হালদায় এবার কম ডিম ছেড়েছে মাছ, সংগ্রহ নেমেছে অর্ধেকে
# গতবারের চেয়ে অর্ধেক ডিমও সংগ্রহ হয়নি
# প্রকৃতি অনুকূল ছিল না দাবি বিশেষজ্ঞদের
দেশে মিঠাপানির একমাত্র মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে এবারও ডিম ছেড়েছে মা মাছ। তবে যে ডিম সংগ্রহ হয়েছে তা আশানুরূপ নয়। এবার তিন হাজার কেজির কিছু বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন স্থানীয় সংগ্রহকারীরা। যা গত বছরের অর্ধেকের চেয়েও কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার প্রকৃতি অনুকূলে ছিল না।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া মঙ্গলবার (১৭ মে) জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন এ বিষয়ে।
তিনি বলেন, এখন হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিপক্ব সময়। পাহাড়ি ঢলের সময় মা মাছ বেশি ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবার কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি হয়নি। যে কারণে পাহাড়ি ঢলও নেই। তবে পূর্ণিমায় হালদা নদীতে পানি বাড়ায় অস্বাভাবিকভাবে কিছু কিছু মা মাছ ডিম ছেড়েছে। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে সব মাছ ডিম ছাড়তে পারেনি।
হ্যাচারিতে রেণু ফুটানোর প্রক্রিয়াকরণ চলছে
সংগ্রহ করা ডিমের বিষয়ে অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, এবার সব মিলিয়ে তিন হাজার কেজির কিছু বেশি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন সংগ্রহকারীরা। যেগুলো হাটহাজারী ও রাউজানের হ্যাচারিতে রেণু ফোটানোর জন্য প্রক্রিয়াকরণ হচ্ছে।
স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, গত শনিবার (১৪ মে) রাত থেকে হালদা নদীতে মা মাছেরা নমুনা ডিম দেওয়া শুরু করে। সোমবার ডিম ছাড়ে কিছুটা বেশি। সবশেষ মঙ্গলবার মধ্যরাত এবং দুপুরেও ডিম ছেড়েছে মা মাছ। বিশেষ করে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ জাতের মা মাছগুলো ডিম ছাড়ে। তবে শুক্রবার থেকে টানা তিন-চারদিন ডিম সংগ্রহ করতে গিয়ে পরিশ্রান্ত সংগ্রহকারীরা। যে কারণে মঙ্গলবার শেষের দিকে ছাড়া ডিম অনেকে সংগ্রহ করতে পারেননি।
গত রোববার (১৫ মে) চন্দ্র মাসের পূর্ণিমার পূর্ণ তিথি ছিল। স্থানীয় ভাষায় এ তিথিকে ‘জো’ বলে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় এ ‘জো’। জোয়ের মধ্যেই মা মাছেরা ডিম ছাড়ে। এজন্য প্রাকৃতিক এ ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয় সংগ্রহকারীরা। বছরের এই সময়ে পাহাড়ি ঢল নামলে মূলত হালদা নদীর মা মাছ ডিম ছাড়ে। তবে প্রকৃতির বিরূপ আচরণের কারণে আশানুরূপ ডিম ছাড়েনি মা মাছগুলো। একদিকে কম বৃষ্টি, অন্যদিকে অসহনীয় গরমের কারণে ডিম কম ছাড়ার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হালদায় গত বছরের চেয়ে এবার অর্ধেকের বেশি কমেছে মাছের ডিম
৩০ বছর ধরে হালদা নদীতে মাছের ডিম সংগ্রহ করেন চট্টগ্রামের হাটহাজারীর উরকিরচর এলাকার বাসিন্দা মো. ওসমান। তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার বেশি ডিমের আশা করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টি না থাকায় ভালো মতো ডিম ছাড়েনি মাছেরা। গরমের কারণেও ডিম সংগ্রহকারীদের কাহিল হতে হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হালদা নদীতে মা মাছ রক্ষায় মনুষ্য সৃষ্ট সব ধরনের আয়োজন ছিল। গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয় হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ লাগাতার অভিযান চালিয়েছে নদীতে। এসব অভিযানে অবৈধ শিকারিদের হাজার হাজার মিটার জাল আটক ও ধ্বংস করা হয়। ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) নামে একটি এনজিও হালদা নদীতে মা মাছ রক্ষায় কার্যক্রম চালিয়েছে।
হালদা নদীতে মাছের ডিম সংগ্রহ করা হচ্ছে
এদিকে হালদা নদী থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, রাউজানে একটি, হাটহাজারীতে তিনটি সরকারি হ্যাচারি এবং আইডিএফের একটি হ্যাচারিতে ডিম সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এছাড়া সনাতন পদ্ধতির ১১৭টি মাটির কুয়া প্রস্তুত হয়েছিল ডিম সংরক্ষণের জন্য। কিন্তু ডিম সংগ্রহ কম হওয়ায় সবগুলো কুয়াতে দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও জানান তিনি।
ইকবাল হেসেন/জেডএইচ/এএসএ/এএসএম