগে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বুঝে কাজ করাটা উচিত। একজন পুলিশ কর্মকর্তার নের্তৃত্বে যেসব পুলিশ সদস্য কাজ করবেন তাদের সুযোগ সুবিধা, অভাব সবই অভিভাবকের মতো বুঝতে হবে। কেউ একা কাজ করে সফল হতে পারেন না। সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হয়। অধ:স্তনদের ভালো কাজের স্বীকৃতি আপনাকে ছোট করবে না বরং মহান করবে। আমরা এদিক থেকে অনেকেই পিছিয়ে।
জাগো নিউজ : আপনি কিভাবে কাজ করেন? সার্বিক কাজের পরিকল্পনা ও কাজের ধরণ যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন? অগোচরে অনেকেরই অনুসরণীয় হয়ে উঠেছেন আপনি।
বিপ্লব কুমার সরকার : আমার বিভাগে পাঁচটি থানা। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও, শেরেবাংলা নগর, মোহাম্মদপুর ও আদাবর। আমি নিজে বিভিন্ন থানার পারফর্মেন্স মূল্যায়ন করি। অস্ত্র-গুলি উদ্ধার, মাদক নিয়ন্ত্রণ, মামলার তামিল, মামলার তদন্তে গতি ও সফলতাসহ সবধরনের কাজের আলাদা আলাদা মার্কিং করা হয়। এরপর মাস শেষে আমার বিভাগেও আমি শ্রেষ্ঠ দু`জন অফিসার, শ্রেষ্ঠ দু`জন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও সহকারী উপ-পরিদর্শককে (এএসআই) পুরস্কৃত করি। এটা তাদের ভালো কাজের স্বীকৃতি।
এছাড়া বিট পুলিশিং এর দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ বিট পুলিশ সদস্যকে পুরস্কৃত করছি। গত ৪/৫ মাস ধরে এই নতুন সিস্টেম আমি চালু করেছি। এতে করে সফলতাও আসছে। সবার মধ্যে ভালো কিছু করার উদ্যম ও প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। পুরস্কার পেয়ে ওরাও খুশি হয়। কাজে প্রাণ পায়। আর আমিও ওদের সফলতায় আশ্বস্ত হই।
জাগো নিউজ : তেজগাঁও এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট?
বিপ্লব কুমার সরকার : তেজগাঁও এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্টির সুযোগ নেই। ভালো অবস্থানে রয়েছি কিন্তু আত্মতৃপ্তিতে নেই। কারণ সফলতার শেষ নেই, আরও ভালো কিছু করার সুযোগ আমার রয়েছে। আর আমি সে চেষ্টাটাই অব্যাহত রেখেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধমুক্ত করতে না পারবো ততক্ষণ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। অপরাধ আগে নির্মূল তারপর না দমন!
জেইউ/এমজেড/এমএস