মাদককে জিরো টলারেন্স দেখাতে চান রূপনগরের ওসি রেজাউল
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ মিরপুর। মিরপুরের মধ্যে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে রূপনগর থানা। এই থানা এলাকায় জনবসতি বেড়ে উঠায় অপরাধীদের বিচরণও বাড়ছে। অন্যান্য থানার চেয়ে আয়তনে ও জনসংখ্যায় ছোট হলেও বেড়িবাধ এলাকার নিরাপত্তা ও মাদকের জন্য রূপনগর গুরুত্বপূর্ণ ।
এমন একটি থানায় গত ৬ আগস্ট নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব নিয়ে যোগদান করেছেন মো. রেজাউল হাসান। তিনি আসা মাত্রই নড়েচড়ে বসেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। কারণ মাদকের বিরুদ্ধে এক রকম জেহাদ ঘোষণা করেছেন থানার ওই ওসি।
পুরান ঢাকার ওয়ারি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) দায়িত্ব শেষে তিনি রূপনগর থানার ওসি হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ওয়ারি ছাড়াও যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, সূত্রাপুর এবং ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। রূপনগরে এসেই তিনি থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়েছেন। মাদককে জিরো টলারেন্স দেখানোর জন্য নিয়মিত অভিযান শুরু করেছেন। এজন্য স্থানীয়দের কাছ থেকে সহযোগিতামূলক সমর্থনও পেয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে ওসি রেজাউল হাসানের একান্ত আলাপচারিতা হয়েছে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
জাগো নিউজ : জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
রেজাউল হাসান : জাগো নিউজকেও শুভেচ্ছা। জ্বি আমি ভালো আছি। মিডিয়ায় আমাদের ভালো কাজের খবর কমই আসে। দেখি আপনার মাধ্যমে আমাদের কিছু অর্জন মিডিয়াতে আসে কিনা (হাসি)।
জাগো নিউজ : ডিএমপির মধ্যে রূপনগরের গুরুত্ব কি কারণে?
রেজাউল হাসান : এখানে থানাটির পাশেই বেড়িবাধ রয়েছে। যেখানে অপরাধীদের বিচরণ ও জন সাধারণের চলাফেরায় সাংঘাতিক ঝুঁকিপূর্ণ। আর এখানে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৯৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জনবসতিও বাড়ছে। সে কারণে ক্রমশই থানাটির গুরুত্ব বাড়ছে।
জাগো নিউজ : এই থানা এলাকায় কি কি ধরণের অপরাধ হয়?
রেজাউল হাসান : এখানে প্রধান সমস্যা মাদক। মাদকের কারণে এখানকার উঠতি যুবকরা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল। নারী মাদক ব্যবসায়ীরা এখানে বেশি সক্রিয়। এছাড়া বড় কোনো ডাকাতি বা চুরির ঘটনা নেই বললেই চলে। তবে ছোট খাটো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
জাগো নিউজ : মাদক নিয়ন্ত্রণে আপনি কি ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছেন?
রেজাউল হাসান : আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ মাদক ব্যবসা বন্ধ ও মাদকমুক্ত রূপনগর উপহার দেয়া। বলতে পারেন মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছি। এতে করে রূপনগরের প্রভাবশালী অনেকেই ক্ষুব্ধ। তবে আমি বদ্ধপরিকর। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমি নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। নিজে অভিযানে যাচ্ছি। যেখান থেকেই অভিযোগ আসছে, সময়ক্ষেপন না করে সেখানেই অপারেশন চালাচ্ছি। যদিও রিস্ক থেকে যাচ্ছে তবুও পিছু হঠছি না।
জাগো নিউজ : মাদকের স্পট কয়টি এখানে?
রেজাউল হাসান : এখানে মাদকের স্পট মূলতঃ ২টি। চলন্তিকা ও দোয়ারিপাড়ায়। এখানে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা হতো। নারী মাদক ব্যবসায়ীও জড়িত। তবে বিগত কয়েকমাসের অভিযানে অনেকটাই কমে এসেছে। যতো দিন এখানে থাকবো মাদকের ব্যাপারে কোনো আপসে যাবো না।
জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকায় চেকপোস্ট রয়েছে?
রেজাউল হাসান : জ্বি আছে। স্থায়ী চেকপোস্ট বেড়িবাধ এলাকায়। আগে বেড়িবাধ এলাকায় প্রতিদিন কোনো কোনো ঘটনা ঘটতো। এখন সেখানে অপরাধ কমে গেছে। এছাড়াও কিন্তু আমাদের মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেয়। মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি রাখি।
জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ?
রেজাউল হাসান : অপরাধ মানচিত্রে চলন্তিকা ও দোয়ারিপাড়া ও বেড়িবাধকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
জাগো নিউজ : আপনার থানার জনবল, সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?
রেজাউল হাসান : মামলা ও জিডির পরিমাণে জনবল কমই বলতে পারেন। মাত্র ৭৪ জন পুলিশ এখানে রয়েছে। আমরা পরিকল্পনা করে কাজ করার চেষ্টা করছি। তাতে সফলতাও আসছে। তবে জনবল বাড়ানো দরকার।
জাগো নিউজ : রূপনগর থানাটি ভাড়া বাসায়। নিজস্ব থানা কমপ্লেক্সের পরিকল্পনা রয়েছে কি না?
রেজাউল হাসান : রূপনগর থানার এখন পর্যন্ত নিজস্ব ভবন নেই। ভাড়া বিল্ডিংয়ে কাজ চলছে। তবে আমি আসার পর নিজেদের কাজের সুবিধার্থে গোলাট্যাক সরকারি স্কুলের পাশে নিজস্ব ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। ৫০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় আমরা নিজস্ব ভবনে যেতে পারবো।
জাগো নিউজ : অপরাধী কিংবা রাজনৈতিক চাপ বোধ করেন কি না?
রেজাউল হাসান : সরকারকে নাজেহাল করতে ও পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে গাবতলীতে পুলিশের উপর হামলা হয়েছে। এরপরেই আমার এখানে আসা। এখানে আসার পর নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে। আপাতত কোনো চাপ নেই। আর চাপকে আমি পাত্তাও দেই না। অপরাধী যেই হোক ছাড় পাবে না।
জাগো নিউজ : পুলিশের কর্মকর্তা হিসেবে এই পেশাটিকে কিভাবে মূল্যায়ণ করবেন?
রেজাউল হাসান : আমার বাড়ি নাটোরের লালপুরে। রূপনগরেই ভাড়া বাসায় থাকি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে পড়াশুনা শেষ করে ২০০১ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশে যোগদান করি। দেশের সেবায় কাজ করতে পারাটা সৌভাগ্যবান মনে হয়। আর এই পেশায় থেকে নানা মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ রয়েছে। যা অন্য কোথাও নেই। দারুন লিডারশীপ, অ্যাডভেঞ্চার জব, মানুষের সেবা করার সুযোগ তো এখানেই। চাকরিটা ভীষণ উপভোগ করছি।
জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রেজাউল হাসান : আপনাকেও ধন্যবাদ।
জেইউ/জেডএইচ/আরএস/পিআর