শিয়া-সুন্নি বিভাজনে নতুন উত্তেজনা
সৌদি আরব-ইরান ইস্যুতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্য। রোববার তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়ার পর উপসাগরীয় কুয়েত, বাহরাইন ও আফ্রিকার দেশ সুদানও একই ঘোষণা দিয়েছে।
আঞ্চলিক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এ দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে গত বছর হজের সময় মিনায় পদদলিত হয়ে কয়েক শ মানুষের প্রাণহানির পর। ২৪ সেপ্টেম্বর মক্কার মিনায় প্রতীকী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ৭৬৯ হাজি মারা যান।
গত ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো আট শতাধিক হাজি। তবে ইরান সে সময় দাবি করে মিনায় পদদলনের ঘটনায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে তখন থেকেই দেশ দুটির মাঝে সম্পর্কে চিড় ধরে।
সর্বশেষ শনিবার দেশটির শিয়া নেতা নিমরের ফাঁসি কার্যকরের পর দেশ দুটির মাঝে চরম বাকযুদ্ধ শুরু হয়। এরই জেরে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় রিয়াদ। রিয়াদের ঘোষণার পর সোমবার বাহরাইন, সুদান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মঙ্গলবার কুয়েতও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়।
মুসলিম বিশ্বের শক্তিশালী দুই দেশ শিয়া অধ্যুষিত ইরান ও সুন্নি অধ্যুষিত সৌদি আরব। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সৌদি আরবকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সিংহভাগ নির্ভরশীল অস্ত্র ব্যবসার ওপর। আর সৌদি মার্কিন অস্ত্রের অন্যতম ক্রেতা!
তাই সৌদি আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে টক্কর দিতে গিয়ে অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় নাক গলাতেও পিছপা হয় না যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া শিয়া-সুন্নি বিভাজন তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্য তো বটেই মুসলিম দেশগুলোতে অস্থিরতা তৈরিতেও বিশ্ব মোড়লদের হাত রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এছাড়া যেভাবে ইরানকে বয়কট করা শুরু করেছে সৌদি আরব ও মিত্ররা।এর পেছনে শিয়া সুন্নি পার্থক্যই মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হয়েও ইরান আরব হিসেবে বিবেচিত হয় না। কেননা তারা মূলত শিয়াপন্থী। আর আরব দেশ হিসেবে মূলত ধরা হয় সুন্নি দেশগুলোকে।
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত আরেক দেশ ইয়েমেন ইস্যুতে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে রয়েছে সৌদি ও ইরান। ইয়েমেনে মূলত শিয়াপন্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সুন্নি সরকার দেশ পরিচালনা করছে। দীর্ঘদিন ধরে সুন্নি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে শিয়ারা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ইয়েমেনের নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট আব্দুল মনসুর আল হাদিকে ক্ষমতায় বসাতে হামলা শুরু করে সৌদি। এখানেও নাক গলাতে পিছু পিছপা হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইয়েমেনে আন্দোলনের পেছনে রয়েছে ইরান।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া ইস্যুতেও বাশার বিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এই দেশটি। এখানেও রয়েছে শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্ব। কেননা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল- আসাদও শিয়াপন্থী।
এদিকে, মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, বড় অপরাধ আড়াল করতে ও আঞ্চলিক উত্তেজনা উসকে দিতে তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরব।
বিশ্লেষকদের মতে, পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইরানের প্রভাব মেনে নিতে পারছে না সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র।
তাই শিয়া-সুন্নির বিভাজনে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে শুরু হওয়া চলমান অস্থিরতা এখন কোন পথে গিয়ে পৌঁছে এখন সেটাই দেখার বিষয়।
এসআইএস/এএইচ/আরআইপি