৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা
সরকার নির্ধারিত সময়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা শুরু নিয়ে ফের দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ মে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো চূড়ান্ত হয়নি ফ্লাইটের স্লট। শেষ হয়নি হজযাত্রীদের নিবন্ধনও। হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বলছে, এ অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে ফ্লাইট শুরু সম্ভব নয়। চেষ্টা চালালেও কিছুটা ঘাটতির কথা বলছে বিমান। এর আগে হজ প্যাকেজ ঘোষণা নিয়েও একই রকম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল।
হাব সংশ্লিষ্টরা জানান, হজযাত্রার আগে যাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন, এজেন্সি-এজেন্সি সমন্বয়, মোয়াল্লেম নির্বাচন, সৌদি আরবে বাড়িভাড়া, পরিবহন, খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। এরপর ভিসা ও হজযাত্রা শুরু হয়। এটা বিশাল একটি প্রক্রিয়া। তাই সঙ্গত কারণেই ৩১ মে থেকে হজযাত্রা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।
এদিকে সরকার নির্ধারিত সময়ে হজযাত্রা শুরু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তারা আগামী ৩১ মে থেকেই হজযাত্রা শুরু করতে চায়। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ বিমানের ফ্লাইটের স্লট চূড়ান্ত না করায় পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিতে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দুই বছর বিদেশিদের জন্য হজ বন্ধ রেখেছিল সৌদি আরব সরকার। বিশ্বে করোনার প্রকোপ কমায় এবার সীমিত আকারে হজের অনুমতি দিয়েছে দেশটি। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন হজে যেতে পারবেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৯ জুলাই সৌদি আরবে হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের বিমানভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা।
গত ২৭ এপ্রিল সচিবালয়ে চলতি বছর হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমন্বয় সভা করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বৈঠক সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে আগামী ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরুর ঘোষণা দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তার ঘোষণা অনুযায়ী, এবার দুটি ৭৭৭ বিমানের ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহন করা হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ৭৫টি ফ্লাইট অপারেশন করবে। এর মাধ্যমে ৩১ হাজার হজযাত্রী পরিবহন করা হবে। বাকি যাত্রী সৌদি এয়ারলাইন্স বহন করবে।
তবে গত ৬ মে দেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহনে নতুন ক্যারিয়ার হিসেবে সৌদি আরবের এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাসকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ফলে চলতি বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি ফ্লাইনাসও হজযাত্রী পরিবহন করবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগ সূত্র জানায়, ফ্লাইনাস হজযাত্রী পরিবহনে অনুমোদন পাওয়ার পর হজযাত্রী তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে মোট হজযাত্রীর ৫০ শতাংশ বহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বাকি হজযাত্রীদের দুই-তৃতীয়াংশ সৌদি এয়ারলাইন্স এবং এক-তৃতীয়াংশ নতুন ক্যারিয়ার ফ্লাইনাস পরিবহন করবে। এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে হাব।
গত ৫ মে হজযাত্রা পেছাতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় হাব। ওই চিঠিতে বলা হয়, এবছর সময়স্বল্পতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করাটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো হজযাত্রী নিবন্ধন, এজেন্সির সমন্বয়ে লিড এজেন্সি নির্ধারণ, মোয়াল্লেম নির্ধারণ, হজযাত্রীদের সৌদি আরবে আবাসন ও মোয়াল্লেম ফি এবং অন্যান্য খরচের অর্থ পাঠানো, বাড়ি ও হোটেল ভাড়া, ক্যাটারিং সার্ভিসের কাজ বাকি রয়েছে। এসব কাজ শেষে ভিসা ইস্যু করে হজ ফ্লাইট দিতে হয়। এজন্য ছয় থেকে সাত মাস সময় লাগে। কিন্তু এবার মাত্র একমাস সময় হাতে আছে। এই স্বল্প সময়ে হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা দুরূহ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জাগো নিউজকে বলেন, হজযাত্রা বিশাল একটি প্রক্রিয়া। একমাস আগে ঘোষণা দিয়ে হজযাত্রা করা সম্ভব নয়। তাই বিষয়টি চিঠি দিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। কিন্তু তেমন সাড়া পাচ্ছি না। ধর্ম মন্ত্রণালয় ওইদিনই হজযাত্রার ফ্লাইট উদ্বোধন করতে চায়।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে হজ ফ্লাইট ভাড়া এক লাখ ২৮ হাজার টাকা ছিল। এ টাকা নেওয়া হতো ডেডিকেটেড ফ্লাইটের (যে ফ্লাইটে শুধু হজযাত্রীদের পরিবহন করা হয়) জন্য। কিন্তু হজযাত্রীদের বেশিরভাগকে নেওয়া হয়েছিল শিডিউল ফ্লাইটে। ওই সালে হজের সময় ৩৬৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছিল, এর মধ্যে ডেডিকেটেড ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় মাত্র ১৪৯টি। কিন্তু ৩৬৬টি ডেডিকেটেড ফ্লাইটেরই ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। এবার যাতে তা না হয়। এমনটি হলে শিডিউল ফ্লাইটে হাব হজযাত্রী পাঠাবে না।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তা মো. মতিউল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব) জাগো নিউজকে বলেন, বিগত বছর হজ ফ্লাইটের প্রস্তুতি নিতে লম্বা সময় পাওয়া যেত। এবার সেই সময়টা পাওয়া যায়নি, এটা সত্য। তবে অল্প সময়ে আমরা অনেক কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অফিস চলে। অনেক দিন আগ থেকেই শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও অফিস খোলা রাখা হয়েছে। যাতে নির্বিঘ্নে হজযাত্রা শুরু করা যায়।
কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সৌদিতে স্লট না পেলে কীভাবে ফ্লাইট শুরু হবে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কারও কাছে এমন প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবু সালেহ্ মোস্তফা কামালের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, বিমান হজযাত্রী পরিবহনে এখনো স্লট পায়নি। তাই ওইদিন থেকে হজযাত্রী পরিবহন করা হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘হজ ফ্লাইটের বিষয়ে জানা নেই। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৯ মে) হজ ফ্লাইট নিয়ে বিমানের মিটিং রয়েছে। ওই মিটিংয়ের পর বিস্তারিত জানাতে পারবো।'
এমএমএ/এএসএ/এএসএম