কড়া নাড়ছে বইমেলা : প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে
হাঁতুডি-পেরেকের ছন্দে নিরলসভাবে কাজ করছেন অনিল ভক্ত নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমিতে তার মতো অনেক শ্রমিকের কাজের গতিই বলে দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। অমর একুশে বইমেলার বাকি আর কয়েকদিন। তাই এবারের বইমেলাকে সফল করতে অনিলের মতো অনেকেই কাজ করছেন নিরলসভাবে।
কাজের ফাঁকে অনিলের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। আলেয়া প্রকাশনীর স্টল নির্মাণ করছেন অনিলসহ আরো কয়েকজন। স্টল নির্মাণের কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে বাকী কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। এ স্টল নির্মাণে কাজ করছেন তারা ৮ শ্রমিক। আরো ৫টি গ্রুপ রয়েছে তাদের, যারা কাজ করছে পাশের অন্য প্রকাশনীর ভিন্ন ভিন্ন ৫টি স্টল তৈরিতে। তবে বই মেলার কাজে আনন্দের কথাও জানাতে ভুলেননি তিনি। প্রাণের বই মেলাকে প্রাণবন্ত করতে তারও চেষ্টার কমতি নেই বলে জানান তিনি। বই মেলার স্টল নির্মাণ করেছেন আরো কয়েকবার। প্রতিবারই বাড়তি তৃপ্তি নিয়ে কাজ করেন বলে জানান অনিল ভক্ত।
অনিল ভক্তদের পাশে শিরিন পাবলিকেশনের স্টল নির্মাণে কাজ করছেন আরেক শ্রমিক সিদ্দিকুর রহমান। স্টলটি নির্মাণে কাজ করছেন তারা ১০ জন শ্রমিক। তারও একই সুর। বললেন, অনেক বড় মেলা। এটা সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক সেটাই চাই। মজুরির বিনিময়ে কাজ করলেও এটাতো আমাদের প্রাণের মেলা।
সম্প্রতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি প্রঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ প্রান্তে। আর বাকী দোকানগুলোর প্রায় ৪০-৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রাত-দিন শ্রমিকরা ব্যস্ত স্টল তৈরির কাজে। মাথায় রয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির ক্ষতি এড়ানোর প্রস্তুতিও। গত বছর বৃষ্টিতে ভিজে যায় কয়েকটি প্রকাশনার স্টলের বই। তাই এবার বৃষ্টিতে ক্ষতির মোকাবেলায় বাড়তি প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, গতবারের মতো এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে মেলার অন্যতম আকর্ষণ। তাই এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুনের বেশী জায়গা নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ২০১৫ সালে এখানে মেলার পরিসর ছিল দেড় লাখ বর্গফুট। আর এবার সেখানে মেলার পরিসর করা হয়েছে ৪ লাখ বর্গফুট। এখানে ১৫টি গুচ্ছ আকারে সাজানো হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণ। প্রতিটি গুচ্ছে থাকবে একটি প্যাভিলিয়ন, ৪ ইউনিটের ১টি স্টল, ৩ ইউনিটের ২টি স্টল, ৩ ইউনিটের ৭টি স্টল এবং ১ ইউনিটের ৮টি স্টল। প্রতিটি গুচ্ছের প্রবেশমুখে থাকবে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর নাম।
এছাড়া এবারের মেলায় ৪০০টি প্রকাশনা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ৬৫০টি ইউনিটে বই বিক্রি করবে। মেলায় থাকবে ১৫টি প্যাভিলিয়ন, চার ইউনিটের ১৮টি স্টল, ৩ ইউনিটের ৩৮টি স্টল, ২ ইউনিটের ১২৭টি স্টল এবং ১ ইউনিটের ১৮০টি স্টল।
থাকছে দর্শনার্থীদের জন্য ডিজিটাল নির্দেশিকাও। বাংলা একাডেমিতে ১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৫টি ডিজিটাল নির্দেশিকা তথ্য দিবে দর্শনার্থীদের। থাকছে চারটি প্রবেশদ্বার। একই সাথে মেলা থেকে বের হতেও চারটি পথ ব্যবহার করতে পারবেন দর্শনার্থী, ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
বাংলা একাডেমির মূল প্রাঙ্গনে থাকবে সরকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কেন্দ্র। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকবে প্রকাশনা সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান সমূহের স্টল। মেলার মূল প্রাঙ্গণে বাংলা একাডেমির ২টি বিক্রয় কেন্দ্র ও একটি প্যাভিলিয়নে একাডেমির বইসমূহ বিক্রি করবে। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও থাকবে বাংলা একাডেমির একটি প্যাভিলিয়ন। বাংলা একাডেমি ছাড়াও একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে থাকা সরকারী অন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় গণগ্রন্থাগার, জাতীয় জাদুঘর, এশিয়াটিক সোসাইটি, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও শিশু একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
এদিকে এবারের বইমেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। র্যাব-পুলিশ-ডিবির পাশাপাশি মাঠে থাকবে আনসার, ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। মেলার ভেতরে ও আশপাশের এলাকায় থাকবে দুই শতাধিক ক্লোজ সার্কিড (সিসি) টেলিভিশন ক্যামেরা। এগুলো মনিটর করার জন্য থাকবে কন্ট্রোল রুম। থাকছে অতিরিক্ত লাইটিং।
মেলার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সোমবার বাংলা একাডেমির মাহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, মেলায় স্টল নির্মাণের কাজ চলছে। আমরা একটি সুন্দর মেলা উপহার দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি এ বছর মেলায় গতবারের তুলনায় দশনার্থী বাড়বে।
এসময় মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, এবার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার মোকাবেলা করতে পর্যাপ্ত পুলিশ-র্যাব মেলার নিরাপত্তায় থাকবে। পুরো এলাকাকে সিসিটিভির আওতায় রাখা হবে। আশা করি এবারের বইমেলায় বইপ্রেমিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসতে পারবেন।
এমএইচ/এআরএস/এমএস