পিডিবির হুটহাট সিদ্ধান্তে বিপাকে বিপিসি!

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৩:২৯ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২২

# বিপিসি বলছে, অপরিকল্পিত ফার্নেস অয়েলের ডিমান্ড পিডিবির
# পিডিবি বলছে, গ্যাসের সরবরাহ কমায় বাধ্য হয়েই ফার্নেস অয়েলের চাহিদা দিতে হয়
# ৮০ হাজার টন আমদানির পরিকল্পনা থাকলেও আমদানি করতে হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার টন

গ্যাসের সরবরাহ কমায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিকল্প জ্বালানি ফার্নেস অয়েলে ঝুঁকছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী ছয় মাসের জ্বালানি কেনার প্রক্রিয়া বছরের শুরুতেই সম্পন্ন করে রাষ্ট্রীয় এ পেট্রোলিয়াম জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু পিডিবি হুটহাট ফার্নেস অয়েলের চাহিদা দেওয়ায় অতিরিক্ত চাপ পড়ছে বিপিসির ওপর। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসের জন্য বিপিসি ৮০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল কিনলেও পরে শুধু পিডিবিই চাহিদা দিয়েছে আরও দুই লাখ ৮০ হাজার টনের।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশে বর্তমানে ফার্নেস অয়েলনির্ভর ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি বেসরকারি আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট) এবং ২০টি সরকারি। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে মাসে ৬০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ফার্নেস অয়েলের চাহিদা মাসে ১৫ হাজার টন। বেসরকারি আইপিপিগুলোতে মাসে চাহিদা থাকে ৪৫ হাজার টন। তবে আমদানি সুবিধা নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে ফার্নেস অয়েল আমদানি শুরু করে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এরপর আইপিপিগুলোতে ফার্নেস অয়েল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বিপিসি।

আইপিপিগুলোকে ফার্নেস অয়েল আমদানির সুযোগ দেওয়া হলেও শর্ত ছিল ১০-১২ শতাংশ ফার্নেস অয়েল বিপিসি থেকে নিতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কম থাকলে চুক্তির শর্ত মোতাবেক চাহিদার ১০-২০ শতাংশ জ্বালানি বিপিসি থেকে নেওয়ার কথা থাকলেও নিতো না। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে আইপিপিগুলো সেই শর্ত কাজে লাগিয়ে বিপিসি থেকে ফার্নেস অয়েল নেওয়া শুরু করে।

এদিকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য ৮০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল আমদানির প্রক্রিয়া আরও আগে শেষ করে বিপিসি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশও দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ফার্নেস অয়েলের কয়েকটি চালান চট্টগ্রামের পতেঙ্গা গুপ্তখালের পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েলের প্রধান ডিপোতে খালাস হয়। পরবর্তীসময়ে গত ২৬ জানুয়ারি ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল সরবরাহের জন্য বিপিসিকে চাহিদাপত্র দেয় পিডিবি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত পাঁচ মাসের জন্য এ চাহিদা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বিপিসি।

অন্যদিকে জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। এতে হঠাৎ করে ফার্নেস অয়েল সংগ্রহ নিয়ে ঝক্কিতে পড়ে বিপিসি। বিশেষত আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়তি থাকায় সরবরাহকারীরাও তাৎক্ষণিক ফার্নেস অয়েল সরবরাহে অপারগতা জানালে বিপাকে পড়ে রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি।

বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি থাকলেও এরই মধ্যে আরও এক লাখ টন ফার্নেস অয়েল কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী মে-জুনের মধ্যে এসব ফার্নেস অয়েল দেশে আসবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিপিসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছরের জ্বালানি আমদানির কার্যক্রম পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু হয় আরও ছয় মাস আগে থেকে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য বছরে এক লাখ ৬০ হাজার টন জ্বালানি আমদানি করা হয়। কার্যাদেশ দেওয়া হয় বছরে দুই ভাগে। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল কেনার প্রক্রিয়া গত বছর শেষ করা হয়। কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে। এসব ফার্নেস অয়েল পিডিবির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত সরবরাহও করা হচ্ছে।

jagonews24

তিনি বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে পিডিবি দুই লাখ ৮০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা দিয়েছে। হঠাৎ হঠাৎ এ ধরনের চাহিদা দেওয়া হলে আমাদের ঝামেলায় পড়তে হয়। কারণ বিদেশ থেকে আমদানি করতেও সময় লাগে। আন্তর্জাতিক নানান সমস্যাও রয়েছে।’

বিপিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন্স) মো. জাহিদ হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পিডিবি ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুই লাখ ৮০ হাজার টন ফার্নেস অয়েলের চাহিদা দিয়েছে। আমরা এরই মধ্যে এক লাখ টন অতিরিক্ত আমদানির কার্যক্রম শুরু করেছি। এই এক লাখ টন ফার্নেস অয়েল আগামী মে-জুন মাসে দেশে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের দর-দাম বাদেও বিভিন্ন পরিস্থিতি সামনে রেখে জ্বালানি আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু পিডিবি থেকে হঠাৎ করে চাহিদা দেওয়া হলে এসব ম্যানেজ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।’

এ বিষয়ে কথা হলে পিডিবির উপ-সচিব (উৎপাদন) হেলালুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর (বিদ্যুৎকেন্দ্র) কয়েকটিতে নিয়মিত ফার্নেস অয়েল ব্যবহৃত হয়। চাহিদা দেওয়া হয় এগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী। কিন্তু কিছু প্ল্যান্ট রয়েছে গ্যাসনির্ভর। এসব প্ল্যান্টে হঠাৎ গ্যাসের সরবরাহ কমে গেলে বিকল্প হিসেবে ফার্নেস অয়েলের দিকে ঝুঁকতে হয়। উৎপাদন তো বন্ধ রাখা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, এখন এলএনজি নিয়েও সমস্যা রয়েছে। যে কারণে গ্যাসের কিছু সংকট আছে। এজন্য অতিরিক্ত ফার্নেস অয়েল সরবরাহের জন্য পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে চাহিদা দেওয়া হয়েছে।

এএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।