কুড়িগ্রামে পিকনিক স্পটের স্থানে ট্রাকস্ট্যান্ড


প্রকাশিত: ০৪:০৭ এএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কুড়িগ্রামে ধরলার পাড়ে প্রস্তাবিত বিনোদন পার্ক ও পিকনিক স্পট রাতারাতি বনে গেছে ট্রাকস্ট্যান্ড। প্রতিদিন পার্কিং হচ্ছে শত শত ট্রাক। সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের সম্পত্তি হলেও জায়গার ভাড়া নিচ্ছে একটি শ্রমিক সংগঠন। একদিকে লাখ-লাখ টাক হাতিয়ে নিচ্ছে সংগঠনটি অন্যদিকে স্থানটির সৌন্দর্য ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে। সন্ধ্যার পরে চলছে মাদক সেবনকারীদের আড্ডা আর ছিনতাইসহ নানান অপকর্ম।

দেশের উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রাম দেশের কৃষি ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে ভূমিকা রাখলেও উন্নয়নে বরাবরই অবহেলায়। ধরলা নদীর তীরে গড়ে ওঠা ২ হাজার ২৫৫ বর্গ কি.মি. আয়তনের জেলায় প্রায় ২২ লক্ষাধিক মানুষের বাস। বিনোদন প্রিয় অঞ্চলে নেই একটিও বিনোদন স্থান। জেলা ও উপজেলা শহরের পার্কগুলোরও দৈন্যদশা।

শহরের জিরো পয়েন্ট হতে মাত্র ৩ কি.মি. দূরে ধরলা নদীর কোল ঘেঁষে সবুজ প্রকৃতি ও আর সূর্যাস্ত দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমায় শত শত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর। ২০০৩ সালে ধরলা ব্রিজ চালু হওয়ার পর ব্রিজের পূর্ব-উত্তরে ৩৫ একর আয়তনের স্থানটি মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে এখানকার মানুষদের কাছে। সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের এ জায়গাটিতে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা মিলে আধুনিক বিনোদন স্পট করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে একমাত্র বিনোদন স্পট হিসেবে জেলাবাসীর কাছে পরিচিতি পেয়েছে ধরলার পাড়। প্রতিদিন ৫-১০টি দল সেখানে আসে পিকনিক করতে। বিকেলে বিনোদন পিপাসু পরিবারগুলো আসে ধরলার পাড়ে হাঁটতে।

গেল বছরের ১৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় ওই স্থানে আধুনিক পার্ক করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু রাতারাতি স্থানটি হয়ে ওঠে ট্রাকস্ট্যান্ড। প্রতিদিন সেখানে শতাধিক ট্রাক, ট্যাংকলরি, কার্ভাড ভ্যান পার্কিং করা হচ্ছে। ভারি যান চলাচল করায় গাছগুলো মরে যাচ্ছে। মাঠের ঘাস পুড়ে সৌন্দর্য হারাচ্ছে স্থানটি। ফলে এতে করে কমে যাচ্ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা।

ধরলার পাড়ে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা রাসেল, ববিতা এবং মৌসুমী আকতার জানান, শহরের মধ্যে খোলা মেলা বেড়ানোর মতো কোন জায়গা বা পরিবেশ নেই। এ জায়গা সুন্দর লাগে। মাঝে-মধ্যে আমরা পরিবার নিয়ে আসি। একটু সন্ধ্যা হলে এখানে নেশার আড্ডা বসে। ঘটে মাঝে মধ্যে শোনা যায় ছিনতাইয়ের ঘটনা। ট্রাকস্ট্যান্ড হওয়াতে পরিবেশটা আরও খারাপ হয়ে আসছে। তাই এখন আর আসা সম্ভব নয়।

Picnik

পিকনিকে আসা একটি প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন বলেন, সব কিছু টাকার কাছে বিক্রি হচ্ছে নাকি। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই।

সংশ্লিষ্টদের অনেকে জানান, ধরলাপাড়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক অবস্থান নেয়। এই ট্রাকস্ট্যান্ড রাখার কারণে জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি-কার্ভাড ভ্যান শ্রমিক সংগঠন সেখানে অবস্থানরত প্রতি যানবাহন থেকে দেড় হতে দুইশ করে টাকা নিচ্ছে। এতে করে স্ট্যান্ড হতে গড়ে প্রতিদিন সংগঠনটির আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় বঙ্গসোনাহাট স্থলবন্দর চালুর পর এ জেলায় ট্রাক চলাচল কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

কয়েকজন ট্রাক চালক জানান, জেলা শহরে ট্রাকস্ট্যান্ড নেই। জায়গাটা ফাঁকা এ কারণে চালকরা আশ্রয় নেয়। জায়গার ভাড়া চেইন মাস্টারকে দেয়া হয় বলেও জানান তারা।

চেইন মাস্টার মিঠু বলেন, ট্রাকের সিরিয়াল মেইনটেইন্স করা এবং এখানে জেনারেটর দিয়ে বাতি জালানোর জন্য প্রতি ট্রাক হতে দেড়শ টাকা নেয়া হয়।

জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি-কার্ভাড ভ্যান শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, জেলায় ৫ শতাধিকের বেশি ট্রাক রয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন শত শত ট্রাক চলাচল করে। দূর থেকে আসা বা দূরে যাওয়ার আগে জেলা শহরে সবাইকে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু দাঁড়ানোর মত জায়গা নেই। এ কারণে বাধ্য হয়েই ধরলা ব্রিজের পূর্ব পার্শ্বে ফাঁকা জায়গায় ট্রাকস্ট্যান্ড করা হয়েছে। এখানে আসার পর প্রশাসন থেকে আমাদের উচ্ছেদের জন্য দু’দফা নোটিশ দিলেও আমরা যাইনি। সরকারি অনেক জায়গায় ভোগ দখল করে খাচ্ছে অনেকই। আমাদের জন্য একটা ট্রাকস্ট্যান্ড করার জায়গা দেয়া হয় না। তাই আমরা এই ফাঁকা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি। যতক্ষণ আমাদের স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেয়া হবে না ততক্ষণ আমরা এই জায়গা ছেড়ে যাচ্ছি না।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন বলেন, ধরলা সেতুর পাড়ে ট্রাকস্টান্ডের বিষয়ে চালকদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তারা স্থায়ী স্ট্যান্ডের আবেদন জানিয়েছে। স্থায়ী স্ট্যান্ড নির্মাণের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৭ সদস্যের একটি টিম কাজ করছে। জমি পেলে স্ট্যান্ডের কাজ শুরু হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কুড়িগ্রামে আধুনিক পার্ক ও পিকনিক স্পট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই স্থানে ট্রাক না রাখতে পর পর দু’টি নোটিশ দেয়া হলেও তা কার্যকর না হওয়ার প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আলোচনা সাপেক্ষে কেউ যদি সরে যেতে না চায় তবে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।

নাজমুল হোসেন/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।