কথা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রিয়তি : ‘ছেলেটার কষ্ট সহ্য হচ্ছিল না’


প্রকাশিত: ০৭:৩৮ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সেই মৃত্যুপথযাত্রী কিশোর জিহাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রবাসী মডেল, বৈমানিক, মিস আয়ারল্যান্ড ও মিস আর্থ মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। মঙ্গলবার দুপুরে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ছুটে যান তিনি। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ঢামেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চিকিৎসাধীন জিহাদ। ভেন্টিলেটর মেশিনে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বেঁচে থাকা জিহাদকে দেখে দু’চোখ ছলছল হয়ে উঠে প্রিয়তির।

বুধবার সকালে প্রিয়তির সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। আলাপকালে তিনি জানান, ‘ছেলেটির কষ্ট সহ্য হচ্ছিল না। ১০ বছরের একটা ছেলে দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে এখন মৃত্যুপথযাত্রী। আমার নিজের সন্তান হলে কেমন লাগতো? তাকে দেখার পর আমার কষ্ট বা ফিলিংসটার ম্যাপ দিয়ে বোঝাতে পারবো না।’

জিহাদকে দেখে বাইরে বেরিয়ে এসে আইসিইউ’র অপেক্ষমাণ জিহাদের হতভাগ্য বাবা নিরব হোসেনকে স্বান্তনা দেন। তার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে কি ধরনের সহায়তা তিনি দিবেন এ ব্যাপারে তিনি মিডিয়াতে মুখ খুলতে চান না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

২৩ জানুয়ারি জাগো নিউজে প্রকাশিত মৃত্যুপথযাত্রী ছেলেটির পাশে নেই কোনো আপনজন শীর্ষক মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন পড়ে পরদিন  নিজের ফেসবুক ওয়ালে ওই প্রতিবেদনটি শেয়ার দিয়ে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছিলেন, ‘কেন এনি ওয়ান প্লিজ হেল্প মি টু গেট এনি ইনফরমেশন এবাউট দিজ বয়!! আই ওয়ান্ট টু হেল্প হিম। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।’

এরপর তিনি ঢামেক আইসিইউ’র বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুর রহমানের সঙ্গে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করে জিহাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন।

অনেকটা প্রচারবিমুখ প্রিয়তি ঢামেক আইসিইউতে জিহাদকে দেখতে যাওয়ার ব্যাপারে গণমাধ্যম কর্মীদের তেমন কিছু জানাননি। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আজ (বুধবার) সকালে আলাপকালে তিনি জানান, গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে দেশে ফিরে প্রথমে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন এককালের জনপ্রিয় নায়িকা দিতিকে দেখতে যান। পূর্ব পরিচিত না হলেও প্রিয়তি তার ভীষণ ভক্ত বলে জানান।

তিনি বলেন, একবার স্কুল পালিয়ে দিতি অভিনীত একটি ছায়াছবি দেখতে গিয়েছিলাম। বহুদিন আগের কথা তাই ছায়াছবির নাম ভুলে গেলেও ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলে বসে এটি দেখেছিলেন বলে মনে করতে পেরেছেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, গত ১১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর সার্কেল চত্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয় অজ্ঞাতনামা ওই কিশোর। মাথায় তীব্র আঘাতের ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় তার। ওইদিন থেকে সম্পূর্ণ সংজ্ঞাহীন হয়ে ওই কিশোর আইসিইউর দুই নম্বর বেডে পড়ে আছে।

বুধবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে প্রিয়তি পুলিশ প্রশাসনের একটি উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, কিছুটা শান্তি পেলাম আমাদের পুলিশ ভাইরা জিহাদের বাবাকে মিরপুর-২ থানায় ডেকে নিয়ে একটা ভাল সমাধান দিয়েছেন। বাস মালিক চিকিৎসাধীন জিহাদের চিকিৎসার খরচের পাশাপাশি তার বাবাকে চাকরি দিবেন।

উল্লেখ্য, প্রিয়তি সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে ইন্টারন্যাশনাল রানওয়ে কুইনস রিকগনেশন অ্যাওয়ার্ডস-এ পুরস্কৃত হন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মিস ইউনিভার্সাল রয়্যালটি ২০১৩, আয়ারল্যান্ডে মিজ আয়ারল্যান্ড ২০১৪, মিস হট চকোলেট ২০১৪, মিস ফটোজেনিক ২০১৪, সুপার মডেল অব দ্য ইয়ার ২০১৪, মিস আয়ারল্যান্ড আর্থ ২০১৫ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মিস আর্থ হিসেবে প্রথম রানার-আপ ২০১৬, মিস কমপ্যাশনেট ২০১৬, মিস বেস্ট গাউন ২০১৬, মিস ফিটনেস ২০১৬ হয়েছেন।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদের প্রতি সম্মান জানানো ছাড়াও সামাজিক ও জনহিতকর বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে তার এবারের ঢাকা সফর করছেন বলে জানা গেছে।

এমইউ/জেএইচ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।